ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৮ জিলকদ ১৪৪৫

তাহিরপুরে শুরু হলো আধ্যাত্মিক দুই সাধকের মিলন মেলা

প্রকাশনার সময়: ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:০৮ | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:১১

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তে শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন পণাণতীর্থ মহাবারুণী স্নান ও শাহ্ আরেফিন (র.) ওরস মাহফিল। ৭শ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী এ দুটি অনুষ্ঠান ঘিরে সনাতন ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীর কয়েক লাখ ভক্ত-আশেকান, দশনার্থী ও পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটে অদ্বৈত্য আর্চা মহাপ্রভুর রাজারগাঁও নবগ্রাম আখড়াবাড়ী সংলগ্ন ২৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সীমান্ত নদী যাদুকাটার দুই তীরবর্তী পণাতীর্থ ধামে ও হযরত শাহ আরেফিন (রাঃ) মোকাম সীমান্তবর্তী লাউড়েগড় এলাকায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শনিবার থেকে তিন দিনব্যাপী লাউড়েরগড় এলাকায় শাহ আরেফিন (রাঃ) এর মোকামে অনুষ্ঠিত হবে বার্ষিক ওরস মোবারক। পরের দিন শনিবার থেকে যাদুকাটা নদী সংলগ্ন রাজারগাঁও এলাকায় মহাবিষ্ণুর অবতার অদ্বৈত জন্মধামে পণাতীর্থ মহাবারুণী স্নান ও মেলা বসবে। দুই ধর্মের এই দুটি উৎসবকে ঘিরে সপ্তাহখানেক পূর্ব থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ভক্ত-আশেকানদের আগমনে পুরো এলাকা সম্প্রীতির এক মেলবন্ধনে পরিণত হয়। দুই ধর্মের ভক্ত আশেকান ও পূণ্যার্থীরা গান বাজনা আর আরতিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেতে উঠে রাতদিন। তবে এ বছর পবিত্র রমজান মাস থাকায় শাহ আরেফিন মোকামে কাফেলাগুলোতে মাইক, সাউন্ড সিস্টেম ও গান-বাজনাতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়াও রমজানের পবিত্রতা বজায় রেখে অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পণাতীর্থ গঙ্গাস্নান ও ওরস উদযাপন উপলক্ষে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা প্রশাসন অনুষ্ঠান দুটির উদযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ও উদযাপনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে একাধিক বৈঠকও করেছে। সভায় আগত পুণ্যার্থী ও ভক্ত-আশেকানদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত, উৎসবস্থল ঘিরে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং, যানবাহন ভাড়া ও যাতায়াত ব্যবস্থা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শাহ আরেফিন (রাঃ) মোকাম ও পণাতীর্থ ধামে আসা যাওয়ার জন্য পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের জন্য ওয়াইন বাই রাস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সুনামগঞ্জ আব্দুর জহুর সেতু থেকে দুই উৎসবস্থল পর্যন্ত পুরো রাস্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশের টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এবছর মহাবারুণী স্নান ও মেলার মুখ্য সময় ২৩ চৈত্র ১৪৩০ বাংলা, ৬ এপ্রিল শনিবার দিবাগত সকল ৭টা ৫২ মিনিট ১৬ সেকেন্ড গতে রাত ৫টা ২৮ মিনিট ২৯ সেকেন্ড মধ্যে মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী সকাল ৭টা ৫২ মিনিট ১৬ সেকেন্ড গতে দুপুর ১টা ৪৯ মিনিট ১৪ সেকেন্ড এর মধ্যে। মহাবারুণী শতভিষা নক্ষত্র দিবা ১টা ৪৯ মিনিট ২৪ সেকেন্ড পর্যন্ত।

এদিকে প্রতি বছর পণাতীর্থ মহা-বারুনী গঙ্গাস্নানের তারিখের সাথে মিল রেখে উপজেলার সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড় এলাকায় হযরত শাহজালাল (র.) এর ৩৬০ আউলিয়া অন্যতম সঙ্গী হযরত শাহ আরেফিন (র.) এর বার্ষিক ওরস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওরস উপলক্ষে সেখানেও মেলা বসে।

স্থানীয়দের মতে, হযরত শাহ আরেফিন (র.) এর মোকাম ভারত সীমান্তের ওপারে এক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত হলেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অগণিত মুসলমান নর-নারী ওরসে শরিক হন এবং দূর থেকেই এই দরবেশের মোকাম জিয়ারত করেন। ওরসে মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, পাহাড়ি ও বাঙালি ভক্ত-আশেকান তার স্মৃতিবিজড়িত লাউড়েরগড় এলাকায় সমবেত হন।

শ্রী অদ্বৈত জন্মধাম কেন্দ্রীয় কমিটির তাহিরপুর উপজেলা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য গণেশ তালুকদার বলেন, গঙ্গাস্নান ও মহা-বারুনী মেলা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। স্নান ও মেলা শেষে পুণ্যার্থীরা যেন নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন এ বিষয়টি এবারও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

শাহ্ আরেফিন (র.) ওরস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আলম সাব্বির বলেন, শাহ্ আরেফিন (র.) ওরস ও মেলা সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চোধুরী বাবুল বলেন, জনস্বার্থ এবং জনসেবায় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের সকলের সহযোগিতায় সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দুই উৎসব চলছে এবং পুণ্যার্থীদের সেবায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

নয়া শতব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ