ঢাকা, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জিলকদ ১৪৪৫
ভারতীয় চ্যানেলের সম্প্রচার

সমাধান কোন পথে

প্রকাশনার সময়: ১৪ অক্টোবর ২০২১, ০৯:২৯

গত ১ অক্টোবর থেকে দেশে বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বিদেশি চ্যানেলের প্রচারে ‘ক্লিন ফিড’ আইন বাস্তবায়নে এমন কঠোর অবস্থান নিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। ‘ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬’-এর ১৯ ধারার ১৩ উপধারায় বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিজ্ঞাপন ছাড়া টিভি ট্রিমিংই হলো ‘ক্লিন ফিড’। কিন্তু বাংলাদেশে যেসব বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার হয়, সেগুলোতে কমবেশি বিজ্ঞাপন থাকে। জানা গেছে, বাংলাদেশে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের বাজার বছরে ২১ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকার। কিন্তু এই বিজ্ঞাপনে আর্থিকভাবে লাভবান হয় বিদেশি চ্যানেলগুলো। বিপুল পরিমাণ ট্যাক্স লাভের সুযোগ হারায় বাংলাদেশ সরকার। ফলে ‘ক্লিন ফিড’ আইনে বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারের সরকারি সিদ্ধান্তে দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলো অর্থনৈতিক লাভের আশা দেখছে।

এদিকে বিদেশি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়াতে বিপাকে পড়েছেন বিপুলসংখ্যক দর্শক। তারা এখন বাংলাদেশি টেলিভিশন চ্যানেল ছাড়া বিদেশি কোনো চ্যানেল দেখতে পারছেন না। ক্যাবল অপারেটররাও গ্রাহক হারাচ্ছেন বলে দাবি করছেন। বলছেন, বাংলাদেশে টিভি চ্যানেলের মান উন্নত না করলে গ্রাহক সংখ্যা কমতেই থাকবে।

সরকার বলছে, ক্যাবল অপারেটররা ‘ক্লিন ফিড’ আইন না মানলে করণীয় কিছু নেই। বিজ্ঞাপনসহ চ্যানেলের সম্প্রচার দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হচ্ছে। অপরদিকে কেবল অপারেটররা বলছেন, বিজ্ঞাপন ছাড়া (ক্লিন ফিড) চ্যানেলের সম্প্রচার করা তাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই সমস্যার সমাধান কোথায়? বিদেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনমুক্ত কে করবে? আর তা যদি না হয়, তাহলে কি বিদেশি চ্যানেলগুলো স্থায়ী ভিত্তিতে বন্ধ হয়ে যাবে? না, একটি দেশে ক্লিন ফিড বা বিজ্ঞাপন ছাড়া বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার হবে, এটা নতুন কোনো ধারণা নয়। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপালেও ক্লিন ফিড বা বিজ্ঞাপন ছাড়া বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার হয়। তা হলে প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশে সমস্যা কোথায়?

যেসব বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে সম্প্রচার হয়, সেসব চ্যানেল কাস্টমাইজ করে অর্থাৎ বাংলাদেশে তাদের চ্যানেল বিজ্ঞাপনহীন করে ডাউনলিংক করার ব্যবস্থা কর যেতে পারে। অথবা বাংলাদেশে যারা স্যাটেলাইট থেকে চ্যানেল ডাউনলিংক করেন তারা চ্যানেলে অনুষ্ঠানের ফাঁকে থাকা বিজ্ঞাপন বাদ দিতে পারেন।

টিভি চ্যানেল পরিবেশকরা বলছেন, প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে তারা চাইলেও ফিড ‘ক্লিন’ করতে পারছেন না। বাংলাদেশে এ খাত এখনো পুরোপুরি ডিজিটাল হয়নি। যে কারণে ফিড ক্লিন করার কাজটি সহজ নয়। আর রাতারাতি এর কোনো সমাধান পাওয়া যাবে না, সেজন্য সময় দরকার।

এছাড়া প্রযুক্তির ব্যয়ভার সামলাতে সরকারের কাছে ঋণও চান পরিবেশকরা। পরিবেশক কোম্পানি ওয়ান অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল বলেন, ‘আজ পর্যন্ত ক্যাবল অপারেটররা ব্যাংক থেকে কোনো লোন পায়নি। আমাদের লোন দেয়া হোক, আর এটাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হোক। ক্লিন ফিডের জন্য যন্ত্রাংশ বসাতে যদি গ্রাহক প্রতি ১৫ ডলারও খরচ হয়, তাহলে পুরো ইন্ডাস্ট্রি দাঁড় করাতে ১৫ থেকে ২০ কোটি ডলার প্রয়োজন, এর জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হোক।’

এ কাজে কী ধরনের প্রযুক্তি প্রয়োজন? তিনি বলেন, ‘আমাদের ৫৭০টির মতো কন্ট্রোল রুম আছে, সেখানে ডিভাইসগুলো সরবরাহ করতে হবে। ক্লিন ফিড পেতে চিপ, ডিকোডার বক্স ও স্যাটেলাইট ট্রান্সপন্ডার দরকার। সুতরাং সেই জিনিসগুলো বাস্তবায়নে আমরা সরকারের কাছে সময় চাইছি।’

দেশীয় চ্যানেলগুলোর দাবি, দেশে বিজ্ঞাপনের বড় বাজার থাকা সত্ত্বেও দেশীয় চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে যে ভারতীয় চ্যানেলগুলো সম্প্রচার হয় তারা কমপক্ষে আট হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন নিয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো চ্যানেল ভারতে দেখা যায় না। এখন ক্লিন ফিড নীতির কারণে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপনের বাজার আরো বড় হবে।

একুশে টেলিভিশনের হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলেন, ‘তারা (বিদেশি চ্যানেল) যে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয় সেই ভারতীয় পণ্যও বাংলাদেশের বাজার দখল করছে। সেই ক্ষতির হিসাব করলে সেটা অনেক। ভারতীয় চ্যানেলের এই বিজ্ঞাপন থেকে সরকার কোনো ট্যাক্স পায় না। অথচ আমরা ট্যাক্স দেই।’

দেশীয় চ্যানেলে বিজ্ঞাপন এলে বাংলাদেশ সরকার ট্যাক্স পায়। সে ক্ষেত্রে সরকারও লাভবান হতে পারে। সরকার বলছে, বিদেশি চ্যানেল বিজ্ঞাপনমুক্ত না হওয়ায় এ খাতে প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ