পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পল্লীগ্রাম মুরগি ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারি নামের একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হয়েছেন শতাধিক নারী উদ্যোক্তারা। হাজার টাকা দিলেই মিলবে হাইব্রীড জাতের ১৬ টি মুরগি। আর ১০০ টাকা কিস্তি দিলে মিলবে ১ টি করে মুরগি পালনের দোতালা কাঠের ঘর। এমনকি গ্রুপের দায়িত্বে থাকা নারী নেত্রী পাবেন প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা। ঠিক এমনই মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে লাখ লাখ টাকা হারিয়েছেন গ্রামীণ নারীরা।
উপজেলার প্রশাসন বলছে, প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ঠিক কত টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে চক্রটি তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। মাত্র এক সপ্তাহ সময়ের মধ্যে উপজেলার লতাচাপলী ইউপির একাধিক গ্রাম থেকেই কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি। চক্রটির কোম্পানীর লিফলেটে দেওয়া ঠিকানায় নাম লেখা রয়েছে ঝালকাঠির সালমা খাতুনের পল্লীগ্রাম হ্যাচারি। তবে সরেজমিনে অনুসন্ধ্যান করে নিবন্ধনহীন এই পল্লীগ্রাম হ্যাচারির কোনো অস্তিত্ব মেলেনি।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, নাম পরিচয়হীন দুজন মাঠকর্মী পল্লীগ্রামের লিফলেট আর একটি মাত্র ভিজিডিং কার্ড দিয়েই নিয়ে গেছে গ্রামীণ নারীদের কষ্টার্জিত টাকা। মিষ্টি কথায় মন গলিয়ে মুরগি দেওয়ার নামে মোবাইলে দুই দফা সময় বেঁধে দিলেও এখন বন্ধ রয়েছে নম্বর সহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের দাবি, মুরগি দেওয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ঠিক কত লাখ টাকা হাতিয়েছে কোম্পানি তা অজানা। তবে তারা বলছে, কেবল লাতাচাপলী ইউপির ৬ গ্রাম থেকেই প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
মম্বিপাড়া গ্রামের তানিয়া বলেন, ভিআইপি পোশাক পরিহিত দুই ব্যক্তি প্রথমে আমাদের গ্রামে এসে আমাকে মুরগি দেওয়ার কথা বলে একটি গ্রুপ তৈরি করে। আর সেই গ্রুপের সভানেত্রীর দায়িত্ব আমাকে দেন তারা। কথা ছিল নেত্রী হিসেবে প্রতি মাসে ৫ হাজার করে বেতন দেবে। পরে আমার গ্রুপের ৪০ জনের কাছ থেকে প্রথম ধাপে মুরগি এবং ঘরের জন্য ৫০০ করে টাকা তুলে দিতে বলে। কিন্তু বুজতে পারিনি যে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাবে এই প্রতারকরা।
হুইসেন পাড়ার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, একইভাবে মাহাফুজাকে সভানেত্রী করে এলাকা থেকেও নেওয়া হয়েছে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা। একই চিত্র তাহেরপুর, কচ্ছপখালী এলাকার।
অপরদিকে জেলে নাসীরের অভিযোগ, চাকামইয়া তার শশুরবাড়ি এলাকা থেকেও বিপুল অর্থ হাতিয়েছে চক্রটি।
এ দিকে কলাপাড়া পৌর শহরে অবস্থিত প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সামনে অস্তিত্বহীন নাম সর্বস্ব এই হ্যাচারির অস্থায়ী ভাড়া অফিসে গিয়েও মেলেনি প্রতারক চক্রের সন্ধ্যান। সেখানে এখন পল্লীগ্রাম স্টিকার সংযুক্ত সাইনবোর্ড টানানো অফিসে ঝুলছে তালা। স্থানীয়রা বলছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে এই বাসাটি তালাবদ্ধ রয়েছে। অনেক ভুক্তভোগীরাই এখানে এসে তাদের খোঁজ করছেন।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এই প্রতারক চক্রটির বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছে। এরমধ্যে পুলিশের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তবে প্রতারক চক্রটি ঠিক কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। প্রতারকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিতে চেষ্টা অব্যাহত আছে।
নয়া শতাব্দী/এনএইচ/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ