ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

প্রোপোজ ডে’র গোলাপ, বই এবং বাণিজ্য মেলা!

প্রকাশনার সময়: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৪৬ | আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৩৬

রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকায় আমার এক বন্ধুকে নিয়ে ফুটপাতে চা পান করছি। পাশে একটি ফুলের দোকান। এমন সময় এক জোড়া ছেলে-মেয়ে এসে একটি গোলাপের দাম জিজ্ঞেস করল। পাশ থেকে দাম শুনে আমি চরম হোঁচট খেলাম।

দোকানদার বলল- প্রতি পিস গোলাপ ১৫০ টাকা। কলিজায় একটা হ্যাঁচকা টান অনুভব করলাম। প্রেমিকার সঙ্গে প্রথম দেখায় কলিজা যেমন দুরুদুরু করে, বুকটা ঠিক তেমনই করতে লাগল। মনে মনে ভাবলাম, ভাগ্যিস এখন আর প্রেম করা লাগে না। অনথ্যায় কত টাকাই না গচ্চা যেত!

বিক্রেতা এও বলল যে, সেটা নাকি আমদানি করা বিদেশী গোলাপ! অথচ আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গোলাপ রপ্তানি করছি। গত ২০২৩ সালে আমরা প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ফুল রপ্তানি করেছি।

ছেলেটার সঙ্গে থাকা গার্লফ্রেন্ড (অনুমান) ছেলেটার হাত ধরে টেনে নিয়ে খানিক দূরে এসে বলল, থাক বাবা আমাকে ফুল দেবার দরকার নাই। তুমি বরং ১০/২০ টাকা দিয়ে আমাকে শাহবাগ থেকে এক তোড়া গেন্দাফুলই কিনে দিও। সেটা খোঁপায় পেঁচিয়ে আমরা সারাদিন রিকশায় ঘুরবো।

ছেলেটা বলল নাহ! রিকশায় না। আমরা বিআরটিসি ডাবল ডেকারে ঘুরবো। রিকশাভাড়া বেজায় চড়া। তার চেয়ে বিআরটিসিই ভালো। গোলাপের দাম শুনে আমার মনে হলো- আজ বরেণ্য সাংবাদিক শফিক রেহমান এটা জানতে পারলে তাঁর ‘লাল গোলাপ’ অনুষ্ঠানে হয়তো এই কপোত-কপোতী আর ওই গোলাপ বিক্রেতাকে অতিথি বানাতেন।

আমাদের এখানে ফুলের বাজার নেহায়েত কম নয়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকায় উঠেছে ফুলের বাজার। পাইকারি বাজারে প্রতিটি গোলাপ মান ভেদে ৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জারবেরা ১৫ থেকে ২৫ টাকা, গ্লাডিওলাস ৮ থেকে ২০ টাকা ও রজনীগন্ধা ৫ থেকে ১০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে।

অথচ আজ একটা গোলাপের দাম চাইল ১৫০ টাকা! আহা! আপনি শুধু আলু, পিয়াজ আর সবজি নিয়েই আছেন। অথচ আপনি একজন বেকার প্রেমিকের কথা ভাবলেন না!

ভাবুন তো, একজন বেকারের প্রেমিকা যদি একটা গোলাপ চেয়ে বসে, তাহলে তার অবস্থাটা কি দাঁড়াবে? এই জন্য হইলেও তো একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত বলে আমি মনে করি।

পরিকল্পনা মাফিক এই প্রেমিক জুটি একদিন বিআরটিসিতে উঠে ৬০+৬০=১২ টাকা ভাড়া দিয়ে পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলায় গেল। সেখানে গিয়েও তারা বেশ হতাশ হলো। কেননা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ছোলা, চানাচুর, নুডলস আর বিরিয়ানির দোকানে ভরা। মনে হয় যেন, মানুষ এখানে আসেন শুধু দুই কাজে। এক. খাইতে, আর দুই. হাড়ি পাতিল আর কাপড় চোপড় কিনতে।

এবার এই বেকার প্রেমিক যুগল ক্ষুধা অনুভব করল। কিন্তু বিরিয়ানির দাম বেশ চড়া। তাই তারা ৩০+৩০=৬০ টাকায় দুটি ইনস্ট্যান্ট নুডলস কিনল। নুডলসে গরম পানি ঢেলে দিল বিক্রেতারাই। দুজনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে মজা করে নুডলস খেল।

এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো- ৩০ টাকায় তারা স্যুপ, নুডলস, পানি আর চা সবই খেলো। এটা বুঝলেন না তো! আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি। ইনস্ট্যান্ট নুডলসে মসলা দেওয়া থাকে। পানি ঢেলে দিলেই সেটা সিদ্ধ হয়ে যায়। ডুবন্ত পানি থেকে নুডলস তুলে তুলে খাওয়ার সময় মনে হবে, আপনি স্যুপ খাচ্ছেন, আবার নুডলসও খাচ্ছেন। নুডলস শেষ হলে নিচে থাকা মসলা মিশ্রিত পানিটা খেতে একদন চায়ের মতো মনে হবে। এটার আরেকটা সুবিধা হলো- ওই কপোত-কপোতীর অতিরিক্ত কোনো পানি কেনারও প্রয়োজন হলো না। ফলে ৩০ টাকায় স্যুপ, নুডলস, পানি আর চা সবই খেলো দুজনে!

পরের সপ্তাহে দু’জনে গেল বই মেলায়। তাদের বন্ধু-স্বজন, পরিচিত, অপরিচিত অনেকেই আছেন। লেখক, কবি, সাহিত্যিক এমনকি মহা-সাহিত্যিকও আছেন তাদের ফেসবুক বন্ধু তালিকায়। তাদের বই বেরিয়েছে। সারাদিন ঘুরলেন, সেলফি, ছবি তোলা হৈ-হুল্লোড় সবই হলো।

এরইমধ্যে হঠাৎ পাশের স্টলে প্রচন্ড ভিড়। কান্নার আওয়াজ। দু’জনে এগিয়ে গেলেন। গিয়ে দেখলেন দারুণ অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা- ফেসবুক সেলিব্রেটি, জেলফেরত, মানুষের হৃদয়ঘাতী নাকে আংটা মোড়ানো সফেদ শাড়ি পরিহিতা এক মহানায়িকা। না তা না- মাহমানবী!

তার সাথেও সেলফি তোলা হলো। অটোগ্রাফ নেওয়া হলো। কিন্তু বই কেনা হলো না। সন্ধ্যা নেমে রাত হয়েছে- এবার দু’জনে বেশ ক্লান্ত। পেটেও ক্ষুধা। দু’জন মিলে মেলার এক পাশে গিয়ে আমা কফি শপ থেকে কফি নিলেন। এই কফিও তাদের বাণিজ্য মেলার মতো দারুণ এক সাপ্লিমেন্ট।

গত কয়েক দিনের ঝক্কি ঝামেলায় শরীর থেকে যে পরিমাণ চিনি আর লবণ বেরিয়ে গেছে, সেই ঘাটতি পূরণের জন্য একমাত্র বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে স্টারবাকসের চেয়েও স্বাস্থ্যকর এই কফি।

এবার তাদের বইমেলা থেকে বেরুনোর পালা। হঠাৎ প্রেমিকা বললেন বাথরুমে যেতে হবে- দু’জন মিলে অনেক খোঁজাখুঁজির পর মেলার একপাশে বাথরুম আবিস্কার করলেন। কিন্তু বাথরুমের পাশে দাঁড়াতেই ওয়াক ওয়াক করে বমি করে দিলেন প্রেমিকা। নাক চেপে উল্টোদিকে মাথা ঘুরিয়ে আবার বমি করলেন প্রেমিকা। অগত্যা বাথরুমে না গিয়েই তারা মেলা থেকে প্রস্থান করিলেন। দু’জনে ফিরে গেলেন নিজ নিজ বাসায়।

কিন্তু রাতে কোনোভাবেই ঘুমাতে পারলেন না প্রেমিক। কেননা প্রেমিকার সঙ্গে তাহার এখনও মিলন ঘটে নাই। অথচ প্রেমিকা কিনা বমি করলেন! তার মাথাও ঘুরালো। তাহলে কি ডুয়েল কোনো প্রেমিকের আবির্ভাব ঘটেছে? এই চিন্তায় নিজের জীবনের ইতিহাস লিখতে বসলেন প্রেমিক।

অবশেষে ওই প্রেমিকও এখন লেখক খেতাবের জন্য মরিয়া। হয়তো কোনো এক বই মেলায় দেখা যাবে অফহোয়াইট রংয়ের চাদর জড়িয়ে অটোগ্রাফ দেবেন আংটা পরা কোনো মহামানবীকে!

নয়াশতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ