ঢাকা, রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১, ৯ জিলহজ ১৪৪৫

এমপি আনারকাণ্ডে ফেঁসে যাওয়া কে এই নারী?

প্রকাশনার সময়: ২৩ মে ২০২৪, ১৪:০৮

কলকাতার নিউটাউনে পরিকল্পিত ও নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। রহস্যে ঘেরা তার এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত শিলাস্তি রহমান নামে এক নারী গ্রেপ্তার হয়েছেন।

জানা গেছে, কলকাতার নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনের বি ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটে আনারকে হত্যা করা হয়, সেখানে অবস্থান করছিলেন শিলাস্তি রহমান। সে ফ্ল্যাটেই এমপি আনারের মরদেহটি টুকরো টুকরো করে ট্রলিব্যাগে ভরে ফেলে আসা হয় অজ্ঞাত স্থানে। এখন পর্যন্ত যার হদিস পাওয়া যায়নি।

এদিকে এমপি আনার খুনের ঘটনায় বাংলাদেশিরাই জড়িত বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। তারা বলছেন, হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত। পূর্ব শত্রুতার জেরে হত্যা করা হয়েছে তাকে। ঘটনাটির সঙ্গে বাংলাদেশিরাই জড়িত।

পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি প্রধানের দেওয়া তথ্যমতে, এমপি আনার যে ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন, সেটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দফতরের কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার রায়ের। তবে তার কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন বাংলাদেশি আমেরিকান আখতারুজ্জামান শাহীন। তিনিই ওই ফ্ল্যাটে আনারের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ডিবি পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘শিলাস্তি রহমান এমপি আনার খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী। গত ১৩ মে তিনি আমানুল্লাহ ও এমপি আনারের সঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢোকেন। শাহীন এমপি আনারকে কলকাতা নিতে এই নারীকেই ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। কারণ, সব পরিকল্পনা করে শাহীন ১০ মে ভারত থেকে ফিরে এলেও শিলাস্তি থেকে যান কলকাতা। শিলাস্তি ১৫ মে বিমানে দেশে ফেরেন।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সময় শিলাস্তি তিনতলা ফ্ল্যাটের একটি তলায় অবস্থান করছিলেন। তবে সামনে ছিলেন না। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর তিনি নিচে নেমে আসেন। এরপর লাশ গুমে সহায়তা করেন। আমানুল্লাহ ও শিলাস্তি মিলেই এমপি আনারের টুকরো করা মরদেহের একটি ট্রলি নিয়ে প্রথমে বের হয়েছিলেন বলে তথ্য রয়েছে।’

বাংলাদেশ পুলিশের তথ্য বলছে, আখতারুজ্জামান শাহীনের বাড়িও ঝিনাইদহে। আনার হত্যার সময় তিনি ভারতে অবস্থান করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, যে ফ্ল্যাটে আনার খুন হন, সেখানে আখতারুজ্জামানও ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী এই ব্যক্তি আনার খুনের পর নেপাল, দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। সূত্রমতে— গত ২০ মে ভিসতারা এয়ারে দিল্লি থেকে আখতারুজ্জামান নেপালের কাঠমান্ডু চলে যান। পরের দিন ফ্লাই দুবাইয়ে করে তিনি দুবাই চলে যান। তার পরবর্তী গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র বলে জানা গেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিলাস্তিকে হানি ট্র্যাপ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। এরইমধ্যে শিলাস্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। সূত্র বলছে, শিলাস্তি রহমান এমপি আনার খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আখাতারুজ্জামানের বান্ধবী। তার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

কলকাতার একটি সূত্র জানায়, যে ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে, ১৩ মে সেখানে দুজন পুরুষ ও একজন নারী প্রবেশ করেন। একদিন অবস্থানের পর ফ্ল্যাট থেকে তারা বের হয়ে আসেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীই শিলাস্তি রহমান। ১৩ মে তিনি আমানুল্লাহ ও এমপি আনারের সঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢুকে থাকতে পারেন।

এদিকে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামে চল্লিশ বিঘা জমির ওপর এমপি আনার খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের একটি রিসোর্ট আছে। তিনি আমেরিকা প্রবাসী ও কোটচাদপুর মেয়র শহিদুজ্জামান সেলিমের ছোট ভাই। প্রতিবছর তিনি দেশে ৬ মাস অবস্থান করেন। শাহিন এমপি আনারের বাল্যবন্ধু এবং ব্যবসায়িক পার্টনার।

স্থানীয়রা জানান, রিসোর্টের ভেতরে সুইমিং পুল, চা বাগান, গরু-ছাগলের ফার্ম, জার্মান শেফার্ড, গলফ কোর্স ও বিভিন্ন ফলের বাগান রয়েছে। আছে কঠোর নিরাপত্তা, সিসি ক্যামরাসহ তারকাটা বেষ্টনি। শাহীন দেশে অবস্থানকালে এই রিসোর্টে সুন্দরী নারীদের আনাগোনা দেখা যায়। এ সময় রিসোর্টে ভিআইপি ও ভিভিআইপিরা সময় কাটাতে আসেন। এই রিসোর্টে সাধারণ মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

নয়াশতাব্দী/একে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ