দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে পুরুষের পাশাপাশি বড় ভূমিকা রাখছেন নারীরা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা নারীরা।
জানা গেছে, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সমন্বিত কৃষি ইউনিট প্রাণিসম্পদ খাতের নিরাপদ মাংস উৎপাদনে জলবায়ু সহিষ্ণু বাউ মুরগি পালনের জন্য জেলার দামুড়হুদা উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের ২৫ জন মহিলাকে বেছে নেয়।
তাদের প্রত্যেককে ৪৩ দিনের জন্য ১৫০টি করে মুরগি পালনের জন্য দেয়া হয়। তারা গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি বাউ মুরগি পালন করে নিজেরাই এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।
মুরগি পালনকারী পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের রহিমা বেগম বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে সংস্থা থেকে আমাকে ১৫০টি বাউ মুরগি পালনের জন্য দেয়া হয়েছিল। মুরগিগুলোর ওজন প্রায় ১ কেজির উপরে। পালন করতে আমার খরচ হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। এ মুরগিগুলো বিক্রি করলে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা লাভ হবে।
একই গ্রামের চন্দনা খাতুন জানান, ওয়েভ ফাউন্ডেশন থেকে ১৫০টি মুরগি পেয়েছিলাম, এর মধ্যে ১৮টি মারা গেছে। মুরগি পুষতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকা। আশা করি লাভ হবে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।
চুয়াডাঙ্গা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. এহতেশামুল হক বলেন, আমরা সদস্যদের মধ্যে এ মুরগি সম্পর্কে আলোচনা করি। তাতে দেখা যায়, এই মুরগি পালনে লাভ এবং গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সেই মোতাবেক আমরা ২৫ জনকে বাউ মুরগি পালনের জন্য ১৫০টি করে মুরগি দিয়েছি। অনেকে সোনালি ও দেশী মুরগি খেতে চাই। সোনালি মুরগি পালনে দেখা যায় দুমাসে এর ওজন ৭শ থেকে ৮শ গ্রাম হয়। সে ক্ষেত্রে লাভ কম হয়। কিন্তু বাউ মুরগি ৪২ থেকে ৪৩ দিনে ১ কেজি ওজন হচ্ছে। এ মুরগির মাংসের স্বাদ সোনালি ও দেশী মুরগির মতো।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শেখ মো. মশিউর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গায় ওয়েভ ফাউন্ডেশন প্রাণিসম্পদ বিষয়ে ব্যাপক কাজ করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৫ জন মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বাউ মুরগি পালনে উদ্বুদ্ধ করেছে। বাউ মুরগির বাচ্চা বড় হয় সন্তোষজনকভাবে এবং মৃত্যুর হার কম। ৪৩ দিনের মধ্যে এ বাচ্চা ১ কেজি ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, একেকটি মুরগি ২ কেজি মতো খাদ্য গ্রহণ করে। সব মিলিয়ে একটি মুরগি পালনে ব্যয় হয় ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। সেটা বিক্রি হয় কেজি প্রতি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। এভাবে যদি কেউ ১০০ মুরগি পালন করে তাহলে ব্যয় বাদে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা লাভ হবে। এ মুরগি পালনে গ্রামীণ পুষ্টি ও আমিষের অভাব পূরণসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ