ঢাকা, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জিলকদ ১৪৪৫

নানা সমস্যায় স্থবির হালুয়াঘাটের দুই স্থলবন্দর

প্রকাশনার সময়: ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:২১ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:০৩

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হলো ভারত। ভারত থেকেই আমদানি বেশি হয়। এই আমদানির প্রায় ৮০ শতাংশ চালানই আসে স্থলপথে। মূলত দেশের স্থলবন্দর দিয়ে হরেক পণ্যের চালান এ দেশে প্রবেশ করে থাকে। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটেও রয়েছে দুটি স্থলবন্দর। উপজেলায় আঁকাবাঁকা ভাবে বয়ে গেছে কড়ইতলী ও গোবড়াকুড়া নদী। আর এ নদী দুটির পাশেই গোবড়াকুড়া ও কড়ইতলী স্থল বন্দর।

ভারতের মেঘালয় ঘেঁষা হালুয়াঘাটের গুরুত্বপূর্ণ কড়ইতলী ও গোবড়াকুড়া শুল্ক স্থল বন্দর দুটি নানা সমস্যায় ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবির হয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত ময়মনসিংহ জেলায় প্রথম স্থলবন্দর কড়ইতলী ১৯৮৯ সালে প্রথম শুল্ক ঘাটি হিসাবে যাত্রা শুরু হওয়ার পর ১৯৯৭ সালে গোবড়াকুড়ায় আরও একটি স্থল শুল্ক ঘাটি স্থাপিত হয়। যা বাংলাদেশে একেবারেই নজিরবিহীন।

হালুয়াঘাট উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে এক পাশে গোবরাকুড়া এবং ছয় কিলোমিটার দূরে আরেক পাশে কড়ইতলী স্থলবন্দর। এখান থেকে মেঘালয়ের পাহাড়ের দূরত্ব কয়েকশ’ গজ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সবুজ পাহাড়েরই বুকে স্থলবন্দর দুটি।

ঢাকা থেকে বহুদূরের জনপদ হালুয়াঘাটে কোনো শিল্পকারখানা নেই বললেই চলে। অন্যদিকে মেঘালয়েও নেই তেমন শিল্পকারখানা। এদিকে দুই বন্দরে ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হলেও পরের মাস মার্চেই প্রাণসংহারী ভাইরাস করোনা মহামারির ফলে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ হোঁচট খায়। তবে করোনা সংকট কাটিয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে চলছে দুই বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। এরই মধ্যে গোবরাকুড়া স্থলবন্দরের কাজ ৯০ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর কড়ইতলী বন্দরের কাজ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। নির্মাণকাজ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন হালুয়াঘাটের স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বাংলাদেশের অনেক অত্যাবশ্যকীয় পণ্য রপ্তানি করা যাবে মেঘালয়ে।

গুরুত্বপূর্ণ বন্দর দুটি দিয়ে শুরু থেকেই মূলত বিপুল পরিমাণ ভারতীয় কয়লা এবং স্বল্প পরিমাণ পাথর আমদানি করা হতো।

সিএন্ডএফ এজেন্ট এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন আহমেদ জানান, এক সময়ে দুটি বন্দর দিয়ে লক্ষাধিক টন কয়লা আমদানি করা হলেও বর্তমানে ব্যবসা বাণিজ্যে ভারতীয় রপ্তানীকারকদের অব্যবসায়ী মনোভাব, সরকারী ব্যবস্থাপনায় নানাবিধ সমস্যা, পরিচালনায় স্থানীয় কোন্দল এবং পরিবেশবাদীদের মামলা মোকদ্দমায় পড়ে বিগত পাঁচ বছর যাবত কয়লা আমদানির পরিমাণ হাজার টনে সীমিত হয়ে পড়েছে। ফলে বন্দর দুটিতে বাণিজ্য ক্ষেত্রে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা এলসিতে বিনিয়োগ করার পরেও কাঙ্ক্ষিত কয়লা পাওয়া যাচ্ছেনা।

বিশিষ্ট কয়লা আমদানিকারক হাজী লাল মিয়া জানান, কোটি কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে যে সকল এলসি এ বছর দিয়েছি তার চারভাগের একভাগ কয়লা পাওয়াতো দূরের কথা, বিগত বছরের কয়লা আমরা এখনো পাচ্ছিনা। অথচ ব্যাংক ইন্টারেস্ট দিতে গিয়ে আমাদের বেহাল অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে বন্দর দুটির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান থাকলেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বর্তমান সময়ের ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে। তবে আশার কথাও বলেছেন সিএন্ডএফ এজেন্ট মো. আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বন্দর দুটি দিয়ে শুধুমাত্র কয়লা আমদানির পাশাপাশি সরকারের ঘোষিত অনুমোদিত ১৭টি পণ্য আমদানি এবং রপ্তানিসহ ব্যবসা বাণিজ্যের পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে। তবেই বন্দর দুটি স্থবিরতা কাটিয়ে সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রদান করতে পারবে।

কড়ইতলী কোল এন্ড কোক ইমপোর্টার এসোসিয়েশনের সভাপতি এম. সুরুজ মিয়া জানান, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থার কারণে বন্দর দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারন বন্দর দুটির অবস্থান ভারতের (সেভেন সিস্টারস) সাতটি প্রদেশের সাথে অত্যন্ত সুবিধাজনক এবং সেই সাথে ভুটান ও সিকিম রাজ্য। বাংলাদেশের রাজধানীর সাথে বন্দর দুটির অবস্থান মাত্র তিন ঘণ্টার পথ। তাই বর্তমান সরকারের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার এবং বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে বন্দর দুটির উপর গুরুত্ব প্রদান জরুরী।

অভিজ্ঞ মহলের মতে বর্তমান সময়ে কয়লা আমদানির প্রতিবন্ধকতা দূর করে অন্যান্য পণ্য আমদানি রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ইমিগ্রেশন চালু, ব্যাংক স্থাপন, মানি এক্সচেঞ্জের অনুমোদন অত্যন্ত জরুরী। আর তাতেই স্থবিরতা কাটিয়ে বন্দর দুটিতে পূর্ণ চাঞ্চল্যতা ফিরে আসবে।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ