ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

শবেবরাতে যে আমল করবেন

প্রকাশনার সময়: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:২৩

হাদিসগুলো থেকে প্রতীয়মান হয়, এ রাতে ইবাদতের কোনো ধরন নির্দিষ্ট নেই বরং এ রাতে এমন সব নেক আমল করা উচিত যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভ করা যায়। তাই এ রাতে আমরা নিম্নোক্ত আমলগুলো করতে পারি।

১. মাগরিব, এশা, ফজরের নামাজ অবশ্যই জামাতের সঙ্গে আদায় করা।

২. নফল নামাজ পড়া। এক্ষেত্রে অনির্ভরযোগ্য কিছু বই-পুস্তকে নফল ইবাদতের বিভিন্ন নিয়মের কথা লেখা আছে। যেমন- এত রাকআত পড়তে হবে, প্রতি রাকআতে এ সুরা এতবার পড়তে হবে। অথচ সহিহ হাদিস শরিফে শবেবরাত, শবেকদর বা অন্য কোনো ফজিলতপূর্ণ রাতে এসব বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামাজ প্রমাণিত নেই।

৩. তওবা করা। তওবা বলা হয়— (ক) কৃতপাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, (খ) সঙ্গে সঙ্গে এই পাপটি পরিহার করা, (গ) ভবিষ্যতে এই পাপটি আর করব না এই মর্মে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা, (ঘ) বান্দার হক নষ্ট করে থাকলে তার হক আদায় করে কিংবা ক্ষমা গ্রহণ করে দায়মুক্ত হওয়া (ঙ) কোনো ফরজ-ওয়াজিব ছুটে গিয়ে থাকলে মাসআলা অনুযায়ী তার কাজা কাফফারা আদায় করা। অতঃপর আল্লাহর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসা এবং অন্তর থেকে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

৪. কোরআনে কারীম তিলাওয়াত করা, দরুদ শরিফ পড়া, জিকির-আজকার করা ও ইস্তেগফার পড়া ইত্যাদি।

৫. এ রাতে গুরুত্ব সহকারে দোয়া করা, কারণ এ রাতে দোয়া কবুল হওয়ার কথা বারবার ধ্বনিত হয়েছে।

৬. এ রাতে কিছু দান সদকা করে এবং নফল ইবাদত করে মৃতদের জন্য সওয়াব পৌঁছানো।

৭. ১৫ শাবান নফল রোজা রাখা। রোজা রাখার বিষয়টি উল্লিখিত হাদিস ছাড়াও অন্যান্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

‘আমল সম্মিলিত নয়, ব্যক্তিগত’

আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে একান্ত হয়ে একাকী সম্পর্ক গড়ার অন্যতম মাধ্যম হলো নফল ইবাদত। আর বিশুদ্ধ মতানুসারে নফল ইবাদত দলবদ্ধভাবে জামাতের সঙ্গে নয় বরং একাকী করাই উত্তম। ফরজ নামাজ তো অবশ্যই মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে এবং এটিই উত্তম পন্থা। কারণ ঘরকে ইবাদতশূন্য করা নিষেধ। সুতরাং বর্তমানে শবেবরাত, শবে কদরকে কেন্দ্র করে যে প্রচলন দেখা যাচ্ছে যে, এ রাতে নফল ইবাদতের জন্য লোকজন দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হয়, কোথাও মিলাদ হয়, কোথাও এক সঙ্গে বসে জোরে জোরে জিকির হয়, যার দরুন একাকী ইবাদতকারীর ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।

অথচ এ রাতে এগুলো করার কোনো প্রমাণ হাদিস শরিফেও নেই এবং সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাবয়ে তাবেঈনের যুগেও এর কোনো প্রচলন ছিল না। তবে যদি বাসায় অলসতার দরুন ইবাদত না হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেক্ষেত্রে মসজিদে এসে ইবাদত করতে দোষ নেই। এক্ষেত্রে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলে ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না। (ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ পৃ: ২১৯)

‘এ রাতেও যারা বঞ্চিত থেকে যায়’

হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী কিছু লোক এমন রয়েছে যারা এই সাধারণ ক্ষমার রাতেও ক্ষমা পায় না। যতক্ষণ না তওবা করে ফিরে আসে। এরা হলো—

১. আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে অংশীদার স্থাপনকারী মুশরিক।

২. হিংসুক।

৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী।

৪. যে পুরুষ টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরতে অভ্যস্ত।

৫. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান।

৬. মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি।

৭. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যাকারী।

(সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫; মুসনাদে আহমাদ: ৬৬৪২; ওয়াবুল ঈমান, ৩/৩৮৩-৩৮৫)

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ