ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

রাজকীয় আপ্যায়ন, অতিথি এক ঝাঁক পথ শিশু

প্রকাশনার সময়: ১৭ মার্চ ২০২৪, ১৭:৩৯

খাবারের টেবিলে থালায় থালায় সাজানো নানা প্রকার ফলের সমাহার। এর মধ্যে রয়েছে- খেঁজুর, আঙুর, বেদানা, কমলা, আপেল, মাল্টা, কলা, তরমুজ ও বাঙ্গী। গ্লাসে রাখা ফলের জুস ও আখের গুরের শরবত। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সু-ব‍্যবস্থা। এই শেষ নয়, পাশে রাখা পদ্মা নদীর ছোট মাছ দিয়ে উস্তা ভাজি, লাল শাঁক, ইলিশ মাছ ভাজা ও বড় রুই মাছ ভুনা। সাথে মুরগির মাংস এবং চিকন চালের ভাত। সাথে রয়েছে মুরগির মাংসের খিচুরি।

খাবারের তালিকার যেন শেষ নেই। তালিকা দেখলে মনে হবে রাজকীয় কোনো আপ্যায়ন! বিশেষ এই আয়োজনে অতিথি হবে উপজেলার বড় কোনো অফিসার, না হয় কোনো জনপ্রতিনিধিগণ। না, এমন কেউ অতিথির তালিকায় নেই। অতিথির তালিকায় রয়েছে উপজেলার এক ঝাঁক পথ শিশু। যাদের অনেকের বাবা নেই, মা নেই আবার কারো বাবা, মা কেউই নেই। আশ্রয় হিসেবে রয়েছে সামাজিক সংগঠন ‘পায়াক্ট বাংলাদেশ’।

সরকারি-বেসরকারি কোনো অর্থে নয় ‘পায়াক্ট বাংলাদেশ’ নামের এই সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আবু ইউসুফ চৌধুরী। তিনি এই পথ শিশুদের থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, পড়ালেখার খরচ বহন করছেন টানা ২৪ বছর। এই শিশুরা আজ বিশেষ অতিথি ছিলেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাস ভবনে। জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র-স্নিগ্ধা রায় দম্পতির আমন্ত্রণে পথশিশুরা এসেছিলেন রাজকীয় মেহমান খানায়।

অতিথি বাসায় আসবেন। তাই সকালে নিজ হাতে বাজার করেছেন স্নিগ্ধা রায়। একজন মৌলভীর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ইফতারির আয়োজন করেছেন। আবার এতোগুলো বাবা-মা হারা শিশু। কে কি পছন্দ করেন, কোন খাবার পছন্দ করেন। না, জানার কারণে সব কিছু পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবারের তালিকায় রাখা হয়েছে। নিজের হাতে মাতৃ স্নেহে এই খাবারগুলো তৈরি করা হয়েছে।

বিকেল ৪টায় এই সকল পথশিশুদের নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজস্ব গাড়ি দেওয়া হয়। গেটে দাঁড়িয়ে বরণ করেন জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র-স্নিগ্ধা রায় দম্পতি। নিজের হাতে শিশুদের সেবা করেন এই দম্পতি। অবশেষে এই সকল পথশিশুদের সকলের জন্য নতুন গামছা দেওয়া হয়।

জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র-স্নিগ্ধা রায় দম্পতি মানবতার ফেরিওয়ালা। জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কর্মরত। স্ত্রী স্নিগ্ধা রায় গৃহিণী। একমাত্র কন্যা সন্তান সেঁজুতি রায় তিন থেকে চার বছরে পা রেখেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে গোয়ালন্দ উপজেলায় এসে যোগ দিয়েছেন তিনি। অল্প দিনেই জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র-স্নিগ্ধা রায় দম্পতি এবং তাদের একমাত্র কন্যা সন্তান সেঁজুতির নাম উপজেলা বাসীর কাছে অতি পরিচিত নাম।

জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র কর্মের কারণে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে উপজেলার প্রতিটি গ্রামে হেঁটে হেঁটে ঘুরেছেন। খোঁজ নিয়েছেন কোন গ্রামে কতজন মানুষ ও কত পরিবার কিভাবে জীবন-যাপন করছেন। সন্ধ্যা রাত থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত একমাত্র তিন বছরের কন্যা সেঁজুতিকে নিয়ে কখনও স্ত্রী স্নিগ্ধা রায়কে সাথে নিয়ে অসহায় পরিবারের বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন। লোকচক্ষুর আড়ালে সামর্থ মতো সহযোগিতা করেছেন এবং করেন। সরকারি ও নিজস্ব বেতনের আয় থেকে এই সহযোগিতা করেন তিনি। এখনো করছেন। শুরু থেকে এই দম্পতি মিডিয়ার আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন। স্নিগ্ধা রায় কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, এই দিন যেন প্রতিবছর আসে। আমরা যেন ওদের পাশে সব সময় থাকতে পারি।

তারা বলেন, শিক্ষা ও কর্ম জীবনে অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি। কিন্ত আজকের আনন্দ অনন্তকাল আমাদের সারা অঙ্গে মিশে থাকবে। আমি ও আমার পরিবার যেখানে থাকবো ওদের কখনও ভুলবো না। ওদের ভালবাসার আনন্দ নিয়ে আমার কর্মজীবনে এগিয়ে যেতে চাই।

পায়াক্ট বাংলাদেশ এর ম্যানেজার মজিবুর রহমান খান জুলেয় জানান, ‘পায়াক্ট বাংলাদেশ’ ২০০০ সাল থেকে পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। ২০০৭ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানের কোনো দাতা বা ডোনার নেই। এই প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী পরিচালক স্যার আবু ইউসুফ চৌধুরী নিজ অর্থায়নে সেফ হোম পরিচালনা করেন। কিন্ত এই প্রথম কোনো সরকারি পদস্ত কর্মকর্তার আমন্ত্রণে ওরা অনেক আনন্দিত ও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছে। ইউএনও স্যার ও ম্যাডামের স্নেহের স্পর্শে ওরা যেন বাবা-মায়ের স্নেহময় স্পর্শ খুঁজে পেয়েছে।

বিদায় বেলায় পথশিশুরা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র-স্নিগ্ধা রায় দম্পতিকে আব্বু, আব্বু- আম্মু আম্মু বলে জড়িয়ে ধরেন। এক কণ্ঠে সবাই বলেন, জম্মের পর আজ বাবা-মায়ের আদরের পরশ পেয়েছি। এর পূর্বে কখনও এমন হাতের ছোঁয়া, এমন আদর, এমন ভালবাসা কখনও পায়নি। এই বলে বিদায় নেয় শিশুরা সবাই।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ