রাজশাহী বিভাগে সরকারি ‘কনডম’ বিতরণ কর্মসূচি স্থবির পড়েছে। এতে মার্কেটে দ্বিগুণ হারে বেড়েছে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর দাম। ওষুধের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দাম। এছাড়া অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অস্থিতিশীল জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর বাজার।

হঠাৎ করেই রাজশাহী বিভাগে সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নামমাত্র মূল্যের বিনিময়ে ‘কনডম’ বিতরণ কর্মসূচি স্থবির হয়ে পড়েছে। গত জানুয়ারি থেকে বন্ধ হয়ে গেছে সরবরাহ। এ সুযোগে কোম্পানিগুলো কনডমের দাম বাড়িয়েছে দ্বিগুণের বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত জানুয়ারি মাস থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর অন্যতম উপকরণ ‘কনডম’ ও ‘স্বস্থি’ নামক ইনজেকশনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পরপরই মার্কেটে কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়েছে দ্বিগুণের বেশি।

রাজশাহীর সরকারি হাসপাতাল ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারি ক্লিনিকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত স্টক থাকতেই প্রতিবার কনডম ও স্বস্থি ইনজেকশনসহ অন্যান্য জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণের সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এবার হঠাৎ করেই জানুয়ারি মাস থেকে সরবরাহ বন্ধ। এতে সেবা নিতে এসে খালি হাতেই ফিরে যাচ্ছে মানুষ। জন্মনিয়ন্ত্রণে যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগরীর একটি সরকারি হাসপাতালে কনডম কিনতে আসা রায়হান আলী বলেন, সরকারি হাসপাতালে নামমাত্র মূল্যে কনডম পাওয়া যায়। এটার কোয়ালিটিও ভালো। কিন্তু গত দুই মাসে চারবার এসে খালি হাতেই ফিরে গেছি। মার্কেটেও দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। গোপনীয় বিষয় হওয়ায় এটা নিয়ে কেউ কথা বলে না। এই সুযোগে কোম্পানিগুলো যা ইচ্ছে তাই করছে।

সরকারি একটি হাসপাতালের দায়িত্বরত পরিবার পরিকল্পনা অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারি কনডমের ও স্বস্থি ইনজেকশনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই এগুলোর সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরাও বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কিন্তু এর কোনো কারণ তাদের জানানো হয়নি। কবে নাগাদ সরবরাহ আসবে সে বিষয়েও কিছু বলা হচ্ছে না।

এদিকে নগরীর ফার্মেসিগুলো ঘুরে দেখা যায়, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও এসএমসির প্যানথার কনডম বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকা প্যাকেট (তিন পিস)। যেটা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা। এছাড়া ক্লাসিক ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, ইউ অ্যান্ড মি ৪৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা, সেনশেসন ৩৫ টাকা থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্য ব্রান্ডের কনডমের দামও দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা। এছাড়া কেউ কেউ লিখিত মূল্যের ওপরে ইচ্ছেমতো দাম সম্বলিত স্টিকার লাগিয়েও বিক্রি করছেন।

মো. তানভির আলম নামে নগরীর একটি ফার্মেসির দোকানি বলেন, কনডমের দাম হঠাৎ করেই বেড়েছে। কি কারণে বেড়েছে তা জানা নেই। হয়তো অন্য জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, একারণেই। আর এই দাম বৃদ্ধিতে বিক্রিও কিছুটা কমেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি কনডমের সরবরাহ বন্ধ হয়েছে কি কারণে, তা জানা নেই। তবে বাজারে এতো দাম বৃদ্ধিরও কোনো যৌক্তিকতা নেই। একটা কনডমের উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৫ টাকার মধ্যে। কিন্তু বিভিন্ন নামে বাজারে এসে তা ১০ থেকে ২৫ টাকা হয়ে যাওয়া কাম্য নয়।

রাজশাহী বিভাগীয় পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের পরিচালক মো. এনামুল হক এ প্রসঙ্গে জানান, জানুয়ারি পর্যন্ত কনডম ও স্বস্থি ইনজেকশনের সরবরাহ ছিলো। এরপর কি কারণে সরকারি কনডমের বন্ধ হয়েছে জানা নেই। তবে অলরেডি বগুড়াসহ বেশকিছু জায়গায় কনডম চলে এসেছে। রাজশাহীতেও কয়েকদিনের মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আর মার্কেটের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি জানা নেই।

নয়াশতাব্দী/এনএস