ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিরে দেখা ২০২১: সাতক্ষীরার আলোচিত ঘটনা প্রবাহ

প্রকাশনার সময়: ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:৪০

আজ শুক্রবার ইংরেজি বছরের শেষ দিন। আর বছরের শেষ দিনে সবার স্মৃতিতে নাড়া দিয়ে যায় আলোচিত ঘটনাপ্রবাহ। ২০২১ সালে সাতক্ষীরাও তার ব্যতিক্রম নয়। গোয়েন্দা হেফাজতে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের মৃত্যু, কলারোয়ায় আলোচিত ‘ফোর মার্ডার’ ও শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার রায় এবং ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ছিল সাতক্ষীরার বহুলালোচিত ঘটনা।

চলতি মাসের ১১ ডিসেম্বর দেবহাটা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জুড়ন সরদারের ছেলে বাবুল সরদারকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। ৫০ বোতল ফেন্সিডিলসহ তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ। রাতের কোন এক সময় তিনি গলায় নিজের কোমরে ব্যবহৃত সুতালি (রশি) পেচিয়ে লকআপের গেটের গ্রীলের সাথে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে দাবি করে পুলিশ। যদিও পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশের এএসআই শেখ সোহেল ও কনস্টেবল শরিফুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এদিকে, সাতক্ষীরার কলারোয়ার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামে একই পরিবারের স্বামী স্ত্রী ও তাদের দু’ সন্তানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার জ্যেষ্ট জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান মামলার একমাত্র আসামি রায়হানুর রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, পারিবারিক কলহের জের ধরে কলারোয়া উপজেলার খলিষা গ্রামের রায়হানুর রহমান ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে বড় ভাই শাহীনুর রহমান(৪০) ভাবী সাবিনা খাতুন(৩০), তাদের ছেলে ব্রজবক্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সিয়াম হোসেন মাহী(১০) ও মেয়ে একই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তাসমিন সুলতানাকে (৮) কোমল পানীয়ের সাথে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে হাত ও পা বেঁধে তাদেরকে একে একে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তবে ওই পরিবারের ৪ মাসের শিশু মারিয়াকে হত্যা না করে লাশের পাশে ফেলে রেখে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় নিহত শাহীনুরের শ্বাশুড়ি ময়না খাতুন বাদি হয়ে কলারোয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশের অভিযোগপত্র, মামলার ১৮জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও নথি পর্যালোচনা শেষে আসামি রায়হানুর রহমানের বিরুদ্ধে চারজনকে হত্যার দায়ে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেয় আদালত।

ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত সাতক্ষীরা উপকূলে একটি নিয়মিত ঘটনা। ২০০৯ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলায় সাতক্ষীরার উপকূল বিধ্বস্ত হওয়া থেকে শুরু। প্রায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভণ্ড হয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনির উপকূলীয় এলাকা। ২০২১ সালও তার ব্যতিক্রম ছিল না। চলতি বছরের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকার ২২টি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। সাড়ে তিন হাজার ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ঘের তলিয়ে ১৫ কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়। কৃষিতে ক্ষতি হয় ২০ কোটি টাকা। ২৪টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়ে।

সাতক্ষীরায় অপর আলোচিত বিষয় ছিল, শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা-মামলার রায়। চলতি বছরের ০৪ ফেব্রুয়ারী সাতক্ষীরার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: হুমায়ুন কবির মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাতক্ষীরার তালা-কলারোয়ার সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া বিএনপি’র আরও ৪৯ জন নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাঁজা দেওয়া হয়।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখে মাগুরা ফিরে যাবার পথে কলারোয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলা শিকার হন। এতে শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও তার সফরসঙ্গী ফাতেমা জাহান সাথী, জোবায়দুল হক রাসেল, ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান, শহিদুল হক জীবন, আবদুল মতিনসহ অনেকেই আহত হন। এ সময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও হামলার শিকার হন। এ ঘটনায় কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো: মোসলেমউদ্দিন ২৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলা থানায় রেকর্ড না হওয়ায় তিনি নালিশী আদালত সাতক্ষীরায় মামলাটি করেন। পরবর্তীতে এ মামলা খারিজ হয়ে গেলে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর ফের মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেন।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ