সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বন্ধের দিন উধাও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিত্যক্ত ভবন!

প্রকাশনার সময়: ৩১ মার্চ ২০২৪, ১৮:১১

জামালপুরে বন্ধের দিনে উধাও হয়ে গেছে কেন্দুয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের একটি পরিত্যক্ত ভবন। কে বা কারা এই ভবন ভেঙে নিয়ে গেছে তা জানে না কেউই। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম খানের নির্দেশে ভাঙা হয়েছে এই ভবন।

জামালপুর কেন্দুয়া ইউনিয়নে পরিষদের বিপরীত পাশে কেন্দুয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অবস্থান। এমন একটি জনবহুল জায়গা থেকে শুক্রবার ২৯ মার্চ দুপুরে উধাও হয়ে গেছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিত্যক্ত একটি ভবন। আর কে বা কারা ভবন ভেঙেছে তা জানে না স্বাস্থ্য বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা।

জানা যায়, শত বছর বয়সী ২৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের এই ভবন ব্যবহৃত হয় দাতব্য চিকিৎসালয় হিসেবে। আর ভবনটিতে ছিলো তিনটি কক্ষ।

রোববার (৩১মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান গেইটের পরে হাতের বাম ও ডান পাশে পড়ে রয়েছে কিছু ইটসহ ভবনের ভাঙা কিছু অংশ। এ ছাড়া কেন্দুয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রাঙ্গনে দেখা গেছে, সেই ভবনের কিছু রড ও একটি ভেকু গাড়ি। কে বা কারা কি কারণে এই ভবন ভেঙেছে এমন প্রশ্নের উত্তর জানা নেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীদের কাছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. রিপন রায় বলেন, বৃহস্পতিবার ৩০ মার্চ অফিস শেষ করে চলে যায়। এরপর শনিবার অফিসে আসলে দেখি যে পরিত্যক্ত ভবনটি কে বা কারা ভেঙে নিয়ে গেছে। পরে আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানায় ও জামালপুর সদর থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করি।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশে বসবাসকারী খালেদা বেগম বলেন-‘আমরা হাসপাতালের পাশে থাকি। শুক্রবার চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খানের লোকজন এসে বেলা ১১ টার দিকে ভবন ভাঙা শুরু করে। রাত একটা পর্যন্ত ভবন ভাঙার কাজ চলে। আমার ছেলে জিজ্ঞেস করতে গেছে। তাকে আরো মারধর করতে আসছিলো তারা।’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহিন বলেন-‘চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খানের নির্দেশে তার ঘনিষ্ঠ সহকারী সাজু বুলডুজার ও ভেকু দিয়ে ভবনটি ভাঙার কাজ করে। আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাইলেও তারা তা দেখায়নি।’

এবিষয়ে কেন্দুয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলামের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন-‘এই ভবনটি ভাঙাতে আমরা সবাই খুশি। পরিত্যক্ত ভবন ছিলো। শুক্রবার স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এটি ভাঙা হয়। চেয়ারম্যান সাহেবের নির্দেশে লোকজন এসে এসব ভাঙা-চুড়া করে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কেন্দুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম খান বলেন-‘এই ভবনটি এই এলাকার মাদক ব্যবসার একটি কারখানা ছিলো। তাই ভবনটি সরানোর জন্য আমি স্বাস্থ্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসনসহ সদর এমপি মহোদয়কে কয়েকবার অবগত করেছিলাম। কে এই ভবন ভেঙেছে তা আমরা জানি না। ভবন ভাঙার পর আমি ভবনের ভাঙা-চুড়ার অবশিষ্ট অংশটুকুর নিরাপত্তার জন্য বাজারের নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করেছি। আমার পরিষদের সামনে হলেও আমি জানি না কে ভেঙেছে। ’

জামালপুর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উত্তম কুমার সরকার বলেন-‘রোববার দুপুরের দিকে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এই বিষয়ে জামালপুর সদর থানায় সাধারন ডায়েরি করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর ভবনের যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, তার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

এবিষয়ে জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মহব্বত কবির বলেন-‘স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ