ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

সরকারি প্রণোদনা পেয়ে চুয়াডাঙ্গায় বেড়েছে সরিষার আবাদ

প্রকাশনার সময়: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৫৬

সরকারি প্রাণোদনা পেয়ে চুয়াডাঙ্গার ৪ উপজেলায় গত পাঁচ অর্থবছরে সরিষার আবাদ বেড়েছে। কৃষকরা আমন কাটার পর বোরো ধান রোপণের আগে প্রণোদনা সুবিধা পেয়ে সরিষার আবাদে ঝুঁকছে। এ সুবিধার আওতায় আরও বেশি সংখ্যক কৃষককে আনার দাবি জানিয়েছে কৃষকেরা। এতে সরিষার আবাদ বাড়বে, কমবে আমদানি নির্ভরতা।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সদর উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় ১ হাজার ৭৭৫ হেক্টর, দামুড়হুদায় ৪০০ হেক্টর ও জীবননগরে ৩১১ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। ওই অর্থবছরে সদর উপজেলায় ২ লাখ ২৮ হাজার ৫৭০ টাকা করে ২৮৫ জন কৃষক প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল। আলমডাঙ্গায় ১৭ লাখ ৪০ হাজার ৩৪০ টাকা করে ২ হাজার ১৭০ জন কৃষক প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল, দামুড়হুদায় ১ লাখ ৪৯ হাজার ১৬০ টাকা করে ২২০ জন ও জীবননগরে ২ লাখ ২০ হাজার ৩৫০ টাকা করে ৩২৫ জন কৃষক প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল।

২০২০-২০২১ অর্থবছরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৯০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১ হাজার ৫৬৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৩০২ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এ অর্থবছরে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮০০ টাকার প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল সদর উপজেলায় ৪০০ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২০০ জন প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল ৮৮ হাজার ৪০০ টাকা, দামুড়হুদা উপজেলায় ২০০ জন প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল ৭১ হাজার ৬০০ টাকা ও জীবননগর উপজেলায় ২০০ জন কৃষক প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল ৭১ হাজার ৬০০ টাকা।

২০২১-২০২২ অর্থবছরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৬০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১ হাজার ৬০৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ২৫০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৩৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। সে সময় সদর উপজেলার ১৭০ জন কৃষক প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল ৬৭ হাজার ৩৬০ টাকা, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১ হাজার ৩৯০ জন কৃষক প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪০ টাকা, দামুড়হুদা উপজেলার ২৭০ জন কৃষক প্রণোদনা সুবিধা পায় ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা ও জীবননগর উপজেলায় ১৭০ জন কৃষক প্রণোদনা সুবিধা পায় ৬২ হাজার ৯০০ টাকা।

২০২২-২০২৩ অর্থবছরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২৭৮ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২ হাজার ১৫০ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৩৫৭ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। ওই সময় সদর উপজেলার ৭৪০ জন কৃষক ২ লাখ ৯৬ হাজার, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৭ হাজার ৩৫০ জন কৃষক ২৯ লাখ ৪০ হাজার, দামুড়হুদা উপজেলার ১ হাজার ১৬০ জন কৃষক ৪ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৬ ও জীবননগর উপজেলার ১ হাজার ২৫০ জন কৃষক ৫ লাখ টাকা প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৩১০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২ হাজার ৪৮৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৩১০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এ আবাদে সদর উপজেলার ১ হাজার ১২০ জন কৃষক ৬ লাখ ২৬ হাজার ৬৪০ টাকা, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৮ হাজার ৬৪০ জন কৃষক ৪৮ লাখ ৩৪ হাজার ৮০ টাকা, দামুড়হুদা উপজেলার ১ হাজার ৪৩০ জন কৃষক ৭ লাখ ২৫ হাজার ১০ টাকা ও জীবননগর উপজেলার ১ হাজার ৪১০ জন কৃষক ৭ লাখ ১৪ হাজার ৮৭০ টাকার প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এ জেলায় সরিষার উৎপাদন হয়েছিল ৪ হাজার ২৫৪ মেট্রিক টন, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সরিষা উৎপাদন হয় ৩ হাজার ২৪ মেট্রিক টন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সরিষার উৎপাদন হয়েছিল ৩ হাজার ৩২১ মেট্রিক টন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সরিষা উৎপাদন হয় ৪ হাজার ২০১ মেট্রিক টন ও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৪ হাজার ২৩২-৩৩ মেট্রিক টন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবার কৃষকরা টরি-৭ এবং বারি-৯,১৩ ও ১৪ জাতের সরিষা বেশি আবাদ করেছেন। সরিষা ফসল উঠতে ৮৫ থেকে ৯০ দিন সময় লাগে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল হক জানান, চুয়াডাঙ্গার মাটি সরিষা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। টরি-৭ জাতের সরিষা প্রতি বিঘায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ মণ, রাই-৫ জাতের সরিষা প্রতি বিঘায় সোয়া ৩ থেকে সাড়ে ৩ মণ, বারি জাতের ৭-৮ সরিষা প্রতি বিঘায় সাড়ে ৬ থেকে ৮ মণ, বারি-৯-১০ জাতের সরিষা প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৮ মণ, বারি-১১ জাতের সরিষা প্রতি বিঘায় সাড়ে ৬ থেকে ৮ মণ,বারি-১২ জাতের সরিষা প্রতি বিঘায় ৫ থেকে ৬ মণ, বারি-১৩ ও ১৪ জাতের সরিষা প্রতি বিঘায় ৭ থেকে ৯ মণ উৎপাদন হয়।

চুয়াডাঙ্গা শৈলগাড়ী গ্রামের সরিষা চাষি তাজু বলেন, আমার ১২ কাঠা জমি পড়েই থাকে। ওই জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এবার দেড় মণ মতো সরিষা হবে। খরচ ২ হাজার টাকা হয়েছে। ৪ হাজার টাকা লাভ থাকবে। এরপর এই জমিতে কচুর আবাদ করব।

একই গ্রামের সরিষা চাষি আজিজুল জানান, এক বিঘা জমিতে আনুমানিক ৩ মণ সরিষা হবে। এ সময়টিতে জমি পড়েই থাকে। সরিষা লাভজনক হবে বলে ধারণা করছি।

এছাড়াও সরিষা চাষি ফজলু বলেন, ২২ কাঠা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। সরিষা ভাল হয়েছে। এ সময় জমি ফাঁকাই পড়ে থাকে। আবাদে ২২শ টাকা খরচ হয়েছে। ৩ থেকে সাড়ে ৩ মণ সরিষা হবে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, সরকারের প্রণোদনায় এ জেলায় সরিষার আবাদ বেড়েছে। আমন আবাদের শেষের দিকে সরিষা রিলে পদ্ধতিতে চাষ শুরু হয়। এ প্রক্রিয়ায় সরিষার আবাদ করলে তেলের উৎপাদন বাড়বে। দেশি সরিষা মাড়াই করে ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম, টরি-৭ জাতের সরিষা প্রতি কেজি মাড়াই করে ৩৮০ থেকে ৪১০ গ্রাম, রাই-৫ জাতের সরিষা প্রতি কেজি মাড়াই করে ৩৯০ থেকে ৪০০ গ্রাম এবং বারি-৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ জাতের সরিষা প্রতি কেজি মাড়াই করে ৪৩০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম তেল পাওয়া যায়।

তিনি আরও জানান, কৃষকরা পড়ে থাকা অনাবাদি জমির কিছু অংশে সরিষার আবাদ করে লাভবান হচ্ছে। সেই সাথে মিটছে ভোজ্য তেলের চাহিদা। যদি জেলার বৃহৎ অংশ কৃষককে প্রণোদনার আওতায় এনে সরিষা আবাদে সম্পৃক্ত করা যায় তাহলে এ জেলা থেকে প্রচুর পরিমাণ ভোজ্য তেল উৎপাদন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ