ঢাকা, রোববার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

কাজ না করেই ইজিপিপি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ

প্রকাশনার সময়: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ২১:১২

জামালপুরের মেলান্দহের ফুলকোচা ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান (ইজিপিপি) কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ের কাজের অনিয়ম, দুর্নীতি ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। শ্রমিক ছাড়াই কাগজ কলমে হাজিরা দেখিয়ে শেষ করা হয়েছে কাজ।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান, প্রকল্প কমিটির সভাপতি (ইউপি সদস্য) ও সচিব এসব অপকর্ম করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ ইউনিয়নে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কর্মসংস্থান (ইজিপিপি) কর্মসূচির আওতায় ৫টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রত্যেকটি প্রকল্পে ৫০ জন করে মোট ২৫০ জন শ্রমিক কাজ করার কথা ছিলো। একজন শ্রমিক দৈনিক ৪০০ টাকা হারে মজুরি পাবে।

প্রকল্প এলাকায় নামে মাত্র কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। কাগজে কলমে দেখানো হচ্ছে শতভাগ হাজিরা, মাটি কাটা হয়েছে মাহেন্দ্র গাড়ি দিয়ে। প্রকল্প এলাকায় প্রকল্পের তথ্য সংবলিত সাইনবোর্ড থাকার কথা থাকলেও ইউনিয়নের কোথাও প্রকল্পের কোনো সাইনবোর্ড লক্ষ্য করা যায়নি।

শ্রমিকের তালিকায় দেখা যায়, একই সিরিয়ালের সিম নাম্বার। কোনো কোনো প্রকল্পের সভাপতি বলতেই পারে না তিনি প্রকল্পের সভাপতি।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৪৫নং প্রকল্পে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ৬টি স্থানে মাটি কাটার বরাদ্দ রয়েছে। এরমধ্যে কোলা মালঞ্চ আব্দুল গফুরের বাড়ির পাশে পাকা রাস্তা থেকে সবুজের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত, কোনা মালঞ্চ পাকা রাস্তা থেকে সরাফত বেপারির বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত, কোনা মালঞ্চ পাকা রাস্তা থেকে মোতালেবর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত, কোনা মালঞ্চ পাকা রাস্তা থেকে মির্জা রঞ্জুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের কথা থাকলেও কোনো কাজ করা হয়নি। কোনা মালঞ্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নামে মাত্র মাটি কাটা হয়েছে। অন্য ৫টি স্থানে মাটি কাটা হয়নি বলে জানায় স্থানীয়রা।

কোনা মালঞ্চ প্রকল্পের সভাপতি ছালেমা বেগম বলেন, মাটি কাটা হয়েছে বলে অন্য আরেকজন ইউপি সদস্যের কাছে ফোন ধরিয়ে দেয়।

৪৮নং প্রকল্পে দেখা যায়, সেখানেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ৬টি স্থানে মাটি কাটার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রেখিরপাড়া জামতলা মোড় থেকে গোপাল মেম্বারের বাড়ির পিছনে পাকা রাস্তা পর্যন্ত মেরামত, রেখিরপাড়া আলেপ মেম্বারের বাড়ির পূর্ব পাশে বটতলা থেকে হেলালের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত, পূর্ব রেখিরপাড়া আবুলের বাড়ি থেকে ডাক্তার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত, দক্ষিণ রেখিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মাটি ভরাট, উত্তর রেখিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মাটি ভরাটের কথা থাকলেও ছিটেফোঁটাও মাটি কাটা হয়নি। এরমধ্যে রেখিরপাড়া খালেক মাস্টারের বাড়ি থেকে সাইফুল ডাক্তারের বাড়ি হয়ে মোজাম্মেল সরকারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতে কিছু মাটি কাটা হয়েছে। অন্য ৫ টি স্থানে মাটি কাটা হয়নি।

প্রকল্প সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম কলিন্স বলেন, আমরা নামে মাত্র সভাপতি। সব কাজ চেয়ারম্যানেই করেন।

কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা উত্তোলনের বিষয়ে ফুলকোঁচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মামুনুর রশিদ বলেন, সারা জেলায় যেভাবে কাজ হয় আমরাও সেভাবেই কাজ করি।

এবিষয়ে মেলান্দহ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলেন। কোনো কাজই হয়নি এমন প্রকল্প আমরা পায়নি। মাটি কাটা হয়নি আপনারা বুঝলেন কিভাবে উল্টো প্রশ্ন করেন প্রতিবেদককে।

মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহবুবা হক বলেন, আমার আগের ইউএনও বিল পাশ করে গেছেন। এবিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না।

নয়া শতাব্দী/এনএইচ/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ