ঢাকা, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ৪ জিলকদ ১৪৪৫

এক বিলেই ২০০ পুকুর, ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

প্রকাশনার সময়: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:১৭

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এতে দিনদিন কমছে চাষাবাদের জমি। ফলে হ্রাস পাচ্ছে ফসল উৎপাদন। অন্যদিকে একের পর এক গড়ে ওঠা ইটভাটা গ্রাস করে নিয়েছে ফসলি জমি। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বৈধ-অবৈধ ইটভাটাগুলো এখন কৃষকদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চলতি মৌসুমে ইট ভাটার আশপাশে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। মাটি খেঁকোদের খপ্পরে পড়ে জমির টপ সয়েল যাচ্ছে ইটভাটায়, পুড়ছে আগুনে। ফলে উজাড় হচ্ছে কৃষি জমি। সম্প্রতি ভোলাকোট ইউনিয়নের একটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাটি কাটার এ কর্মযজ্ঞ। সব দলের ভূমি খেকোদের আঁতাতে চলছে মাটি কাটা।

রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামের আমির হোসেন ডিপজলের ইটভাটার পিছনে দেহলা ও সমেষপুর কৃষি জমির চিত্র এটি। পুরো ফসলি জমির মাঠজুড়ে বিশালাকৃতির পুকুরে সয়লাভ। এসব পুকুরের কারণে কোনো ধরনের ফসল ফলানো স্থানীয় কৃষকদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ওই মাঠে জলাবদ্ধতায় চাষাবাদ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে ফসলি জমির শতভাগ অস্তিত্ব হারানোর শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ও সুশীল সমাজের লোকজন।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে,চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ওই বিলে ৩০টির বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে। বিগত ৪ বছর যাবত মাটি তুলে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। এতে একদিকে কমছে জমির উর্বরা শক্তি অন্যদিকে ফসলি জমিতে শত শত পুকুরের কারণে ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত তারা। এমনভাবে খনন করে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে জমি থেকে আগামী ১শ বছরেও ওই পুকুর ভরাট করা সম্ভব নয়।

এবিষয়ে এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক ও এলাকাবাসী কয়েকবার মানববন্ধন, প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ, গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্বারকলিপি প্রদান, সাংবাদিক সম্মেলন করে আসলেও বন্ধ হয়নি মাটি কাটা। প্রশাসন বা কোথাও ওই বিষয় সমাধানে বা কোনো অভিযোগ দিলে কৃষি জমির টপ সয়েল কাটা, পুকুর খনন করা এবং অবৈধ ট্রলি চলাচল যেন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সম্প্রতি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ২০ থেকে ২৫টি অবৈধ ট্রলি ও ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে আল মদিনা ও জেবিএম ইটভাটায়।

আবদুস সালাম, কালা মিয়া, রাজা মিয়াসহ অনেকেই জানান, ভোলাকোট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বশির আহম্মদ মানিক, আওয়ামী লীগ নেতা দুলাল পাটোয়ারী, ইটভাটা মালিক আমির হোসেন ডিপজল, জাহাঙ্গীর কোম্পানী, সিরাজ মিয়া, মিল্লাত পাটোয়ারীসহ মাটি ব্যবসায়ী এই চক্রটি জমি কিনে নিয়ে ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীর করে মাটি নিয়ে যায়।

এতে পাশের জমি ভেঙে পড়ে পুকুরে পতিত হয়। পরে জমির মালিক বাধ্য হয়ে মাটি খেকোদের কাছে অল্প দামে জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার অনেক কৃষককে জমির মাটি বিক্রিতেও বাধ্য করা হয় কখনো কখনো। নামমাত্র মূল্যে ২ বা ৩ ফুট কাটার কথা বলা হলেও অল্প কদিনেই ভেকু মেশিন দিয়ে কোথাও কোথাও তা ৪০/৫০ ফুট গভীর করে মাটি নিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। প্রতিবাদ করলেও বিভিন্নভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয় জমির মালিকদের।

সিরাজ নামের একজন কৃষক জানান, সমস্ত মাঠকে যেভাবে ধ্বংস করে ফেলছে, আমরা কৃষক কিভাবে চাষাবাদ করবো, কি খাবো।

শাহ আলম নামের আরেক কৃষক জানান, পুরো মাঠজুড়ে পুকুর। পুকুরের কারণে নিজের জমিতেই যাওয়া যায় না। কিছু কিছু জমির ধান পেঁকে আছে অথচ ধান কেটে কিভাবে আনবো-নৌকায় করেও আনা সম্ভব নয়। খুব বেশি সময় নেই যে চালের কেজি ২শ টাকা হবে।

ভোলাকোট গ্রামের দেহলা, শাহারপাড়া, শাকতলা ও ভাদুর ইউনিয়নের সমেষপুর ও সিরুন্দিসহ ৫ গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক যুগ যুগ ধরে এ মাঠে চাষাবাদ করে জীবিকা-নির্বাহ করে আসছে। কয়েক বছর আগে থেকেই এ মাঠটি মাটি খেকোদের কুনজর পড়েছে। এখন চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বেশিরভাগ কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশা জড়িত হতে বাধ্য হচ্ছেন।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী কৃষিজমির টপসয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষিজমির মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। তারপরও ক্ষমতালোভীরা এ ধরনের কাজ অব্যাহত রেখেছে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ