ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

খরচ বাড়ায় মসজিদে ইফতার করছেন মেসের শিক্ষার্থীরা

প্রকাশনার সময়: ২১ মার্চ ২০২৪, ২১:২৮

নড়াইল শহরে অবস্থিত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন কলেজ নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ। এ ছাড়াও রয়েছে আব্দুল হাই সিটি কলেজ, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেখানে পড়াশোনা করতে জেলার বিভিন্ন গ্রামসহ আশপাশের জেলা থেকে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসেন। দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের অনেককেই থাকতে হয় মেসে।

মেসের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। ফলে তাদের চলতে হয় বাড়ি থেকে পাঠানো নির্দিষ্ট কিছু টাকা দিয়ে। কেউ কেউ চলেন টিউশনির অর্থে। যা দিয়ে এমনিতেই পড়াশোনা, মেস ভাড়া, খাবার বিলসহ অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে হিমশিত খেতে হয়। তারপর আবার রমজানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে আরও বেশি দিশেহারা হয়ে পড়েছে তারা। সারাদিন রোজা থেকেও মেসে ইফতারির আয়োজন করতে পারছেন না। সেহেরিতে একটু ভালো খেলে রাতে খাবারের মান কমিয়ে আনতে হচ্ছে। দিন দিন টাকা বেশি দিলেও খাবারের মান একই থাকছে। যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যে।

বাধাঘাট এলাকার মৌসুমী মেসের আব্দুল বারী বলেন, বাড়ি থেকে মাসিক যে খরচ দেয় তাতে মাস চলে না, জিনিসের দাম বেশি হওয়ার কারণে। তাই ইফতারি কেনা সম্ভব হয় না। তাই মেসের পাশের মসজিদে ইফতার করি।

নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আলামিন হোসেন খুলনার কয়রা থেকে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে নড়াইলে এসেছেন। থাকছেন কলেজের পাশের সাত্তার মেসে। তিনি জানান, জিনিসপত্রের অনেক বেশি দাম। আগে যে দাম ছিল রমজান মাসে তা অনেক বেশি বেড়েছে। যা কেনা আমাদের জন্য সম্ভব হচ্ছে না। সারাদিন রোজা থেকেও মেসে ইফতারির আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। পাশে যে মসজিদ আছে সেখানেই ইফতার করতে হচ্ছে। রোজা থাকার জন্য সেহেরিতে যে একটু ভালো খাব, ওই সময় ভালো খেতে গেলে আবার রাতের খাবারে ভালো খাওয়া হচ্ছে না। যা আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলছে।

মো. মান্না শিকদার নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, রমজান মাসে সবকিছুর দাম বেড়েছে। ইফতার তো মেসে করতেই পারছি না। আর সেহরিতে যদি আমরা ভালো কোন কিছু খায়, তাহলে ইফতারের পরে এখানে যে মিল (রাতের খাবার) চলে ওইখানে আবার নরমাল করে দিতে হয়। আর যদি দুই বেলা ভালো খেত হয় অনেক বেশি টাকার পরিমাণ এসে যায়। আমাদের টাকার যে বাজেট ওর ভিতর হয় না।

যশোর থেকে পড়তে আসা ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বাঁধন জানান, গত বছর বাজারে যে খরচটা হত সেই তুলনায় এখন সবারই টাকার অঙ্ক বাড়াতে হয়েছে। টাকার পরিমাণ বাড়লেও খাবারে মান একই আছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি আমাদের ওপর প্রভাব পড়েছে। আমাদের সেহরি-ইফতারে খাওয়া-দাওয়ার মান কমে এসেছে।

শিক্ষার্থীদের এমন দূরাবস্থা নিয়ে কথা হয় সমাজকর্মী ও কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নড়াইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী হাফিজুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, রমজানে যেসব পণ্যের ব্যবহার করি তার কোনটারই দেশে অভাব নেই। তারপরও ব্যবসায়ীরা দামের হেরফের করছে। প্রত্যেকবারই রমজান আসলে ব্যবসায়ীরা এমন করে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চেষ্টা করছে, আমরাও মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। তবে ছাত্রদের যে অবস্থার কথা শুনলাম, সেখানে প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা পরিদর্শন করে সম্ভব হলে তাদের পাশে দাঁড়ানো।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ