ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ছোট নিস্তব্ধ দ্বীপে চিরঘুমে এক বীরশ্রেষ্ঠ

প্রকাশনার সময়: ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৫৭

সময়টা তখন দুপুর বেলা। পাক হানাদার বাহিনী অতর্কিত হামলা চালায়। মর্টার ও ভারী অস্ত্রের প্রচণ্ড গোলা বর্ষণের মুখে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা। উপায়ন্তর না দেখে একাই প্রতিরোধ গড়ে তোলে ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ। শত্রু পক্ষের আক্রমণের মুখে নিজেকে অবিচল রেখে নিজের মেশিনগান থেকে মুহুর্মুহু ব্রাশ ফায়ারে পাল্টা জবাব দিতে থাকেন। একপর্যায়ে পাক হানাদারদের দু‘টি লঞ্চ ও একটি স্পিডবোট পানিতে ডুবে যায় এবং দুই প্লাটুন শত্রু সৈন্য সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। কিন্তু বাঁধ সাথে একটি মর্টারের গোলা। শত্রু পক্ষের মর্টারের গোলাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জাতির এই বীর সন্তান রাঙামাটি-মহালছড়ি বুড়িঘাট নৌপথে দায়িত্বরত ছিলেন। ২০ এপ্রিল পাক হানাদারদের গোলার আঘাতে তিনি শহীদ হন এবং স্থানীয় উপজাতীয় বাসিন্দা দয়াল চন্দ্র চাকমাসহ কয়েকজন মিলে তার শরীরে ছিন্নভিন্ন অংশ একত্রিত করে হ্রদ বেষ্টিত একটি ছোট দ্বীপে তাকে সমাহিত করেন। পরবর্তীতে দয়াল চন্দ্র চাকমার সহায়তায় ঘটনার দীর্ঘ ২৫ বছর পর নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের চিংড়িখালে পাশে ছোট একটি নির্জন দ্বীপে তার সমাধি চিহ্নিত করা হয়।

এরপর তৎকালীন বিডিআরের উদ্যোগে ওই স্থানে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়। রাঙামাটি শহর থেকে নদীপথে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দুরে বর্তমানে ওই স্থানটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বীরশ্রেষ্ঠের বিজয়গাঁথার স্থানটিকে দেখতে পর্যটকরা ভিড় করেন। চারদিকে পানি আর মাঝখানে ছোট্ট দীপের উপর অপরূপ সুন্দর এই স্মৃতি সৌধটি অন্যান্য স্মৃতিসৌধ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। স্মৃতি সৌধটির নির্মাণশৈলীর সাথে চারদিকে সবুজ পাহাড়, অন্যদিকে কাপ্তাই লেকের নীল জলরাশি, সুনসান নীরবতার কারণে এটি পর্যটকদের কাছে এখন অন্যতম প্রিয় স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যুদ্ধক্ষেত্রে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের অদম্য সাহস, কর্তব্য পরায়ণতা, দৃঢ়সংকল্প দেশ প্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরসেনানী বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের ১ মে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার কামারখালীর মধুমতী নদীর তীরের ছোট্ট গ্রাম সালামতপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ