ঢাকা, রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১, ৯ জিলহজ ১৪৪৫

কেরু কোম্পানিতে ১০৪ মৌসুমি শ্রমিকের স্থায়ী নিয়োগ

প্রকাশনার সময়: ২৩ মে ২০২৪, ১৬:৫৫

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানীতে মৌসুমী শ্রমিক হিসেবে বছরের পর বছর শ্রম দিয়ে আসছেন ৩০৭ জন শ্রমিক। প্রতি মৌসুমে কারখানা চালু হয়ে উৎপাদন বন্ধ হওয়া পর্যন্ত তারা কাজ করেন। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে মৌসুমী শ্রমিকদের আর কোন কাজ থাকে না।

উপরোক্ত কথাগুলো বলেছিলেন এ কারখানার গ্যারেজ সুপারভাইজার মিজানুর রহমান। একই কথা বললেন জুবাইদা নাহার এ্যানি ও নাজেরা বেগম। তারা দীর্ঘ ১০ বছর এখানে মৌসুমী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। অবশেষে কেরু অ্যান্ড কোম্পানী কর্তৃপক্ষ ১০৪ জন দক্ষ শ্রমিককে স্থায়ী নিয়োগ দিয়ে তাদের দৈন্যতা ঘোঁচালো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে চিনিকলটি উৎপাদনে ছিল ৪২ দিন এবং ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ছিল ৫১ দিন। উৎপাদন যতদিন মৌসুমী শ্রমিকদের কাজও ততদিন। মৌসুম সময় শ্রমিকরা প্রতিদিন ৩১০ টাকা, ৪৮০ টাকা ও ৫১০ টাকা হিসেবে মজুরী পায়। এভাবে ১৪ বছর এ প্রতিষ্ঠানে কোন স্থায়ী নিয়োগ না হওয়ায় দৈন্যতায় দিনপার করছিল মৌসুমী শ্রমিকরা।

কেরু অ্যান্ড কোম্পানীর দাপ্তরিক সূত্রে জানা যায়, মৌসুমী পদে জনবল প্রয়োজন ৪৫৭ জন, এখানে কর্মরত রয়েছে ৩০৭ জন। জনবল শুন্য রয়েছে ১৫০ জন। গত ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের ২৫২৫ তম বোর্ড সভায় মৌসুমী শ্রমিক পদ থেকে স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা অনুমোদীত হয়। এই নীতিমালা (৩৬.০৪.০০০০.০১৩.৭৬.০০১.২২.২৭৭) স্মারকে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত চিফ অফ পারসোনেল শাহরিনা তানাজের ২০২৪ সালের ১৪ মার্চ স্বাক্ষরিত অনুমোদিত নীতিমালাটির একটি পত্র কেরু অ্যান্ড কোম্পানী কর্তৃপক্ষের কাছে আসে। এই নীতিমালার আলোকে কর্তৃপক্ষ মৌসুমী দক্ষ শ্রমিক স্থায়ীকরণ

করার জন্য সদর দপ্তরে একটি পত্র পাঠায়।

এরপর ৩৬.০৪.০০০০.০১২.২৮.০১৯.১৮.৮২ স্মারকে গত ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ প্রধান কার্যালয়ের চিফ অফ পারসোনেল হামিদুল ইসলাম মৌসুমী জনবলকে স্থায়ীকরণের মাধ্যমে শুন্যপদ পুরনের জন্য অনুমোদন পূর্বক একটি পত্র পাঠায়। তাতে উল্লেখ করা হয় অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী মজুরী কমিশনে ৪৪টি ও পে-কমিশনের ৬৫টি পদসহ সর্বোমোট ১০৯টি স্থায়ী শুন্য পদ পূরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২০২৪ সালের ২ এপ্রিল আন্তঃবিভাগীয় মৌসুমী শ্রমিক দিয়ে স্থায়ী শুন্যপদ পুরনের জন্য একটি সমন্বয় বিজ্ঞপ্তী কেরু অ্যান্ড কোম্পানীর নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়। একই সালের ২৭ এপ্রিল কেরুর মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) সুমন কুমার সাহাকে আহবায়ক করে ৭ সদস্যের একটি নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়।

এ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, একই প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মুহাম্মদ আব্দুছ সাত্তার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ইউসুফ আলী, মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মোহাম্মদ আশরাফুল আলম ভূঁইয়া, মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারী) রাজিবুল হাসান, উপ-মহাব্যবস্থাপক (পারসোনেল) আল-আমিন ও ঢাকা সদর দপ্তরের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক (সংস্থাপন) সাইফুল আলম। বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুয়ায়ী আবেদনকারীদের আবেদনগুলো যাচাই-বাচাই করে প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। সদর দপ্তরের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ওই কমিটির সদস্যগণ যোগ্যতা মূল্যায়ন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া ২০২৪ সালের ১৩ ও ১৪ মে শেষ করে। এর মধ্যে ৫টি পদে আবেদনকারীরা তাদের যোগ্যতার মূল্যায়নে না টেকায় তাদের নিয়োগ দেয়া হয়নি।

এতদিন চাকরীর পর স্থায়ী নিয়োগপত্র পেয়ে কেরু অ্যান্ড কোম্পানীর গ্যারেজ সুপারভাইজার মিজানুর রহমান কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ২০০১ সাল থেকে তিনি মৌসুমী শ্রমিক হিসেবে চাকরী করে আসছেন। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকম সংসার চালিয়ে এসেছেন। চাকরির শেষ সময়ে তিনি স্থায়ী নিয়োগ পেয়ে খুশি। আর মাত্র সাড়ে ৭ মাস তার চাকরি আছে।

একই অনুভূতি জানান, আউট স্টেশন ক্যান গার্ড আবুল কাশেম। তিনি বলেন, চাকরির শেষ সময়ে স্থায়ী হতে পেরে ভালো লাগছে। তার আর সাড়ে তিন বছর চাকরি আছে।

একই পদের শহিদুল ইসলাম বলেন, ২৬ বছর পর পদোন্নতি পেয়ে চাকরি স্থায়ীকরণ হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ শ্রমিক-কর্মচারী। এতে ২০ হাজার পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে এই প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, ২০-২৫ বছর ধরে শ্রমিকরা চাকরি করে যাচ্ছে। তাদের কোন পদোন্নতি হয়না। তাই সবার প্রচেষ্টায় গত ১৫ মে ১০৪ জন শ্রমিককে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের অগ্রাধিকার দিয়ে এ স্থায়ীকরনের নিয়োগ শেষ করা হয়েছে।

শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ বলেন, স্থায়ী নিয়োগ সকল নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। এতে শ্রমিক-কর্মচারীরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট।

কেরু অ্যান্ড কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, প্রত্যকটি পদক্ষেপে নিয়ম মেনে এবং স্বচ্ছতার মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠানের ১০৯টি শুন্য পদের জন্য গত ১৩ ও ১৪ মে সকালে কেরুজ হাইস্কুলে শ্রমিক- কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রায় ২০০ শ্রমিক-কর্মচারী অংশ নেয়। পরে ওই দিনই যাচাই-বাচাই করে চুড়ান্তভাবে ১০৪ জনকে স্থায়ী করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ৫টি পদে আবেদনকারীরা তাদের যোগ্যতার মূল্যায়নে না টেকায় তাদের নিয়োগ দেয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, গত ১৫ মে সকালে স্থায়ীকরণ শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। এ দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান শেখ শোয়েবুল আলম নিয়োগ স্থগিতের আদেশ দিয়ে একটি পত্র পাঠান। অফিস চলাকালীন এ পত্রটি হাতে না পাওয়ায় এ আদেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ