ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

আত্মহত্যা সমাধান নয়

প্রকাশনার সময়: ০৯ মে ২০২৪, ০৯:২৩ | আপডেট: ০৯ মে ২০২৪, ০৯:৪১

চলতি বছরের এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। দীর্ঘ ১০ বছরের পরিশ্রম ও সাধনায় তিল তিল করে গড়ে তোলা হাজারো স্বপ্নের প্রত্যাশিত ফল। এ ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করে থাকে পরিবারের সবাই। কারণ এটার উপরই নির্ভর করে আগামীর সব আশা ও ভরসা। শুধু তাই নয়, প্রতিবেশীসহ আরও অনেকেই এই ফলের জন্য অপেক্ষা করেন। যেসব শিক্ষার্থীর আশানুরূপ ফলাফল আসবে, তাদের জন্য শুভেচ্ছা ও আগামীর সাফল্যের জন্য শুভকামনা। তবে সবার ফল তো আর ভালো হবে না। হয় না। হয়তো কারও সামান্য ভুলের কারণে ফলাফল এদিক সেদিক হতে পারে। এ ছাড়া কেউ কেউ আবার অকৃতকার্যও হবেন।

মনে রাখতে হবে, অকৃতকার্য মানে জীবনের পথ শেষ হয়ে যাওয়া নয়! এই ফলাফলের চেয়ে জীবনের মূল্য লাখ গুণ বেশি। বেঁচে থাকলে একদিন সাফল্য আসবেই। ব্যর্থতা মানে হেরে যাওয়া নয়, নতুন করে প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটা ধাপই হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্র। এতে জয়-পরাজয় দুটোই থাকবে। পরাজয় যদি না থাকত তাহলে জয়ের কোনো মূল্যই থাকত না।

পরাজয়ে যদি জীবনের সমাপ্তি হতো, তবে বিশ্বের এত বড় বড় অর্জন কখনো আসত না। জীবনের যেখানে ব্যর্থতা দিয়ে শেষ, সেই শেষ থেকেই নতুন করে আবার শুরু করতে হবে। কোনো পরিস্থিতিই এক জায়গায় স্থির থাকে না। আজকে খারাপ হয়েছে, তাতে কী? আগামী দিনে এর চেয়েও ভালো কিছু হবে। আর ব্যর্থতা থেকেই মানুষ সফলতার শিক্ষা অর্জন করে।

সমাজের মানুষ কে কী বলল বা কী ভাবল- এসব ভেবে নিজের জীবন নষ্ট করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। অকৃতকার্য হওয়া মানেই কী সম্মান সব শেষ? বন্ধুদের মাঝে কীভাবে মুখ দেখাব বা অন্যরা অনেক সমালোচনা করবে- এসব ভাবনা মোটেও করা যাবে না।

আমাদের সমাজে এক শ্রেণির লোক আছে, যারা নিজে ভালো কিছু করতে পারে না বরং অন্য কেউ চেষ্টা করে হেরে গেলেও, তাদের নিয়ে সমালোচনা করে। এদের কথাছ গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। বরং নিজেকে আগামীর জন্য তৈরী করার লক্ষ নিয়ে এগোতে হবে। ফ খারাপ হলেই নিজেকে নিঃশ্বেস করে দেয়ার সিদ্ধান্ত কখনই সঠিক নয়। আত্মহত্যা করলেই সব কিছু সমাধান হয় না।

পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য সফলতার চেয়ে পরিবারের মানুষটিকেই বেশি ভালোবাসে। যদি তুমি কখনো মা-বাবার চোখের আড়াল হও, তখন তারা কতটা চিন্তিত হয় তা কি তুমি জানো? সন্তান মা-বাবার কাছে কতটুকু মূল্যবান তা সন্তানবিহীন মা-বাবারাই ভালো জানেন। তুমি কি কখনো খেয়াল করেছ, সামান্য অসুস্থ হলেও তারা কতটুকু অস্থির হয়ে পড়েন? তুমি কবে সুস্থ হবে সেই পেরেশানি এবং তোমার সুস্থতার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে দিনরাত প্রার্থনা করেন। আর সেই তুমি সামান্য ফলাফল খারাপের জন্য আত্মহত্যা করতে চাও?

একবারও কি মা-বাবার কথা ভেবে দেখেছ? শুধু একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তোমার পরিবারে নেমে আসবে অন্ধকার, ধূলিকণার মতো উড়ে যাবে শান্তি নামের শব্দটি। পরিবারের সবার ভবিষ্যতের সুখ-স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যাবে। তারা কখনো তোমাকে ভুলতে পারবে না।

আমরা সবাই জানি, ব্যর্থতার পরে ইতিহাসের পাতায় সুনামের সঙ্গে সাফল্য অর্জন করেছেন অনেকেই। রাজা রবার্ট ব্রুস যুদ্ধে বারবার পরাজিত হওয়ার পর সপ্তম বারের চেষ্টায় জয়লাভ করেন। আব্রাহাম লিংকন অনেকবার নির্বাচনে হেরে গিয়ে শেষ বয়সে নির্বাচিত হন, কবি শেখ সাদি- যিনি জ্ঞানের মূল্যবোধে সম্মানিত হয়েছেন। টমাস আলভা এডিসন ছিল এক মেধাহীন শিশু, যে কিনা তার মায়ের অনুপ্রেরণায় হয়ে ওঠেন যুগের সেরা মেধাবী। বাস্কেট বলের খেলোয়াড় হিসেবে জর্ডানের নাম নোটিশ বোর্ডে ছিল না। মায়ের অনুপ্রেণায় দিনরাত প্র্যাকটিস শুরু করেন তিনি। অবশেষে ‘প্রতিভাহীন’ জর্ডানই একপর্যায়ে হয়ে ওঠেন সর্বকালের সেরা বাস্কেটবল খেলোয়াড়। আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কঠিন দারিদ্র্যের মাঝে বড় হওয়ার কারণে লেখাপড়ার তেমন সুযোগ পাননি। তবুও মেধায় সর্বোচ্চ ও জাতীয় কবির আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন তিনি।

এ ছাড়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) সত্যের আলো ও ধর্ম প্রচার করতে বারবার অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবুও পিছপা না হয়ে প্রত্যাশা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন এবং অবশেষে সাফল্য অর্জন করেছেন। তাই লক্ষ স্থির করে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। হেরে যাওয়ার আগে হার মানা যাবে না।

কবিতায় আছে- “পারিব না’- একথাটি বলিও না আর,/কেন পারিবে না তাহা ভাবো একবার;/পাঁচজনে পারে যাহা,/তুমিও পারিবে তাহা,/পারো কি না পারো করো যতন আবার/একবার না পারিলে দেখো শতবার”...

ব্যর্থতার ব্যথায় নিজেকে শেষ না করে নতুন করে আবারও চেষ্টা করতে হবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে সাফল্যের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে চলতে হবে। পরীক্ষায় ফলাফল কারও ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না। সে-ই তো সবচেয়ে মেধাবী, যে সব পরিস্থিতি ধৈর্য্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে সাফল্য অর্জন করে।

মহান সৃষ্টিকর্তা সুন্দর জীবন দিয়েছেন, তাই আমরা নিজের জীবনকে যথাযথ মূল্যায়ন করব। প্রত্যেক জীবনই মহামূল্যবান। সবচেয়ে বড় কথা আদর্শবান মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি, তবেই দেশ ও জাতির কল্যাণ আসবে।

লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ