ঢাকা, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৫ জিলকদ ১৪৪৫

টাঙ্গাইলে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ‘ত্বীন ফল’

প্রকাশনার সময়: ১৩ মার্চ ২০২২, ১৬:১০

টাঙ্গাইলে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন ফল চাষ করা হচ্ছে। জেলার সখীপুর উপজেলার কীর্তনখোলা গ্রামে জাবিদ আল মামুন নামের এক যুবক ত্বীন ফল চাষাবাদ করছেন। মাত্র দুই বিঘা জমিতের ৬শ’ চারা নিয়ে ত্বীন ফলের চাষ করে এখন তিনি সফল কৃষি উদ্যোক্তা। এর আগে জেলায় কেউ বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন ফল চাষ করেনি বলে কৃষি বিভাগ জানায়।

জানা যায়, ২০১৮ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করে সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখেন তিনি। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের মহামারীতে তাঁর সেই স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যায়। কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। একদিন পত্রিকাতে ত্বীন ফলের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পড়ে তার মনেও এই গাছ চাষের আগ্রহ জাগে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি চাষাবাদ শুরু করেন। চারা রোপণের মাত্র ছয় মাসের মাথায় প্রতিটি গাছেই ফল ধরে। প্রতি কেজি ফল বিক্রি করছেন ৮শ’ থেকে ১০০০ টাকা। এ ছাড়া অধিকাংশ গাছে কলম দেওয়া হয়েছে, চলছে কলম চারা বিক্রিরও প্রস্তুতি।

জাবিদ আল মামুন বলেন, গাজীপুর থেকে ত্বীন ফলের চারা এনে চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর বাড়ির সামনে এক বিঘা ও পাশ্ববর্তী এক বিঘা জমির বাগানে এক হাজার গাছ রয়েছে। প্রতিটি চারার দাম পড়েছিল পাঁচশ’ টাকা করে। প্রতিটি গাছেই আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ডুমুর আকৃতির এই ফল সবার দৃষ্টি কেড়েছে। পবিত্র কোরআনের আত-ত্বীন সূরায় বর্ণিত মরুভূমির এই মিষ্টি ফল ত্বীনের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ কারণে প্রতিদিন দূর-দূরান্তের লোকজন বাগান দেখতে আসেন।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি গাছ থেকে প্রথম বছরেই তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি ফল তোলা যায়। পরিপূর্ণ একটি বড় গাছে বছরে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি পর্যন্ত ফল ধরে। এই ত্বীন চাষে বেকারত্ব দূরের পাশাপাশি রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনাও দেখছেন এই নতুন উদ্যোক্তা। ত্বীন বাগান ও চাষ পদ্ধতি জানতে চাষী, সাধারণ মানুষ বাগানটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। পরিদর্শনে আসা বিভিন্ন চাষি ও সাধারণ মানুষ ত্বীন ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

বাগানের দর্শনার্থী মোহাম্মদ আমিরুল বলেন, আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআনে এই ফলের নাম শুনেছি। গাছ এবং ফল দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। আল্লাহ সেই ইচ্ছা আজ পূরণ করলেন। সখীপুরে এটিই প্রথম ত্বীন ফলের বাগান। ফল এবং সবুজ গাছগুলো দেখে মন ভরে গেছে। অনেকেই এখন এ রকম একটা বাগান করার ইচ্ছা পোষণ করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন বলেন, সখীপুর উপজেলায় ত্বীন ফল নতুন সংযোজন হয়েছে। এ উপজেলায় ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। মালটা, কলা, কুলসহ অন্যন্যা ফসল ও ফল চাষ হচ্ছে । সখীপুরে ত্বীন চাষে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ত্বীন ফলের জমিতে গিয়ে নিয়মিত পরিদর্শন করছেন ও পরামর্শ দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাসার বলেন, ত্বীন ফল সৌদি আরবের বিখ্যাত ও দামী ফল। জেলায় বাণিজ্যিকভাবে প্রথমবারের মতো ত্বীন ফল চাষ করা হচ্ছে। এই ত্বীন ফল মরু অঞ্চলের মাটিতে জন্মালেও বর্তমানে টাঙ্গাইলের সখীপুর অঞ্চলে বেশ ভালো ফলন হচ্ছে। প্রতিনিয়তই কৃষি কর্মকর্তারা বাগানটি দেখভাল করছেন। উদ্যোক্তা মামুন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কাছে সহযোগিতা চাইলে সকল প্রকার সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ