ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

চাকরি পেয়েই ‘আসল রূপ’ দেখাচ্ছেন ডা. রূপ কুমার

প্রকাশনার সময়: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৫০

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল চালু হতে না হতেই শুরু হয়েছে নানা অনিয়ম। প্রেসক্রিপশনের জন্য হাসপাতালের নিজস্ব প্যাড ব্যবহার না করে বেসরকারি একটি ক্লিনিকের প্যাড ব্যবহার করা, সেবাদানের জন্য অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালটি চালু হয় ২০২৩ সালের মে মাসে। সেখানে স্থায়ীভাবে একজন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয় ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর। নিয়োগের পর থেকেই আগত বিভিন্ন পোষা প্রাণি ও গবাদিপশুর চিকিৎসা করে আসছেন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. রূপ কুমার। কিন্তু প্রেসক্রিপশনে ব্যবহার করছেন ‘ভেট অ্যান্ড পেট কেয়ার’ নামে বেসরকারি একটি ক্লিনিকের প্যাডে। সেখানে চিকিৎসক রূপ কুমারের নাম, ফোন নাম্বার ও ক্লিনিকের ঠিকানা ঢাকার লালমাটিয়া উল্লেখ করা।

হাসপাতালটিতে কর্মরত একাধিক ইন্টার্ন ভেট ডাক্তার এবং সেবাগ্রহীতার সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন যাবত বেসরকারি ক্লিনিকটির সাথে জড়িত। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃক নির্ধারিত ফি থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও নিজের ইচ্ছামতো ফিও নেন তিনি। প্রাণিভেদে ফি তালিকা নির্ধারণ করা থাকলেও সেটা অনুসরণ করেন না তিনি।

টিচিং হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গবাদিপশু (ছাগল) চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তির থেকে ভিজিট বাবদ নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা এবং মাইনর সার্জারি খরচ বাবদ নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। কিন্তু অফিস আদেশ অনুযায়ী গবাদিপশু চিকিৎসায় রেজিষ্ট্রেশন (ভিজিট) বাবদ ব্যয় ৫০ টাকা এবং মাইনর সার্জারি বাবদ ব্যয় ১০০ টাকা হওয়ার কথা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনুষদের একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে সেবা প্রদানের একটা নির্ধারিত মূল্য তালিকা থাকে। এর বাইরে অতিরিক্ত ফি আদায় নিঃসন্দেহে একটি অনৈতিক কাজ। শুনেছি আমাদের ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালে ৩০০ টাকা ভিজিটসহ অন্যান্য সার্ভিসিং চার্জ রাখা হচ্ছে, যা কর্তৃপক্ষের ধার্যকৃত মূল্য তালিকার চেয়ে বেশি। এ ছাড়াও সরকারি হাসপাতালে বেসরকারি ক্লিনিকের নিজস্ব প্যাডে প্রেস্ক্রিপশন করা বেআইনি। হাসপাতালের নাম ঠিকানা সম্বলিত নিজস্ব ব্যবস্থাপত্র (প্যাড) থাকা উচিত।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই হাসপাতালটি মূলত শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শিখানোর জন্য। এখন এ হাসপাতাল যদি ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহৃত হয় এবং উচ্চ ফি আদায় করা হয় তাহলে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা কমতে থাকবে। আমরা ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবো।’

বেসরকারি ক্লিনিকের প্যাড ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. রূপ কুমার বলেন, ‘আমাকে এখন পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে কোন প্যাড দেওয়া হয়নি। তাই আমি আমার ব্যক্তিগত প্যাড ব্যবহার করছি।’

প্যাডে উল্লিখিত ক্লিনিকের মালিকানা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি প্রথমে অনুষদের ডিন ডা. কেবিএম সাইফুল ইসলামের নাম উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে বলেন,‘এটি একটি চেম্বার। এটির একক কোন মালিকানা নেই। কেবিএম সাইফুল স্যারসহ আমরা চার জন মিলে চেম্বারটি চালাই।’

আদায়কৃত ফি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের যেহেতু হাসপাতাল থেকে গ্লাভস ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি দেওয়া হয় না তাই এসবের দাম হিসেবে আমরা নির্ধারিত ফি থেকে কিছু বেশি আদায় করছি৷ আর সার্জারির জন্য আলাদা ফি ও ঔষধের জন্য তার দাম রাখা হচ্ছে।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে এএসভিএম অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. কেবিএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালের সরঞ্জামাদির জন্য আমরা দুইবার রিকুজিশন দিয়েছি। এখনো পাইনি। আশা করছি পেয়ে যাবো। হাসপাতালের প্যাড তৈরির জন্য একটি কমিটি কাজ করছে। তাই সাময়িকভাবে সে কোনো ক্লিনিকের প্যাড ব্যবহার করে থাকতে পারে।’

ক্লিনিকের মালিকানা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেখানে আমরা কয়েকজন ডাক্তার বসি।’

অতিরিক্ত ফি আদায় সম্পর্কে তিনি বলেন,‘২০২০ সালের একটি তালিকা নির্ধারণ করা আছে তবে একটি কমিটি নতুন ফি নির্ধারণের জন্য কাজ করছে।’

নয়াশতাব্দী/ডিএ/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ