ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ঈশ্বরদী মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশনার সময়: ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:২৭

আজ ২১ ডিসেম্বর। এদিন ঈশ্বরদী শক্রমুক্ত হয়। এপ্রিল মাস থেকে ঈশ্বরদী শত্রুমুক্ত হওয়া পর্যন্ত পাকবাহিনীর সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়েছে কয়েকবার। ২৬ মার্চের পর ঈশ্বরদী ও পাকশীর ইপিআর সদস্যরা তৎপর হয়ে উঠে। ছাত্র জনতা ঈশ্বরদী-পাবনা সড়ক পথে বড় বড় গাছ কেটে রাস্তায় অনেকগুলো ব্যারিকেড সৃষ্টি করে পাকসেনাদের আগমন ঠেকানোর জন্য।

বেশ কয়েক জন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট থেকে জানা গছে, ২৯ মার্চ পাকসেনারা বিকল্প পথে পাবনার একটি কাঁচা সড়ক দিয়ে ঈশ্বরদী প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এসময় শত্রুসেনার আগমনের সংবাদে পাকশীর ইপিআর সদস্যসহ জনতার ঢল নামে পাবনা-পাকশী সড়কের মাধপুরে। শত্রু বাহিনীকে বাধার সৃষ্টি করে যুদ্ধ শুরু হলে এখানে শহীদ হয় ঈশ্বরদী কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হাবিবুর রহমান রাজু, আব্দুর রাজ্জাক, নূরুল ইসলাম নূরু, ওহিদুর রহমান, আলী আহম্মদ, আব্দুল গফুর, নবাব আলী।

ঈশ্বরদীর পাকশীতে রেলওয়ের বিভাগীয় অফিস এবং ঈশ্বরদীতে দেশের বৃহত্তম রেল জংশন ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হওয়ায় সে সময় বহু সংখ্যক অবাঙালি এখানে বসবাস করত। ঈশ্বরদীর হত্যাযজ্ঞে পাকবাহিনীর পাশাপাশি অবাঙালিরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এখানকার অনেক বাঙ্গালীকে ধরে এনে গুলির পরিবর্তে ধারালো অস্ত্র বা তরবারি দ্বারা জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। ১১ এপ্রিল ঈশ্বরদীতে শতাধিক নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করা হয়। এদিন রাতে নতুন বাজার এলাকার কার্তিক পালের বাড়িতেই ১১ জনকে হত্যা করা হয়। শহরের বাইরে পশ্চিমে পদ্মার পলি জমা গ্রাম মাজদিয়া। ১১ এপ্রিল পাকসেনারা ঈশ্বরদী শহর দখল করে নেওয়ার পর গ্রামের মানুষ ঘর ছেড়ে পালিয়ে এদিক ওদিক আশ্রয় নেওয়ার পর অবাঙালিদের কথার জালে ভুলে তাদের দেয়া আহার সামগ্রী পেয়ে মানুষ একে একে গ্রামে ফিরে আসলে ২২ এপ্রিল সকালে অবাঙালীরা পাকসেনাদের সহায়তায় গ্রামটির পাড়াকে পাড়া আগুন দিয়ে পুড়ে দেয়। দিশেহারা গ্রামবাসী জীবন বাঁচাতে সামনে ছুটে। কিন্তু অনেকেই পালাতে ব্যর্থ হয়। কারণ সামনে পদ্মা নদী। আর তিন দিক ঘিরে হাজারো অবাঙালী। তাদের হাতে রাইফেল, তরবারি আর বল্লম। চলে হত্যাযজ্ঞ, লুণ্ঠন, অগ্নিকাণ্ড, আর নারী ধর্ষণ।

ঈশ্বরদী মুক্ত হওয়ার আগে পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মূলত তিনটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এগুলো হচ্ছে-মাধপুরের যুদ্ধ, খিদিরপুরের যুদ্ধ ও জয়নগরের যুদ্ধ।

১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকহানাদারদের আত্মসমর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পর পর ঈশ্বরদীতে পাকসেনারা ভয়ে বর্তমান সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকে,তখন কয়েকশত মুক্তিযোদ্ধা এলাকাটি ঘিরে ফেলেন। মুক্তিযোদ্ধারা বাইরে থেকে বারবার খবর পাঠিয়ে পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। কিন্তু তারা ভয়ে কোন অবস্থাতেই মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণে রাজি হচ্ছিল না। শেষে বিজয়ের চার দিন পরে ২১ ডিসেম্বর নাটোর থেকে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার মুঞ্জুর আহমেদ ঈশ্বরদীতে এসে আত্মসমর্পণ করার ঘোষণা দেন। এরপর মিত্রবাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিংয়ের উপস্থিতিতে যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ