ঢাকা, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জিলকদ ১৪৪৫
সুরা ইউসুফের আলোকে

অর্থ ও খাদ্য নিরাপত্তা এবং ব্যবস্থাপনা

প্রকাশনার সময়: ০৪ মে ২০২৪, ০৯:২০

সুরা ইউসুফ কোরআনে কারিমের এমন একটি সুরা, যার বেশ কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অনেক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এটি কোরআনে কারিমের একমাত্র সুরা, যার মধ্যে একজন নবীর ঘটনা সবিস্তারে রয়েছে। আর কোনো নবী-রাসুলের ঘটনা এত বিস্তারিতভাবে ধারাবাহিক উল্লেখ হয়নি। এ দীর্ঘ সুরাটিতে রয়েছে অনেক ইবরত ও শিক্ষণীয় বিষয়। শেষের দিকে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তাদের ঘটনায় বোধসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষা গ্রহণের উপাদান রয়েছে।’ (সুরা ইউসুফ: ১১১)

মুফাসসিরীনে কেরাম তাফসীরের বড় বড় কিতাবে এসব বিষয় বিশদভাবে বলেছেন। গত রমজানের তারাবিতে হাফেজ সাহেব যখন ধীরস্থির গতিতে কিছুটা তারতীলের সঙ্গে সুরা ইউসুফ তিলাওয়াত করেন তখন বিভিন্ন আয়াতেই বিভিন্ন কথা মনে পড়তে থাকে। বর্তমান সমাজের সঙ্গে মিল-অমিল নামাজের মধ্যেই সামনে আসতে থাকে। একপর্যায়ে হাফেজ সাহেব পড়লেন, ‘(ইউসুফ (আ.)) বললেন, আপনি আমাকে দেশের অর্থ-সম্পদের (ব্যবস্থাপনা) কার্যে নিযুক্ত করুন। নিশ্চিত থাকুন আমি রক্ষণাবেক্ষণ বেশ ভালো পারি এবং আমি (এ কাজের) পূর্ণ জ্ঞান রাখি।’ (সুরা ইউসুফ: ৫৫)

পাঠকবৃন্দের নিশ্চয়ই অনেকবার সুরা ইউসুফ পড়া থাকবে। তরজমা ও তাফসীর দেখা হয়ে থাকবে। ইউসুফ (আ.)-এর দীর্ঘ কাহিনি— বাবা-মা থেকে হারিয়ে যাওয়া, মিশরে বিক্রি হয়ে যাওয়া, একপর্যায়ে জেলে যাওয়া, জেল থেকে বেরিয়ে আসা ইত্যাদি। তিনি যখন নিরপরাধ প্রমাণিত হয়ে মুক্ত হয়ে আসলেন তখন সে সময়ের শাসক তাঁকে সসম্মানে তার কাছে রাখতে চাইলেন। বললেন, ‘আজ থেকে তুমি আমাদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদাবান হলে, তোমার প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা রাখা হবে।’ (সুরা ইউসুফ: ৫৪)

ইউসুফ (আ.) তাঁকে প্রস্তাব দিলেন সম্পদ-ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রদান করতে। এখানে দুটি শব্দ ব্যবহূত হয়েছে: একটি হচ্ছে ‘হাফিজ’ অর্থাৎ আমি এটার যথাযথভাবে রক্ষকের দায়িত্ব পালন করব। তসরুফ হওয়া থেকে হেফাজতের দায়িত্ব পালন করব। দ্বিতীয় শব্দ ব্যবহূত হয়েছে ‘আলীম’ অর্থাৎ এর যথাযথ জ্ঞান আল্লাহ তায়ালা আমাকে দিয়েছেন।

সুরা ইউসুফ তো ছাত্রকালে পড়া হয়েছে। বছরকে বছর পড়া হচ্ছে। মাঝে মাঝেই হাফেজ সাহেবদের থেকে শোনা হয়। আজ যখন আয়াতটি শুনছি তখন মনে হলো, এ যুগেই সুরাটি নাজিল হলো কি না। কারণ, এর প্রেক্ষাপট সে সময়ের চেয়ে এখন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। আমরা যদি আজকের পৃথিবীর অর্থব্যবস্থা দেখি, খাদ্যব্যবস্থা দেখি, তাহলে এই আয়াত ও পরবর্তী আয়াতগুলোতে আলোচিত ইউসুফ (আ.)-এর রেশনিং ব্যবস্থা দেখতে পাব। আমাদের বর্তমান সময়ে যেগুলোর গুরুত্ব আরও বেশি প্রকাশ পায়।

ভেবেছিলাম, আজকের লেখার শিরোনাম দেব, প্রাচীনকালের একজন খাদ্য ও অর্থমন্ত্রীর কথা। কিন্তু পরবর্তীতে মনে হলো, মন্ত্রী শব্দ ব্যবহার ঠিক হবে না। যদিও বর্তমানে খাদ্য ও অর্থমন্ত্রীরা সেসব দায়িত্বেই নিয়োজিত থাকেন। আমরা যদি ইউসুফ (আ.)-এর ব্যাপারে মন্ত্রী শব্দ ব্যবহার করি, তো এখনকার সময়ে দেশে দেশে থাকা অমুক তমুক মন্ত্রীরা ভাববে, নবী ইউসুফ (আ.) মন্ত্রী ছিলেন, আমরাও মন্ত্রী। অথবা কোনো পাঠক হয়তো হাল আমলের মন্ত্রীদের সঙ্গে মিলাতে চাইবেন। বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। আমরা যদি সুরা ইউসুফ বারবার পড়ি, এর মাহাত্ম্যগুলো খোঁজ করি এবং ইউসুফ (আ.) খাদ্য ও অর্থবিভাগের দায়িত্ব পাওয়ার পর কী করলেন- সেগুলো খেয়াল করি; বরং তারও আগে তিনি কী পরিকল্পনা পেশ করেছিলেন, সেটি দেখি, তাহলে আমরা বুঝতে পারব, আমাদের মন্ত্রীরা আর ইউসুফ (আ.)-এর মাঝে কতই না পার্থক্য।

এখনকার ব্যবসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত থেকে উন্নততর হয়েছে। এই পৃথিবীতে বসে যদি আমরা সে সময়ের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সময় আল্লাহর নবী ইউসুফ (আ.) খাদ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পাওয়ার আগে তিনি কী পরিকল্পনা রাষ্ট্রকে দিয়েছেন, পরবর্তীতে তিনি জেল থেকে মুক্ত হয়ে এ দায়িত্ব কীভাবে পালন করেছেন, তাহলে বিস্ময়ের অন্ত থাকবে না। এর আগে বর্তমান সময়ের খাদ্য ব্যবস্থার দিকে নজর দেয়া যাক। খাদ্য সংকট অনেক দেশেই থাকে। স্বীকৃত বিভিন্ন সংস্থার হিসেব মতেই এখনো পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে ঘুমাতে যায়। পৃথিবীতে সরকারগুলো খাদ্যে ভর্তুকি দেয়। খাদ্যশস্য উৎপাদনের সময়ই সরকার নির্ধারিত দামে নির্ধারিত পরিমাণে কিনে নেয়। পরবর্তীতে ভর্তুকি দিয়ে কম দামে বিক্রি করে। আমাদের দেশেও ওএমএস নামে খোলা বাজারে বিক্রি হয়। ট্রাক থেকে মানুষকে লাইন ধরে কিনতে দেখা যায়। আবার বিভিন্ন পেশার মানুষকে সরকার কম দামে রেশন দিয়ে থাকে। এ রকম ব্যবস্থা বর্তমানে বিশ্বব্যাপীই আছে। সেই প্রাচীনকালে ইউসুফ (আ.)ও খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য ব্যবস্থাপনার নজির রেখে গেছেন। দুটোর পার্থক্য একটু দেখুন, ইউসুফ (আ.) জেলে থাকাকালে সেই সময়কার শাসকের একটি স্বপ্ন তার কাছে পেশ করা হলো। কোরআনে যেটা বলা হয়েছে— ‘বাদশাহ (তাঁর পারিষদবর্গকে) বলল, আমি (স্বপ্নে) দেখলাম, সাতটি মোটাতাজা গাভী, যাদেরকে সাতটি রোগা-পটকা গাভী খেয়ে ফেলছে। আরও দেখলাম সাতটি সবুজ-সজীব শীষ এবং আরও সাতটি শুকনো। হে পারিষদবর্গ! তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানলে আমার এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দাও।’ (সুরা ইউসুফ: ৪৩)

বাদশাহর পর্ষদ ব্যাখ্যা না দিতে পারলেও ইউসুফ (আ.) জেলে বসেই এর ব্যাখ্যা প্রদান করলেন, ‘ইউসুফ বললেন, তোমরা একাধারে সাত বছর শস্য উৎপন্ন করবে। এ সময়ের ভিতর তোমরা যে শস্য সংগ্রহ করবে তা শীষসহ রেখে দিও, অবশ্য যে সামান্য পরিমাণ তোমাদের খাওয়ার কাজে লাগবে (তার কথা আলাদা)। এরপর তোমাদের সামনে আসবে এমন সাতটি বছর, যা অত্যন্ত কঠিন হবে। তোমরা এই সাত বছরের জন্য যা সঞ্চয় করে রাখবে, তা খেতে থাকবে, অবশ্য যে সামান্য পরিমাণ তোমরা সংরক্ষণ করবে (কেবল তা-ই অবশিষ্ট থাকবে)। তারপর আসবে এমন একটি বছর যখন মানুষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে এবং তখন তারা আঙুরের রস নিংড়াবে।’ (সুরা ইউসুফ: ৪৭-৪৯)

তোমাদের দুর্ভিক্ষ আসবে। প্রথমে খুব ভালো ফসল হবে। এরপর দুর্ভিক্ষ হবে। সে সময়ের জন্য খাবার সংরক্ষণ করতে হবে। এ তো গেল ইউসুফ (আ.)-এর ব্যাখ্যা। ইউসুফ (আ.) যখন অর্থ ও খাদ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেন, তখন দুর্ভিক্ষের সময়; যে দুর্ভিক্ষের কথা তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আগেই বলেছিলেন। তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন কঠিন সময়ে। দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি শুধু তার দেশের লোকদেরকেই না, বরং দূর-দূরান্তের অন্যান্য রাষ্ট্র থেকেও যখন মানুষ তার দেশে গিয়েছে, তাদের সবাইকে দিয়েছেন। যারা অর্থ দিতে পেরেছে, তাদেরকে দিয়েছেন। যারা অর্থ কম দিয়েছে, তাদেরকেও দিয়েছেন। যারা দিতে পারেনি, তাদেরকেও দিয়েছেন। কোরআনের আয়াত পড়লে আমরা দেখতে পাই— ‘সুতরাং তারা যখন ইউসুফের কাছে পৌঁছাল, তখন তারা (ইউসুফকে) বলল, হে আযীয! আমরা ও আমাদের পরিবারবর্গ কঠিন মুসিবতে আক্রান্ত হয়েছি। আমরা সামান্য কিছু অর্থ নিয়ে এসেছি। আপনি আমাদেরকে পরিপূর্ণ রসদ দিয়ে দিন এবং আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদেরকে দান করুন।

নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্যে অনুগ্রহকারীদেরকে মহা পুরস্কার দিয়ে থাকেন।’ (সুরা ইউসুফ: ৮৮)

এখানে দুটো বিষয় আছে, আমরা অল্প করে টাকা নিয়ে এসেছি, আমাদেরকে বেশি করে দিন। অর্থাৎ মূল্য কম, খাদ্য বেশি। এটাও বলা হয়েছে, আমাদের ফ্রি দিন। ‘তাসাদ্দাক আলাইনা’ আমাদেরকে সদকা দিন।

ইউসুফ (আ.)-এর যুগে সেই প্রাচীনকালে, যখন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিল না, যখন এত আধুনিক প্রযুক্তি বের হয়নি, সে সময়েও খাদ্য ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং গণমানুষকে, এমনকি নিজ দেশের বাইরের লোকদেরও স্বল্পমূল্যে ও বিনামূল্যে খাবার দেয়ার নজির আল্লাহর নবী ইউসুফ (আ.) রেখে গেছেন। আজকের পৃথিবীতে আমরা দেখি, নিজেদের একটু অভাব হয়ে যাবে, নিজ দেশে একটু কমে যাবে, নিজের ব্যবসা কমে যাবে বলে বাধা দেয়া হয়। পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ, অমুক বস্তু রপ্তানি হবে না- বিভিন্ন দেশ এগুলো করে, নিজেরা কম পাবে এ আশঙ্কায় অন্যের বিপদ দেখলে ইচ্ছেমতো কয়েকগুণ মূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয়।

নিজ দেশের ও অন্যান্য দেশের অভাবী লোকদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে নবী ইউসুফ আলাইহিস সালামের এ অভাবনীয় সফলতা এসেছিল তাঁর দু’টি গুণের কারণে। ১. সততা ও নিষ্ঠা, ২. দক্ষতা ও কর্মকৌশল। কোরআনের ভাষায় ‘হাফিজ ও আলীম’। আজকের দুনিয়ায় ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা মন্ত্রী-মহামন্ত্রীদের এ দু’টি জিনিসেরই বড় অভাব। দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থাকা ব্যক্তিদের ক্ষমতা চলে গেলেই অনেকের মহা কীর্তি (!)গুলোর যে ফিরিস্তি মানুষের সামনে আসে, তা দেখেই বোঝা যায়, তাদের সততার দৌড়...! তাদের সম্পদের পাহাড়ের তালিকা, দেশ-বিদেশে গচ্ছিত অর্থের ভান্ডার ও অট্টালিকার তালিকা দেখেই মানুষ বুঝতে পারে তাদের সততার ভিত্তির কথা। এরা ব্যস্ত থাকে নিজের ও নিজের পরিবার-পরিজন এবং আত্মীয় স্বজনের ভাগ্যোন্নয়নের ধান্দায়। এই তো কদিন আগে নতুন মন্ত্রিত্বের তালিকা থেকে বাদ পড়া একজন সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রীর বিলেতসহ অন্যান্য দেশে গড়া সম্পদের পাহাড়ের একটি তালিকা জনসম্মুখে এল। এ কথাগুলো যখন লিখছি তখন চলছে পুলিশের একজন সাবেক প্রধানের গড়ে তোলা বিশাল সম্পদ ভান্ডারের প্রচার-প্রচারণা। কোনো কোনো পত্রিকা শিরোনাম করেছে— ‘বেনজিরের আলাদিনের চেরাগ’। এ ভদ্রলোক শুধু পুলিশ প্রধানের পদই অলঙ্কৃত করেননি, বরং এর আগে র‍্যাব ও ডিএমপির প্রধানও ছিলেন। ২০১৩ সালের ৫ মে’র শাপলা চত্বরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নিধন-নির্যাতনেও তাঁর ছিল অসাধারণ (!) ভূমিকা। হয়তো এই বৈশিষ্ট্যও তাকে সম্পদের পাহাড় বানাতে বিশেষ সহযোগিতা করে থাকবে।

যা হোক, হাল আমলের ক্ষমতাসীনগণ ও রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি বড় অংশ যে কোরআনে বলা সততা ও নিষ্ঠার অধিকারী নয়, বরং তাদের অবস্থা যে পুরো উল্টো তা তো মনে হয় ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই। এদের কিছু কিছু ভিতরের অবস্থা প্রকাশ পায় ক্ষমতা-ছাড়া হওয়ার পর অথবা বড় ক্ষমতাওয়ালার বিরাগভাজন হওয়ার পর। আপনি কোন ডিপার্টমেন্টের কথা বলবেন। এই তো ক’বছর আগে কয়েকজন সিনিয়রকে ডিঙিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পাওয়া সুরেন্দ্র কুমার সিনহা যখন পদ ছেড়ে দেশ থেকে পালালেন, তখন তাকে নিয়োগ দেয়া লোকরাই প্রকাশ করল তার দুর্নীতির ফিরিস্তি। যাক সেসব কথা।

বাকি থাকল যোগ্যতা ও দক্ষতার কথা, কোরআনের শব্দ হচ্ছে ‘আলীম’। তো এখনকার খাদ্য ও অর্থমন্ত্রীদের যোগ্যতা ও দক্ষতার কথা কার অজানা। তারা নতুন নিয়োগ পাওয়ার পর কতই না হাঁকডাক দেন। সিন্ডিকেটের হাত-পা ভেঙে দেবেন। অবৈধ মজুতকারীদের এক বিন্দুও ছাড় দেবেন না। নিত্যপণ্যের দাম কোনোক্রমেই বাড়াতে দেবেন না। তার মন্ত্রণালয়ে এক টাকার দুর্নীতি হবে না। এখানে-সেখানে গিয়ে দু-একটি অভিযানও করেন। এরপর? এরপর কী হয়? তারা কি সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে ভূমিকা রাখেন? তারা কি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন? পারেন কি মুষ্টিমেয় ব্যক্তিদের সিন্ডিকেট ভাঙতে। এদেশ এবং আমাদের মতো অনেক দেশেই এসব প্রশ্নের উত্তর নেতিবাচক। এসব দেশে খাদ্য ও অর্থের দায়িত্বশীলরা শুধুই জনগণকে হতাশা উপহার দিয়ে যান। কারণ খুব স্পষ্ট সততা ও দক্ষতার অভাব। অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত লোকদের এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগ দেয়া হয়।

সুরা ইউসুফের আয়াতগুলো শুনছি। নবী ইউসুফ আলাইহিস সালামের সততা ও দক্ষতার অসাধারণ নমুনাগুলোর কথা পড়া হচ্ছে। অসাধারণ সক্ষমতার সঙ্গে দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য ব্যবস্থাপনার কীর্তিগুলো আল্লাহর কালামে যখন আমরা শুনি, তখন শুধুই মনে হয়, আহ! পৃথিবীর দেশে দেশে যদি আবার দায়িত্বে আসত ‘আলীম’ ও ‘হাফিজ’ লোকেরা! আহ! যদি দুনিয়ায় আবার প্রতিষ্ঠিত হতো সুষম খাদ্য ও অর্থব্যবস্থা, যদি শোনা যেত, এখন আর কোনো মানুষ, বরং কোনো প্রাণী না খেয়ে ঘুমোতে যায় না!

বিশ্ব যে আজ আধুনিক হওয়ার দাবি করছে, উন্নত থেকে উন্নততর হওয়ার দাবি করছে, সেবা, মানবাধিকার, যোগাযোগে উন্নত হওয়ার দাবি করছে আসলে কি তাই? প্রাচীনকালে আল্লাহর এক নবী যে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে গেছেন, যে মানবতার পরিচয় দিয়ে গেছেন, তার ধারেকাছেও আমরা পৌঁছাতে পারছি না। তবুও আমাদের দাবির কোনো শেষ নেই!

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ