ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ বেড়েছে পৌনে ৯ শতাংশ

প্রকাশনার সময়: ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৪:৪৩
সংগৃহীত ছবি

কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ বেড়েছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে সিএমএসএমই খাতে ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৭৬ জন গ্রাহকের অনুকূলে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৭৫ শতাংশ বেশি। গত ২০২০ সালের একই সময়ে এ খাতের ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এ ব্যবসায়ীরা যেন ক্ষতি সামলিয়ে টিকে থাকতে পারেন, সেজন্য সরকার তাদের কয়েক দফায় স্বল্প সুদে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ দিয়েছে। তারপরও অনেক ছোট ব্যবসায়ী কম বিনিয়োগ করেছেন। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক, তাই নতুন বিনিয়োগের কারণে ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে আমদানি-রফতানিও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। যা এর আগের প্রান্তিকে বিতরণ করা ঋণের তুলনায় ২৮৬ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে সিএমএসএমই খাতে ৪১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকগুলো। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে সিএমএসএমই খাতে ঋণ দেয়া হয় ৪৪ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, সবমিলিয়ে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে এসএমই ঋণ বিতরণ হয় এক লাখ ২৮ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। ফলে এর আগে বিতরণ করা সব ঋণসহ এ খাতে ঋণের মোট স্থিতি দাঁড়ায় দুই লাখ ৪৫ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। ছয় লাখ ৪৩ হাজার ৭২৬ গ্রাহক এ ঋণ পেয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এসএমই খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে পাঁচ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। পল্লী এলাকার এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয় নয় হাজার ১২৩ কোটি টাকার ঋণ। আলোচিত সময়ে জামানতবিহীন ঋণ ছয় হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে কুটির (কটেজ) প্রতিষ্ঠানে ৫৫৬ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। মাইক্রো খাতের প্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র শিল্পে ২৪ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা এবং মাঝারি শিল্প খাতে ১১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো।

বিতরণ করা এসব ঋণের মধ্যে প্রস্তুতকারক শিল্পে গেছে ১৫ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানে নয় হাজার আট কোটি টাকা এবং ব্যবসা উপখাতের প্রতিষ্ঠানে ১৭ হাজার ৩৩০ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো।

তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে সিএমএসএমই খাতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করে ২২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো বিতরণ করে তিন হাজার ২৬১ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংক বিতরণ করে ৮৩৯ কোটি টাকা। ইসলামিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করে ১২ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যাংকিং খাত থেকে সিএসমএসএমই খাতে ঋণ যায় ৪২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। লিজিং প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক বহির্ভূত প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) সিএমএসএমই খাতে বিতরণ করে এক হাজার ৪৪২ কোটি টাকা।

নিয়মিত এসএমই ঋণের পাশাপাশি করোনার প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতে গত বছরের এপ্রিল থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই প্যাকেজ থেকে গত জুন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয় সিএমএসএমই খাতে। গত জুলাই থেকে প্রণোদনার দ্বিতীয় মেয়াদের ঋণ বিতরণ শুরু হয়েছে। এ ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। তবে এর মধ্যে ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার, বাকিটা গ্রাহক পরিশোধ করবে।

চলতি বছরে ব্যাংকিং খাতে ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। এ বছরের অক্টোবরে আগের মাসের তুলনায় ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। একইসঙ্গে এক বছরের ব্যবধানে, অর্থাৎ গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় এ বছর একই সময়ে ঋণ বেড়েছে ১১ শতাংশেরও বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আমদানি অর্থপ্রদান বেড়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। যার অর্থ হলো, দেশের অভ্যন্তরে ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ প্রধান রফতানি অঞ্চলগুলোতে ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির ক্রমবর্ধমান আমদানি হচ্ছে দেশে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে রফতানির পেমেন্ট ছিল ২৩.৩৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫১.৩৩ শতাংশ বেশি।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ