ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

বন্ধুকে নিয়ে বোনের ঘরে ডাকাতি, অতঃপর...

প্রকাশনার সময়: ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ২০:৪২

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে আপন বোনের বাসায় বন্ধুকে নিয়ে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন ভাই। বোন চিৎকার করলে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এ ঘটনায় বন্ধুসহ আপন ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুর পিবিআই।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এরআগে, মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের পূর্ব ভিটিপাড়া গ্রামের দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী মো. মোশারফ হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম শিমু (৩৯) মরদেহ নিজ বসত ঘরের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়।

এঘটনায় নিহতের বাবা মো. সিরাজ উদ্দিন বেপারী কাপাসিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে শাহনাজ বেগম শিমুর আপন ছোট ভাই কাপাসিয়ার কুলগঙ্গা গ্রামের মো. সিরাজ উদ্দিন বেপারীর ছেলে মো. কামরুজ্জামান রুবেল (৩৬) ও শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী থানার মামদাবাড়ি গ্রামের আস্কর আলীর ছেলে মো. মিনাল ওরফে মিষ্টারকে (২১) গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।

গাজীপুর পিবিআই এর উপ-পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. সালেহ্ ইমরান বিপিএম বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পরপরই কাপাসিয়া থানা পুলিশের পাশাপাশি গাজীপুর পিবিআই’র একাধিক টিম মামলাটির রহস্য উদঘাটনে ছায়া তদন্তে নামে। গোয়েন্দা তথ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত মূল আসামি মো.কামরুজ্জামান রুবেলকে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে গাজীপুর মহানগরের গাছা থানা এলাকা হতে ও পরে তার দেয়া তথ্য মতে একই দিন মো. মিনাল ওরফে মিষ্টারকে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে একই দিন গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জানায়, নিহত শিমুর আপন ছোট ভাই রুবেল গাজীপুরে একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করতেন। পাঁচ মাস আগে রুবেল ওই হোটেলের চাকরি ছেড়ে দিলে অর্থনৈতিক সংকটে পরে, অনেকের কাছ থেকে টাকা ঋণ করে।

ঋণে জর্জরিত রুবেল ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে বোন শিমুর বাসায় চুরির পরিকল্পনা করে এবং দুইদিন আগে অপর আসামি মো. মিনাল ওরফে মিষ্টারের সাথে যোগাযোগ করে। ঘটনার দিন বিকেলে মিষ্টার জয়দেবপুর রেল স্টেশনে আসেন। এসময় রুবেল ও মিনাল একটি ব্যাগের মধ্যে একটি সুইচ গিয়ার চাকু, প্লাস, গামছা, কেচি নিয়ে ট্রেনে করে শ্রীপুর স্টেশনে নামে। সেখান থেকে অটোরিকশা ভাড়া করে বরমী পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান। সেখানে কিছু সময় অপেক্ষা করে অটোরিকশা দিয়ে রাত ৮টার দিকে তারা সেখান থেকে বরামা ব্রিজ এলাকায় যান, বরামা ব্রিজ পাড় হয়ে পায়ে হেঁটে তারা ভিকটিম শাহনাজ আক্তার শিমুর বাড়ির সামনে আখ খেতে লুকান। রাত ১২টার দিকে রুবেল-মিস্টার শিমুর বাড়ির সীমানা প্রাচীরের উপর দিয়ে বাসার ছাদে উঠে। ছাদ থেকে রান্না ঘরের সিমেন্টের টিন খুলে রান্না ঘরে প্রবেশের চেষ্টা করে। রান্না ঘর থেকে দরজা খুলে বাইরে এসে বাড়ির পেছনের খোলা জানালায় বাঁশের লাঠি দিয়ে ভেতরের সিটকানি খুলে ঘরের ভেতরে ঢুকে।

এসময় তাদের সাড়াশব্দ পেয়ে ঘুম ভাঙ্গলে শিমু চিৎকার শুরু করে। মিনাল সুইচ গিয়ার-ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখায়, কিন্তু শিমু চিৎকার না থামালে গামছা দিয়ে মিশুর মুখ চেপে ধরে এবং রুবেল শিমুর হাত দঁড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এসময় রুবেলের দুই হাতে শিমুর হাতের নখের আচড় লাগে। রুবেলকে যাতে চিনতে না পারে, সেজন্য শিমুর চোখ, মুখ, গামছা দিয়ে বেঁধে ফেললে শিমুর মিনালের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে। আসামি মিষ্টার শিমুর মুখে আঘাত করে এবং শিমুর বুকের উপর বসে গলায় চেপে ধরে। এরপর আসামি রুবেল টেবিলের ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে স্বর্ণালংকার ও তিন হাজার টাকা, শিমুর মোবাইল ফোন নিয়ে রুবেল ও মিষ্টার ভিকটিম শিমুর হাত ও পা বেঁধে বাড়ির পকেট গেট দিয়ে বের হয়ে চলে যায়। পরদিন সকালে রুবেল চাকু, প্লাস ও মোবাইল সেট ভেঙ্গে ঝাজর এলাকায় ব্রিজের নিচে খালের পানিতে ফেলে দেয় এবং লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার দেড় লাখ টাকা বিক্রি করে। রুবেলকে গ্রেপ্তারের পর স্বর্ণ বিক্রির ৫৭ হাজার টাকা উদ্ধার ও তার দেয়া তথ্যমতে গাজীপুর মহানগরের ঝাজর কবরস্থান ব্রিজের নীচে খাল থেকে প্লাস, সুইচ গিয়ার চাকু ও চোরাইকৃত মোবাইল সেটের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়েছে।

গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম বলেন, নিহতের ভাই রুবেল ও মিষ্টার স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। স্বর্ণ বিক্রির অবশিষ্ট টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধারে অভিযান চলছে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ