ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ৫ জিলকদ ১৪৪৫

তীব্র তাপপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গায় পানি সংকট

প্রকাশনার সময়: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:০৪ | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:০৬

তাপপ্রবাহ থেকে এখনই স্বস্তি কোনও খবর নেই। আরও কয়েকদিন তীব্র তাপপ্রবাহের দাপট সহ্য করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে গরম ও অস্বস্তি থাকবে চুয়াডাঙ্গা। সামান্য বাড়তে পারে তাপমাত্রা। সেই সাথে থাকবে গরম হাওয়ার দাপট। বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই।

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সে সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল শতকরা ৬১ শতাংশ। এরপর বেলা ১২ টায় তাপমাত্রা বাড়ে ৬.৪ ডিগ্রি। এতে রেকর্ড হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাস আর্দ্রতা ছিল শতকরা ২৩ শতাংশ। বেলা ৩ টায় তাপমাত্রা বেড়ে দাড়ায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, সেইসাথে বাতাসের আর্দ্রাতার পরিমাণ ১৯ শতাংশ।

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে সারাদেশে আরও ৩ দিনের হিট এলার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই নিয়ে ৫ দফায় হিট এলার্ট জারি করা হলো।

বৃষ্টির অভাবে ও তীব্র দাবদাহে পানির স্তর নেমে গেছে। এতে টিউবওয়েলে পানি না ওঠায় চরম সংকটে পড়েছেন এ জনপদের মানুষ।

দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের মাজেদা খাতুন বলেন, টিউবওয়েল চাপতে চাপতে ক্লান্ত হয়ে যাই। গা ঘেমে পানি বের হয় কিন্তু একশত চাপেও এক জগ পানি বের হয় না টিউবওয়েল থেকে।

একই গ্রামের নুরজাহান খাতুন বলেন, প্রায় প্রতিটি টিউবওয়েল একই অবস্থা। কী করে রান্না করবো আর কী খাবো? নিজেদের কষ্টতো হয়ই গরু-ছাগলেরও কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্টের শেষ নেই।

সরেজমিনে এ উপজেলার সদাবরী, মদনা, দর্শনা, নতিপোতা, হাউলি, কুড়ুলগাছি, কার্পাসডাঙ্গা, কুতুবপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি নলকূপে একেবারেই পানি উঠছে না। দৈনন্দিন ব্যবহার ও সুপেয় পানির জন্য এসব এলাকার মানুষের মূল ভরসা টিউবওয়েল। কিন্তু সেসব টিউবওয়েলে পানি না ওঠায় মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে টিউবওয়েল বন্ধ রয়েছে। কিছু টিউবয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করা গেলেও তা পর্যাপ্ত না।

সুপেয় পানির চাহিদা মেটানোর জন্য এক পাড়া থেকে অন্য পাড়াতে গিয়ে পানি আনতে হচ্ছে। অনেকেই আবার পাম্প বসিয়ে নিয়েছেন পানি তোলার জন্য। তবে সেখানেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ রাতে পানি উঠলেও দিনে পানি উঠছে না।

এদিকে তীব্র দাবদাহে অধিকাংশ পুকুর, খালের পানি শুকিয়ে গেছে। ফলে সংকট আরও বেড়েছে। গবাদিপশু লালন-পালন ও পরিবারের রান্না গোসলসহ অন্যান্য প্রয়োজনে পরিমাণ মতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।

কুতুবপুর গ্রামের বাসিন্দা আক্কাস উদ্দীন বলেন, আমার টিউবওয়েল পানি ওঠে না। পাশের বাড়ি থেকে সকালে গিয়ে পানি নিয়ে আসি।

দামুড়হুদার উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বিশ্বাস বলেন, আমার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পানির সংকট চলছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। সুপেয় পানির জন্য মানুষ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গিয়ে পানি আনছে। এভাবে তাপপ্রবাহ অব্যহত থাকলে এ সমস্যা সমাধান হবে না।

দামুড়হুদা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, পানির স্তর নেমে যাওয়ায় ব্যক্তিগত অগভীর টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে জেলায় কি পরিমাণ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না সেটার কোনো তথ্য নেই। এ উপজেলায় যে পানির সংকট তৈরি হয়েছে সেটা বৃষ্টি হলেই স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে বলে আশা করেন এই কর্মকর্তা।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গার বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ অনেক বেশি থাকার কারণে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। রোববার বেলা ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ১৯ শতাংশ। আপাতত এ জেলায় কোনো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও নেই।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ