ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৮ জিলকদ ১৪৪৫

সমকামিতা : কি বলা হয়েছে সব ধর্মে?

প্রকাশনার সময়: ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:৩৯

সমকামিতা বা Homosexuality ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণ হারাম। শুধু হারামই নয় বরং এটি অভিশপ্ত অপরাধ। যে অপরাধের কারণে আল্লাহ তায়ালা কওমে লুত তথা লুত (আ.)-এর অপরাধী জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। সাধারণত পুরুষের সঙ্গে পুরুষের বা মেয়ের সঙ্গে মেয়ের যৌন চাহিদা মেটানোর নামই হচ্ছে সমকামিতা বা Homosexuality।

পৃথিবীতে যত জীবজন্তু আছে তারা সবাই ‘কামত্তেজনা’ উঠলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি দ্বারস্থ হয়। এদিকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ হয়েও যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য সমকামিতার মতো নিকৃষ্ট কাজে লিপ্ত হয়। তাদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলছেন, ‘তারা চতুষ্পদ জন্তু-জানোয়ারের মতো, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট।’ (সুরা আরাফ: ১৭৯)

ইসলামে সমকামিতা ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য পাপ। এটা সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এটা এমন নিষিদ্ধ কাজ যে পবিত্র কোরআন কঠোর ভাষায় এর নিন্দা করেছে এবং লুত (আ.)-এর সম্প্রদায়ের এই অশ্লীল কাজের বর্ণনায় আল্লাহ বলেছেন, ‘সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরুষদের সঙ্গে কুকর্ম কর এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য সঙ্গিনী হিসেবে যাদের সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন করে থাকো। তোমরা তো সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’ (সুরা শুয়ারা: ১৬৫-১৬৬)

ইতিহাস সাক্ষী- অভিষপ্ত গোষ্ঠী কওমে লুত সমকামের অপরাধে ধ্বংস হয়েছিল। হজরত লুত তাদেরকে বারবার হালাল পন্থায় নারীদের সঙ্গে যৌন চাহিদা পূরণ করার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কওমবাসী তার কথা শুনেনি। ফলাফল কী হয়েছিল? আল্লাহ মহান জিবরাইল (আ.) কে পাঠিয়ে কওম লুতকে আজাব দিলেন। ধ্বংস করে দিলেন একটি জনপদকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘অতঃপর যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল, এরপর যখন আমার সিদ্ধান্ত কার্যকর হলো, তখন আমি জনপদের উপরিভাগ নিচে এবং নিম্নভাগ উপরে উঠালাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর-পাথর বর্ষণ করলাম।’ (সুরা হুদ: ৮২)

কওমে লুতের বস্তির ধ্বংসপ্রাপ্ত রূপই আজকের ‘ডেড সি’ বা মৃত সাগর। এটাই মর্মান্তিক আজাব দিয়েছিলেন আল্লাহ মহান- আজও সে জনপদে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। কোরআনের অনেক সুরায় লুত (আ.)-এর জাতির এ ধরনের অপকর্ম বিষয়ে মানুষকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। তাদের করুণ পরিণতির কথাও তুলে ধরা হয়েছে।

সমকামিতার পার্থিব শাস্তি সম্পর্কে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যাদের লুতের জাতির মতো কাজে (সমকামে) লিপ্ত দেখবে, তাদের উভয়কেই হত্যা করো।’ (তিরমিজি: ৪/৫৭; আবু দাউদ: ৪/২৬৯)। অন্যত্র বলেছেন, ‘তোমরা যদি কাউকে পাও যে লুতের সম্প্রদায় যা করত তা করছে, তবে হত্যা করো। যে করছে তাকে আর যাকে করা হচ্ছে তাকেও।’ (আবু দাউদ: ৪৪৪৭)

সমকামিতা ও অবাধ যৌনতা এইডসের মতো প্রাণঘাতী রোগের অন্যতম কারণ। এ রোগটি ১৯৮১ সালে সমকামীদের মধ্যে প্রথম ধরা পড়ে। (উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সংকলন, পৃষ্ঠা: ৯৮)। এইডস মানবদেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেয়। এর ওষুধ আবিষ্কারের কথা একাধিকবার শোনা গেলেও বাস্তবতা ভিন্ন। এ ব্যাপারে মহানবী (সা.) অনেক আগেই তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে তারা প্রকাশ্যে অপকর্মে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে এমন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে, যা তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে ছিল না।’ (ইবনে মাজাহ: ২/১৩৩২)

ইসলাম, খ্রিস্ট ও ইহুদি ধর্ম অনুযায়ী সমকামিতা চরমভাবে নিষিদ্ধ। কোরআনে এটাকে চরমভাবে গর্হিত কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো কোনো মুসলিম অধ্যুষিত দেশে এটা ভয়ঙ্কর শাস্তিজনক অপরাধ।

সমকামিতা স্বাস্থ্য ও সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই সমকামীদের আল্লাহর নিকট তওবা করার পাশাপাশি কায়মনোবাক্যে আকুতি করতে হবে যেন আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ; তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা যুমার: ৫৩)

নয়া শতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ