ঢাকা, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জিলকদ ১৪৪৫

‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ’

প্রকাশনার সময়: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:২২ | আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৫

বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃত উল্লেখ করে মিসরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিচু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় মিশরের বিখ্যাত কায়রো অপেরা হাউজে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-মিসর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় তিনি এসব কথা বলেন।

মিসরের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের যৌথ আয়োজনে কায়রো অপেরা হাউজের গ্রাউন্ড হলে দেশটির সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সুপ্রীম কাউন্সিল অব কালচারের মহাসচিব প্রফেসর হিসাম আজমির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ ও মিসরের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। এরপর প্রদর্শন করা হয় বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও হেরিটেজ সমৃদ্ধ একটি প্রামাণ্য চিত্র।

দেশটির সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী ড. নেভিন আল কিলানির পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মিসরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আধ্যাপক, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রিত মিসরীয় অথিতি, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বাংলাদেশী শিক্ষক, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি কর্মকর্তা, মিসরে প্রসিদ্ধ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থী, বাংলাদেশী কমিউনিটির সদস্য ও দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ এই যৌথ আয়োজনের জন্য মিসরের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সুপ্রীম কাউন্সিল অব কালচার এবং বৈদেশিক সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে বলেন, ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের যে বীজ রোপিত হয়, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙ্গালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীক।

সামিনা নাজ এসময় ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন এবং জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিক সংস্থার (ইউনেস্কো) প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

রাষ্ট্রদূত দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাস তুলে ধরে, প্রথম আরব দেশ হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া, ওআইসি, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের সদস্য পদ লাভে সহায়তায় মিসরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এ সময় রাষ্ট্রদূত মিসরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাতের সংক্ষিপ্ত বাংলাদেশ সফরের কথা তুলে ধরেন। একইসঙ্গে তিনি আনোয়ার সাদাতের আমন্ত্রণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৩ সালে এবং প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ২০০১ ও ২০০৯ সালে মিসর সফরের কথা তুলে ধরেন।

রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি সার্বিক ধারণা দেন। তিনি বাংলাদেশের উৎসব, শিল্প, সংস্কৃতি, পরিধান প্রভৃতি বিষয় উল্লেখ করেন। এছাড়া তিনি ইউনেস্কো স্বীকৃত ‘Intangible Cultural Heritage’ যেমন- জামদানি, শীতল পাটি ইত্যাদির ওপর আলোকপাত করে উপস্থিত অতিথিদের প্রদর্শিত সামগ্রী দেখার আহ্বান জানান।

এসময় তিনি দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু হবার ফলে পর্যটন, ব্যবসা, মানুষের মধ্যে যোগাযোগ আরও বেগবান হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে এর মাধ্যমে আরও বেশি মিসরীয় পর্যটক ও ব্যবসায়ী বাংলাদেশ ভ্রমণে উৎসাহী হবে বলে সামিন নাজ আশা প্রকাশ করেন।

বক্তব্যের শেষে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমাদের জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত একটি সোনার বাংলাদেশ গড়ার। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু এমন একটি বিশ্ব ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখতেন যেখানে সকল মানুষের জন্য শান্তি এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃত।

বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিচু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে।

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশ্ব ব্যবস্থায় দেশসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারকরণের ওপর নির্দেশনা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কোন্নয়নের নানা ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করছে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ-মিসরের ৫০ বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের উদযাপনে এই ধরনের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সম্পর্কের নবদিগন্তের উন্মোচন ঘটবে। তিনি এই যৌথ আয়োজনের জন্য মিসরের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে এরকম আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানের শেষে রাষ্ট্রদূত দূতাবাসের পক্ষ থেকে মিসরের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. নেভিন আল কিলানি এবং মিসরের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সুপ্রীম কাউন্সিল অফ কালচারের মহাসচিব প্রফেসর হিসাম আজমিকে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন।

এছাড়া রাষ্ট্রদূত মিসরের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ৫-১৮ বছর বয়সী শিশুদের নিয়ে ‘বিদেশি শিশুদের চোখে মিসর’ শীর্ষক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী বাংলাদেশি শিশুদের আঁকা ফটো নিয়ে অনুষ্ঠিত চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এবং দূতাবাসের পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে, আমন্ত্রিত মিসরীয় এবং বাংলাদেশি অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করেন। অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রদূতের নির্দেশনায় দূতাবাস বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পর্যটন প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে ৯.৪১ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করে। এছাড়া অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনে বাংলাদেশের হস্তশিল্প ও রপ্তানী পণ্যসমূহ প্রদর্শন করা হয়।

নয়াশতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ