ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

নিরক্ষরতা দূরীকরণে কওমি মাদরাসার ভূমিকা

প্রকাশনার সময়: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:৫১

শৈশবে যারা পিতা কিংবা পিতামাতা উভয়কে হারান সমাজে তারা এতিম হিসেবে পরিচিত। সকল যুগে সকল অবস্থায় কমবেশি তাদের উপস্থিতি ছিল, বর্তমানেও আছে। পরিস্থিতি অনুসারে তাদের সংখ্যা কমবেশি হতে পারে কিন্তু একেবারে নেই এমন অঞ্চল পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশে তাদের সংখ্যা কত এ ব্যাপারে নিদিষ্ট কোনো হিসাব না থাকলেও তাদের সংখ্যা একেবারে কম নয়। কওমি মাদরাসা ও বিভিন্ন এতিমখানা পরিদর্শনে গেলে তাদের সংখ্যা কিছুটা আঁচ করা যায়। মহামারি করোনার কারণে তাদের সংখ্যা আরো অনেক বেড়েছে।

বাংলাদেশের অধিকাংশ পরিবারের পিতাই একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি। রোগ, ব্যাধি কিংবা দুর্ঘটনার কারণে পিতা মৃত্যুবরণ করলে পরিবারে নেমে আসে ভয়াবহ দূরাবস্থা। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সন্তানের লালন-পালন ও যথার্থ পরিচর্যা। অনেক মায়ের পক্ষে সন্তানের ভরণপোষণ ও পড়াশোনার খরচ বহন করা সম্ভব হয় না। সন্তানের থাকা-খাওয়া ও ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করতে অধিকাংশ সচেতন মা তার সন্তানকে কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। তাছাড়া দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে কোনো শিশুর পিতামাতা উভয়ই মৃত্যুবরণ করলে তার আত্মীয়-স্বজনরা তাকে কওমি মাদরাসায় ভর্তি করে দায়মুক্ত হতে চেষ্টা করে।

কওমি মাদারাসায় অসহায়, দরিদ্র ও এতিম ছাত্রদের জন্য বিনামূল্যে থাকা, খাওয়া ও পড়ার ব্যবস্থা থাকে। বলাবাহুল্য অধিকাংশ কওমি মাদারাসার নামের সাথে ‘এতিমখানা’ শব্দটি যুক্ত। সেখানে লিল্লাহ বোর্ডিং নামে একটি ফান্ড থাকে। ফিতরা, জাকাত ও দান সদকা- এর আয়ের প্রধান উৎস। সে ফান্ডের অর্থের মাধ্যমে দরিদ্র ও অসহায় এতিম ছাত্রদের পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করা হয়। তাছাড়া নবীন ও অপেক্ষাকৃত ছোট মাদরাসায় এতিমদের বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা না থাকলেও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এলাকার সহৃদয়বান ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এতিম ছাত্রদের খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে থাকেন। যা সমাজে জায়গীর প্রথা নামে পরিচিত। এভাবে অসংখ্য অসহায়, দরিদ্র ও এতিমছাত্রদের জীবনযাত্রার সুব্যবস্থাকরণে কওমি মাদরাসা অদ্যাবধি নিয়োজিত।

নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও কওমি মাদরাসার ভূমিকা অতুলনীয়। কেননা তাদের কল্যাণে অসংখ্য এতিমশিশুর দু’বেলা অন্ন জোটে। তারা বিনা মূল্যে ধর্মীয় ও প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পায়। তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। কিশোর বয়সে বিভিন্ন অপরাধ থেকে তারা মুক্ত থাকে। সৎকাজের প্রতি আগ্রহ জাগ্রত হয়। অসৎ ও অশালীন কাজের প্রতি সৃষ্টি হয় ঘৃণা। সর্বোপরি তারা উন্নত চারিত্রিক মাধুর্য লাভে ধন্য হয়। পাশাপাশি দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে তারা মানুষকে সত্য, ন্যায় ও ধর্মীয় চেতনা নিয়ে জীবনযাপনে অনুপ্রাণিত করে। দাওয়াতি কাজে সর্বদা নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করে।

কওমি মাদরাসা থেকে শিক্ষা নিয়ে অসংখ্য এতিম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শুরু করেন। অনেকে মসজিদের ইমাম হিসেবে; অনেকে বিভিন্ন মাদরাসায় শিক্ষাদানে; অনেকে আবার ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে কর্মজীবনে আত্মনিয়োগ করে। এভাবে কওমি মাদরাসার কল্যাণে এতিম শিশুরা সমাজের মূলধারার সাথে মিশে যায়। তাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়।

সর্বোপরি এতিম শিশুদের মানবিক উৎকর্ষতা সাধন ও পরিপূর্ণ বিকাশে কওমি মাদ্রাসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কওমি মাদারাসা না থাকলে অধিকাংশ এতিম শিশু মৌলিক অধিকার তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, প্রাথমিক ও ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতো। সমাজের ছিন্নমূল শিশুদের সংখ্যা বাড়তো। বাড়তো বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও অপকর্ম। তাই নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও এতিমদের পুর্নবাসনে কওমি মাদরাসার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ