ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

ভুল অপারেশনে কিশোরীর মৃত্যু, পরিবারকে ‘ম্যানেজ’!

প্রকাশনার সময়: ২১ মার্চ ২০২৪, ১৫:৪৫

রাজশাহীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গলার টিউমার অপারেশন করাতে গিয়ে মোহনা খাতুন (১৭) নামে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতালটির নাম আল-আমিন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বেসরকারি এই হাসপাতালটি রাজশাহী নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে অবস্থিত।

বুধবার (২০ মার্চ) সকালে গলার টিউমার অপারেশন করার জন্য আল-আমিন হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) ভোরে তিনি মারা যান।

মৃত মোহনা খাতুন বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের নটিকা গ্রামের মহিরুল ইসলামের কিশোরী মেয়ে।

মোহনার স্বজনরা জানিয়েছেন, বুধবার সকালে নগরীর আল-আমিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুরে তার গলার টিউমারের অপারেশন করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাতে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কিশোরী মোহনাকে রাত ১১টার দিকে নিয়ে আসা হয়। প্রথমে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

একটি সূত্র বলছে, কিশোরীর মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে কিশোরীর পরিবারকে ‘ম্যানেজ’ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এজন্য পরিবার কোনো অভিযোগ না করে বিষয়টি চেপে গেছে। আল-আমিন হাসপাতাল থেকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর পর মরদেহ তাদের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সূত্রটির দাবি, গলার টিউমার অপারেশন করতে গিয়ে শ্বাসনালী কেটে ফেলেন চিকিৎসকরা। আর এতেই কিশোরী মোহনার মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে মোহনার মামা মনিরুল ইসলাম জানান, টিউমার অপারেশন করার জন্য তার ভাগ্নিকে আল-আমিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অপারেশন করা হয়। অপারেশন শেষ হলে পোস্ট অপারেটিভ রুমে রাখা হয় তাকে। সেখানে তার হার্টবিট কমতে থাকে। একই সঙ্গে শ্বাস-প্রশাসও কমতে শুরু করে। বিষয়টি সেখানকার ডাক্তাদের জানালে তারা রামেক হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। তবে মৃত্যুর বিষয়ে কোনো অভিযোগ করবেন না বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমার ভাগ্নির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হয়েছে। মৃত্যু আছে বলেই সে চলে গেছে। এ নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। তার মরদেহ গ্রামে নিয়ে আসা হয়েছে।

এদিকে, রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘দফরফা’ হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো কিছুই হয়নি।’

কোন ডাক্তারের তত্বাবধানে অপারেশন করা হয়েছে জানতে চাইলেও, তিনি এড়িয়ে যান।

এমনকি আল-আমিন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছে না। এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি না তারা।

হাসপাতালটিতে দেখা গেছে, শয্যা আছে এসি ও ননএসিসহ ২০টি। সাতজন ডাক্তার সেখানে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। আগে এই হাসপাতালের যায়গায় একটি রেস্টুরেন্ট ছিল।

রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হক বলেন, এক কিশোরী মারা যাওয়ার কথা শুনেছি। ভুল চিকিৎসায় কি-না, তা জানি না। থানায় কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে।

রাজশাহী সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক জানান, ভুল চিকিৎসা হলে অবশ্যই সে হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বিষয়টি দেখবো। এ নিয়ে তদন্ত করা হবে।

নয়াশতাব্দী/এনএস/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ