ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

থানচিতে ব্যাংক লুট: ৪০ জনকে জিম্মি করে অস্ত্রধারীরা

প্রকাশনার সময়: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:০৫ | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:০৯

বুধবার বান্দরবানের থানচিতে দুটি ব্যাংক থেকে টাকা লুট হওয়ার সময় ৯ পুলিশ সদস্যসহ ব্যাংকে আসা প্রায় ৪০ জনকে জিম্মি করে অস্ত্রধারীরা। এসময় পুলিশ গুলি চালালে জিম্মিদের গুলি করার হুমকি দেয় তারা।

পাহাড়ের নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা বুধবার (৩ এপ্রিল) এ ঘটনা ঘটায় বলে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান।

থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীমউদ্দীন বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গণমাধ্যমে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক লুটের খবর পেয়ে থানা থেকে পুলিশ ফোর্স নিয়ে যখন যাচ্ছিলাম, তখন থানার প্রধান ফটকের সামনে থেকে পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই। একই সঙ্গে থানার পেছন দিক থেকেও গুলি করা হয়। পরে বিকল্প পথে পুলিশ ফোর্স নিয়ে ব্যাংকের সামনে যখন যাই, ততক্ষণে অস্ত্রধারীরা টাকা নিয়ে চলে যায়।’

ওসি আরও বলেন, ‘আমরা জানতে পারি দুটি ব্যাংকের ভেতরে ব্যাংক কর্মকর্তা, টাকা তুলতে আসা দুই বিজিবি সদস্য, পুলিশ সদস্য, ব্যাংকের গ্রাহকসহ ৪০ জনকে জিম্মি করে রেখেছে অস্ত্রধারীরা। এসব লোককে বাঁচাতে পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।’

ওসি জসীমউদ্দীন বলেন, ‘আমরা জানতে পারি, গতকাল ঘটনাস্থলে তিনটি চাঁদের গাড়ি ছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে শাজাহান পাড়ায় অস্ত্রধারীদের ৪০ জনের আরেকটি দল ছিল।’

প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ সদস্যরা জানান, বুধবার থানার দক্ষিণ–পশ্চিম পাশ থেকে গুলি করা হয়। একই সঙ্গে প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অস্ত্রধারীরা ওসিসহ পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি করে।

ওই ঘটনার সময় সোনালী ব্যাংক থানচি শাখায় দায়িত্বরত একজন পুলিশ কনস্টেবল বলেন, হঠাৎ করে চাঁদের গাড়িতে এসে চার থেকে পাঁচজন অস্ত্রধারী ব্যাংকে ঢুকে পড়ে। ঢোকার আগে তারা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তারা ব্যাংকে ঢুকে কর্মকর্তাদের দিকে অস্ত্র তাক করে। পুলিশ অ্যাকশনে গেলেই সবার লাশ ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়।

রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটার দিকে হামলা করেও অস্ত্রধারীরা কোনো টাকা নিতে পারেনি। তবে গতকাল বুধবার বেলা একটার দিকে থানচিতে সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় হামলা করে তারা সাড়ে ১৭ লাখ টাকা নিয়ে যায়।

হামলাকারীরা রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) নিজামুদ্দিনকে জিম্মি করে নিয়ে গেছে। পাশাপাশি তারা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫টি গুলি লুট করেছে।

রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির সঙ্গে কেএনএফ জড়িত বলে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন বলছেন, থানচিতে হামলার সঙ্গেও একই গোষ্ঠী জড়িত।

কেএনএফ পাহাড়ের অপেক্ষাকৃত নতুন সশস্ত্র সংগঠন। তারা ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে তৎপরতা শুরু করে। পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোপূর্বে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছর অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে। ওই কমিটির সঙ্গে কেএনএফের কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ আলোচনা হয় গত ৫ মার্চ। এরপর হামলার ঘটনা ঘটল।

থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমে বলেন, ব্যাংক লুটের ঘটনার পর থেকে থানায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য থানায় যুক্ত হয়েছে। ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ