ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

৮ বছর ধরে ফ্রিতে সেহেরি ও ইফতার করান রফিক

প্রকাশনার সময়: ২০ মার্চ ২০২৪, ১৬:৪৫ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৪, ১৯:২৯
ছবি- নয়া শতাব্দী

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ৮ বছর ধরে ফ্রিতে সেহেরি এবং ইফতার করাচ্ছেন রফিক হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম রফিক। প্রতিদিন এক থেকে দেড়শো রোজাদারদের এখানে সেহরি এবং ইফতার করেন। এমন কাজে জেলায় মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন রফিক।

বেশি টাকার মালিক না হলেও সারা বছর যা আয় করেন সেখান থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করে রমজানে সেহরি ও ইফতার করান রফিকুল ইসলাম। বছরের এগারো মাস ব্যবসা করলেও রমজান মাসে মেহমানদারি করেন তিনি। এরকম দৃষ্টান্ত দেশে আর কোথাও আছে বলে জানা নেই এলাকাবাসীর।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টার দিকে রফিক হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, আক্কেলপুরের কলেজ বাজারের কাঁচা মালপট্টিতে রফিকের হোটেলে। ভেতরে ঢুকে দেখা গেল সবাই হাতে হাতে প্লেট নিয়ে যে যার মত করে টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছেন। তখন মালিকসহ বয়রাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। খালি নেই কারও হাত। হোটেলজুড়ে চলছে জমজমাট সেহরি পর্ব। আবার খাবার খেয়ে টাকা না দিয়েই চলে যাচ্ছেন সবাই। টাকা না দিয়ে সেহরি খাবেন সবাই এটাই রোজার একমাস ধরে রফিক হোটেলের নিয়ম। এই নিয়মটি তিনি গত আট বছর থেকে ধরে রেখেছেন।

হোটেলটি তেমন একটা বড় নয়। মালিকও তেমন অবস্থাশালী নয়। তিনি বছরের এগারো মাস হোটেলের খাবার বিক্রি করেন। এই আয় দিয়ে তিনি পুরো বছর সংসার চালান, এখান থেকে আয়ের কিছু টাকা সেহরি ও ইফতার খাবারের জন্য টাকা জমা করেন। প্রতি বছর রোজার শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত তিনি রোজাদারদের টাকা ছাড়াই সেহরি ও ইফতারি করান। প্রতিদিন একশত থেকে দেড়শো রোজাদারদের সেহরি এবং ইফতার করান শফিক।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম রফিক ভাড়া নিয়ে হোটেল ব্যবসা করেন। আক্কেলপুর পৌরশহরেই তার বসবাস। তার হোটেলের নামও রফিক হোটেল। কলেজ হাটে আসা সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী, ব্যবসায়ীরা, হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে আসা স্বজনরা এই হোটেলে টাকা ছাড়াই নিয়মিত সেহরি ও ইফতারি খাচ্ছেন। হোটেল মালিক রফিকুল নিজে এবং তার হোটেলের কর্মচারীররা মিলে ইফতারি ও সেহরির খাবার পরিবেশন করেন।

সেহরির খাবারে ছিল গরুর মাংস, মাছ, ভাজি, ডাল এবং এক গ্রাস দুধ দিয়ে সমাপ্ত হয় সেহরি পর্ব। আর ইফতারিতে থাকে মাংসের বিরিয়ানী, ছোলা বুট, বুন্দা, মুড়ি, পিঁয়াজু, বেগুনি সাথে এক গ্লাস শরবতও। রোজাদারেরা তৃপ্তি সহকারে সেহরি ও ইফতার করছেন। হোটেলের অভ্যন্তর ছাড়িয়ে বাহিরে হাটের জায়গায় ডেকোরেটরের কাপড় বিছিয়ে ইফতার করানো হয়।

সেহরি খেতে আসা একজন বলেন, রোগী নিয়ে এসে সেহেরী খেতে হোটেল থেকে খাবার কিনে খেতে হয়। আর রমজান মাসে সেহরি খাওয়া নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম, রফিক আমাদের বিপদের বন্ধু। সেহরি খেয়ে টাকা দিতে চাইলেও সে কোনো টাকা নেয় না। সকলকে ফ্রিতে ইফতার এবং সেহরি খাওয়ানোই তার ইচ্ছা।

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলাহাট এলাকার বাসিন্দা রিফাত হোসেন শাওন বলেন, হাসপাতালে রোগী নিয়ে এসেছি। রাতে সেহরি খাওয়ার জন্য হোটেল খুঁজতে এসে এই হোটেলে আসি। এখানে অনেক ভালো মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। খাবার পরে বিল দিতে এসে জানতে পারলাম তিনি টাকা না নিয়ে সেহরি খাওয়ান। তার এই কার্যক্রমে আমাদের মতো অনেক বিপদগ্রস্থ লোকের উপকার হয়।

হোটেল মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, রমজান মাসে খাবারের হোটেলগুলো বন্ধ থাকে। এতে ইফতারি ও সেহরির সময় রোজাদারদের অনেক কষ্ট হয়। বছরের এগারো মাস আমি হোটেল ব্যবসা করি। যা আয় হয় তার থেকে কিছু টাকা জমিয়ে রেখে রমজান মাসে সকল রোজাদারদের ইফতার করানোর চেষ্টা করি। ২০১৬ সাল থেকে এই কার্যক্রম শুরু করেছি। এ কাজে আমার হোটেলের কর্মচারীরা সহযোগিতা করে। তারাও এই মাসে কোনো পারিশ্রমিক নেয় না।

তিনি বলেন, মূলত পরকালের মুক্তি এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই আমি এই কাজ করি। আমি যতদিন বাঁচবো এটা যেন চালু রাখতে পারি এজন্য আপনার দোয়া করবেন।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ