ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

‘টিকটক’ যেভাবে ধ্বংস ডেকে আনে

প্রকাশনার সময়: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:২৫ | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:০৬

রাতারাতি ‘সেলিব্রিটি’ বনে যাওয়া যায়- এমন একটি অ্যাপসের নাম-ই হচ্ছে ‘টিকটক’। বাড়ন্ত বয়সের ছেলেমেয়েরা এই অ্যাপসের মাধ্যমে ভিডিও বানানোর নেশায় এখন যেন নিরন্তর মরিয়া হয়ে উঠেছে। অথচ এই ‘টিকটক ভিডিও’ বানাতে গিয়ে কত প্রাণ যে ঝরে গেছে, তার কোনো হিসাব নেই।

সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে,

  • গত বছরের ১২ জুলাই কুমিল্লায় চলন্ত ট্রেনের ছাদে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে মৃত্যু হয় ১৫ বছরের কিশোর মেহেদী হাসানের।

  • ২০১৯ সালের মার্চে টিকটক ভিডিও আপলোডকে কেন্দ্র করে খুন হয় ৮ম শ্রেণির ছাত্র আরাফাত।

  • গত ২ মার্চ রাজবাড়ী জেলার কালোখালী উপজেলায় রেলব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে টিকটক বানাতে গিয়ে পা পিছলে ট্রেনের নিচে কাটাপড়ে মৃত্যু হয় হোসেন নামে ১৬ বছরের আরেক কিশোরের।

  • ৮ মে নড়াইলের কালিয়ায় টিকটক করতে বাধা দেওয়ায় মায়ের সঙ্গে অভিমান করে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করে সুমি আক্তার (১৯)।

  • ১৬ মে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায়, শহরের লাল ব্রিজের অদূরে খুলনাগামী নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে টিকটক বানাতে গিয়ে কাটা পড়ে মারা যায় হৃদয় (১৫) নামে এক কিশোর।

  • ২২ মে নীলফামারীর সৈয়দপুরে টিকটক করতে গিয়ে নদীতে ডুবে মৃত্যু হয় মুস্তাকিম ইসলাম (১৬) নামে এক কিশোরের।

  • ২০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে নির্মাণাধীন তিন তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় অনিল (১৪) নামে এক কিশোরের।

দেশের তরুণ সমাজ যখন এমন হুমকির মধ্যদিয়ে যাচ্ছে, তখন এই অ্যাপসকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা অধিক প্রয়োজন। তা নাহলে দেশের যুবসমাজ একদিন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে।

বলা বাহুল্য, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, বিশ্বের প্রায় ৭৫টি ভাষায় এই টিকটক অ্যাপসটি চালানো হচ্ছে। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, গোটা পৃথিবীতে এই অ্যাপসটি প্রায় ৮০০ মিলিয়ন বার ডাউনলোড হয়েছে।

সুতরাং আমাদের সমাজের তরুণ-তরুণীদের এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে কুরআন ও হাদিসের নীতিমালা অনুসরণ করাই কাম্য। প্রিয় নবীজীর (স.) অনুসরণ ও অনুকরণ ছাড়া, ধরাধামের কেউই উত্তম চরিত্রের অধিকারী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে— ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রসুলের (স.) মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (সূরা আজহাব, আয়াত: ২১)

হাদিসে রসুল (স.) এরশাদ করেন, ‘আমি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত)

আমাদের সমাজে এক শ্রেণির মানুষ আছেন, যারা মানুষকে গুনাহের দিকে আহ্বান করেন। এতে যেমন নিজেরাও ধ্বংসে নিপতিত হচ্ছেন, তেমনি অন্য মানুষকেও ধ্বংসের অতল গহ্বরে ঠেলে দিচ্ছেন, যা একটা সমাজ ও জাতির জন্য বিরাট হুমকি।

অন্যদিকে অশ্লীলতা, ঠাট্টা-বিদ্রুপে পরিপূর্ণ এসব টিকটক ভিডিও তৈরি করা অত্যন্ত জঘন্য পাপ। যার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা এসেছে। যতজন এই ভিডিওগুলো দেখবে, সবার পাপের একটা অংশ ভিডিওনির্মাতা পেতে থাকবে। এমনকি মৃত্যুর পরও এই গুনাহ জারি থাকবে বা চলমান হিসেবে আমলনামায় যোগ হতে থাকে।

এ বিষয়ে প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে নেক কাজের দাওয়াত দেবে, সে ওই লোকদের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; যারা তার দাওয়াত পেয়ে নেক কাজ করবে; অথচ তাদের সওয়াবের সামান্যও কম হবে না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি মানুষকে গুনাহের কাজে আহ্বান করবে, সে ওই লোকদের সমপরিমাণ গুনাহ পাবে, যারা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে গুনাহের কাজ করবে। অথচ তাদের গুনাহ হ্রাস পাবে না।’ [মুসলিম: ৬৯৮০]

সুতরাং নিজেরা এখনই এ ব্যাপারে হুঁশিয়ার হোন। তাহলে একটি পরিবার একটি সমাজ সুন্দর হয়ে উঠবে, খুব সহজেই। জাগরণের এই জোয়ারে, স্ফুরিত আলোর দিকে ছুটে যাক তরুণ সমাজ। তবেই সার্থক হবে আমাদের পরিবার, পরিজন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সকল প্রকার গুনাহ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

লেখক- শিক্ষক, কলামিস্ট, ছড়াকার।

নয়া শতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ