ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

১৮ বছরে পা রাখলো যবিপ্রবি

প্রকাশনার সময়: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:৩০

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তর ও প্রথম স্বাধীন জেলা যশোরের প্রথম ও একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে আধুনিক জ্ঞান চর্চা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ২৫ জানুয়ারি, যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের সাজিয়ালী মৌজার আমবটতলা নামক স্থানে ৩৫ একর জায়গাজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। আজ বিশ্ববিদ্যালয়টি সফলতার সতেরো বছর পেরিয়ে আঠারো বর্ষে পদার্পণ করলো।

শুরুটা ছিল বৃষ্টি মহল থেকে। যশোর শহরের ধর্মতলাস্থ 'বৃষ্টি মহল' নামের একটি ভাড়া বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়। এ ভাড়া বাড়িতেই ২০০৯ সালে ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে ‘কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল’, ‘পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’, ‘অণুজীববিজ্ঞান’ এবং ‘ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স’ বিভাগে ২০০ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি করা হয়। ১০ জুন ভর্তিকৃত ২০০ জন শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম মূল ক্যাম্পাসে উদ্বোধন করা হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাসের শুভ উদ্বোধন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পটভূমিতে রয়েছে এক ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা। প্রথমে এটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা ছিল যশোর শহরের উপকণ্ঠ রামনগর নামক স্থানে। ২০০১ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশের মহান জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত এই মর্মে একটি আইনেও মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন। তবে এরপরে নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০০৪ সালের ৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত প্রাক-একনেক সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর যৌথভাবে সরেজমিনে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থান নির্ধারণ করবে মর্মে পুনঃসিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যশোরের জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক এবং ইউজিসির একজন প্রতিনিধিকে সদস্য-সচিব করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচনের জন্য ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে বর্ণিত রামনগরের পরিবর্তে বর্তমান স্থানে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করে। এর প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু।

শুরুতে চারটি বিভাগ থাকলেও বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭টি বিভাগ রয়েছে, যা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এতগুলো রয়েল সাবজেক্ট এক সাথে নেই। স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে ৪ হাজার ৭৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকসহ মোট শিক্ষক সংখ্যা ৩৩৩ জন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন গ্রেডের ১৩৯ জন কর্মকর্তা এবং ৩১৯ জন কর্মচারী কর্মরত আছেন। যারা নিজেদের মেধা ও শ্রমের মাধ্যমে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গবেষণা নির্ভর বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে রাতদিন নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

এখানে রয়েছে দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীদের এমএস এবং পিএইচডি করার সুযোগ। রয়েছে এশিয়া মহাদেশের অন্যতম জিনোম সিকুয়েন্সিং/ DNA কোডিং ল্যাব, যা বাংলাদেশে মাত্র দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। এখানে আছে সুবিশাল বিশ্বমানের হ্যাচারি, বস্ত্র প্রকৌশল এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জন্য রয়েছে আলাদা ওয়ার্কশপ। এই ক্যাম্পাসে একাডেমিকসহ সম্পূর্ণ ক্যম্পাস ২৪ ঘন্টা ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা আছে। বিভিন্ন ক্লাবের সক্রিয় অবস্থা এবং সাজানো গুছানো একটি ক্যাম্পাস যবিপ্রবি। পাশ করে যাওয়া শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ গমন করছে এবং দেশীয় ভালো অবস্থানে রয়েছে।

গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফুটিয়ে তুলতে ক্যাম্পাসের প্রতিটি স্থাপনায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ছোঁয়া। প্রধান ফটকে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের ম্যুরাল। রয়েছে জাতির পিতার নামে প্রধান একাডেমিক ভবন, ছাত্রীদের জন্য বীর প্রতীক তারামন বিবি ও শেখ হাসিনা হল, ছাত্রদের জন্য শহীদ মসিয়ূর রহমান ও মুনশি মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ হল। এ ছাড়াও ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া গবেষণা ইনস্টিটিউট, শেখ রাসেল জিমনেশিয়াম ডা. এম আর খান মেডিকেল সেন্টার ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত লাইব্রেরি কাম একাডেমিক ভবন। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার জন্য কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার।

শহরে যানজট ও কোলাহল মুক্ত পরিবেশে নিবিড় গবেষণার লক্ষ্যে যশোরের মূল শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে স্বাধীনতা সড়কে (যশোর-চৌগাছা সড়ক নামেও পরিচিত) বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান। ক্যাম্পাসের মনোরম পরিবেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশের গ্রামীণ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সবার নজর কাড়ে। তবে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্প শেষ হলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এক সময় দেশের আঞ্চলিক গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বুকে একটি শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান গবেষণা ও প্রযুক্তি নির্ভর বিদ্যাপীঠ হিসেবে গড়ে উঠবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ