ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

বিএনপিতে ফিরছেন বহিষ্কৃতরা

প্রকাশনার সময়: ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৪, ১৪:৫৩

ফের ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি। সে লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভাজন মিটিয়ে দলকে আরও শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন সময় বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের দলে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বহিষ্কৃতদের একাংশ তাদের ‘ভুল’ স্বীকার করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছেন। তবে বিনা আবেদনেই সাধারণ ক্ষমায় তাদের দলে ফেরানো হতে পারে। বিএনপির শীর্ষ নেতারাও তেমনটি চাইছেন।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিগত সময়ে দল থেকে বহিষ্কৃত অনেকেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। সূত্রমতে, বিএনপির এক নেতাকে বহিষ্কার করার পর তার অন্তত ২৫০ জন অনুসারী দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার অনুসারীদের ক্ষমা করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলে ফেরানোর জন্য অন্তত পাঁচটি আবেদনও করা হয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফেরানোর জন্য একের পর এক আবেদন জমা হচ্ছে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এ আবেদন খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও নীতিনির্ধারকরাও অবহিত রয়েছেন।

জানা গেছে, বিগত সময় বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর যে নেতাকর্মীরা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন তাদের বিষয়ে নমনীয় হয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এলাকায় যারা জনপ্রিয়, অতীতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড যাদের ভালো এবং ছোটখাটো ভুল রয়েছে, এমন নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে শিগগিরই। সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে বহিষ্কৃত সব নেতাকর্মীদের একই সঙ্গে তাদের দলে ভেড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, দল থেকে বিভিন্ন সময় অনেক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ বহিষ্কারাদেশ নিয়েও অনেকে বিগত কর্মসূচি পালন করেছেন। দলে পদ-পদবি না থাকার পরও নিজেদের জীবন বাজি রেখে যারা দলীয় কর্মসূচি পালন করেছেন তাদের বিষয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া বহিষ্কৃত অনেক নেতা তাদের ভুল স্বীকার করে দলে ফেরার আবেদন করেছেন। আগামী দিনে আন্দোলনের পূর্বে বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের সাধারণ ক্ষমা করে করে দলে ফেরানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাদের দলে ফেরানো হবে বলে বিএনপির এ ভাইস চেয়ারম্যান জানান।

জানা গেছে, গত বছরে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুলনার ৫২০ নেতা পদত্যাগ করেছিলেন। তবে বহিষ্কৃত মঞ্জু দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের নিয়ে সক্রিয় ছিলেন। বিভাগীয় সমাবেশ, পদযাত্রা ও রোডমার্চে তার সরব উপস্থিতি ছিল। ভুল বুঝতে পেরে দলে ফিরতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর ৫টি আবেদনও করেছেন তিনি। একই সঙ্গে তার বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে যে নেতারা পদত্যাগ করেছিলেন তাদেরও দলে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে গত বছরে কুমিল্লা বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীদের নিয়ে শেষ পর্যন্ত মাঠে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কু। এছাড়া কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম রোডমার্চের পথসভায় সাক্কুর কর্মী-সমর্থকরা শোডাউন করেন। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গাড়ির গ্লাস নামিয়ে সাক্কুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। এরপর থেকে দলে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন কুমিল্লার সাবেক মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কু। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে দলের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সময় বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক নেতাকর্মী তাদের ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করছেন, দলে ফেরার জন্য আবেদন করছেন। আমরা এগুলো আমলে নিচ্ছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং নীতিনিধারণী পর্যায়ে যারা রয়েছেন তাদের বিষয়গুলো অবহিত করেছি। এ বিষয়ে তারা দেখবেন এবং সিদ্ধান্ত নেবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানান, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপিতে নানামুখী সংকট দেখা দিয়েছে। ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে সংগঠনের তৃণমূলে। অনেক জায়গায় কমিটি হালনাগাদ ও পুনর্গঠন না হওয়ায় সাংগঠনিক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আর সাংগঠনিক এসব সংকট উত্তরণে রোজার মাসকে কাজে লাগাতে চায় দলটি। পাশাপাশি ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দল গোছানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এটিকে আন্দোলনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কাজে লাগিয়ে ঈদের পরে পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে চায় বিএনপি।

জানা গেছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলীয়ভাবে পাঁচ শতাধিক ইফতার মাহফিল আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এতে গুরুত্ব পাবে চলমান আন্দোলনে নির্যাতিত নেতাকর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। কেন্দ্রীয়ভাবে এতিম, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, পেশাজীবী এবং গুম-খুন নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের সম্মানে ইফতার আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত, কারাবন্দি এবং অসহায় নেতাকর্মীদের পরিবারের জন্য দলের পক্ষ থেকে পাঠানো হবে ইফতারসামগ্রী। রোজার মাসে রাজপথে তেমন কোনো কর্মসূচি না থাকলেও বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতে লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। এছাড়া রোজার মাসে বিএনপির সিনিয়র নেতারা তৃণমূলে যাবেন। নিজের এলাকা ছাড়াও অন্যান্য জেলায় যাবেন গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। এ সময় তারা স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হবেন। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি পূর্ণাঙ্গ ও পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে বিএনপি। পাশাপাশি বিভিন্ন মিত্র দল এবং জোটের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে বিএনপির সিনিয়র নেতারা অংশগ্রহণ করবেন।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ‘একদফা’ দাবিতে ২০২২ সাল থেকে রাজপথে নামে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। দলটি ২০২১ সালের মার্চের পর সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। বরং দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এর মধ্যে ২০২২ সালে বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার ও মনিরুল হক সাক্কু নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বহিষ্কারের শিকার হন। এর বাইরে আরও অনেক নেতা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় একই ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় দলটি। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় সিটি ও পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউপি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়ে বহিষ্কৃত হন অনেক নেতা।

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গাজীপুরের সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির ৩৩ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৭ জন কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হন। বিজয়ী ১৭ জনসহ ২০ নেতা আবেদন করেছেন।

এ ছাড়া বিভিন্ন বিভিন্ন সিটি ও পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে বহিষ্কৃত হন অনেক নেতা। বহিষ্কৃত এসব নেতা দলীয় ফোরামে ক্ষমা চেয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেন। ধারণা করা হচ্ছে এসব নেতা শিগগিরই দলের শীর্ষ মহলের কৃপা লাভে সমর্থ হবেন।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ