ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাবিতে ধর্ষণকাণ্ড: ঘটনা খতিয়ে দেখতে ইউজিসির কমিটি

প্রকাশনার সময়: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৩৫

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নেওয়া পদক্ষেপ ও সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

এ ছাড়া কর্তৃপক্ষ ধর্ষণের ঘটনায় কি ব্যবস্থা নিয়েছে এবং কেন এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটছে-তা খতিয়ে দেখবে এই কমিটি। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন কমিটির সদস্যরা।

এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল হাসান এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যাক্ষ সাব্বির আলমের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে তাদের প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতির দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংগঠন নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ। সেই সঙ্গে যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তির দাবি জানানো হয়।

বুধবার(৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্ত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়৷ সমাবেশে আন্দোলনকারীরা ধর্ষণকাণ্ডে সহায়তাকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত করে তাদের প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যহতি প্রদান ও যৌন নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তির দাবি জানানো হয়।

প্রক্টর তার দায়িত্বের নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি।

তিনি বলেন,'ধর্ষককে যারা পালাতে সাহায্য করেছে তারা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী। কিন্তু তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ধর্ষক মোস্তাফিজকে খুঁজে আনতে পাঠিয়েছিলেন দুজন ছাত্রলীগ কর্মীকে। তাহলে প্রশ্ন জাগে প্রক্টোরিয়াল টিমের কাজ কি? অথচ তাদের উচিত ছিল মীর মশাররফ হলকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে মোস্তাফিজকে আটক করা। কিন্তু পাঠানো হয়েছে দুজন ছাত্রলীগের কর্মীকে। এখান থেকেও বোঝা যায় প্রক্টরের কোনো সদিচ্ছা ছিল তাদেরকে আটক করার। এই প্রক্টর তার দায়িত্বের নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। আমরা তার দায়িত্ব অবহেলার অপরাধ তদন্ত করে অব্যাহতির দাবি করছি।'

বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন,'ওই দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট দুজনে মিলে ধর্ষকক বাঁচানোর জন্য পাঁয়তারা করছে। অবশেষে তারা ধর্ষকে পালাতে সহযোগিতা করে। যারা ছাত্রলীগের ছায়া হিসেবে কাজ করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকার নৈতিক অধিকার নেই।'

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি৷

এদিকে যৌন নিপীড়নের একাধিক অভিযোগ থাকলেও গত দেড় বছর ধরে বহাল তবিয়তে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনি। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তিনি। উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বিচারের বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা।

এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, 'প্রায় দেড়বছর পার হয়ে গেছে অথচ মাহমুদর রহমান জনির মতো যৌন নিপীড়কের এখনো বিচার হয়নি৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ধর্ষক ও নিপীড়কের বিচার করার কোনো সদিচ্ছা নেই৷ তারা বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছে, এটা দেখে শিক্ষার্থীরা কি শিখছে? ধর্ষণ-নিপীড়ন করলে এই ক্যাম্পাসে বিচার হয় না।'

জনির বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি আরও বলেন, 'জনির বিরুদ্ধে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার প্রধান করা হয়েছে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে। তাহলে এই তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষ হয় কিভাবে? তা ছাড়া তদন্ত কমিটিতে অন্য যে দুজন রয়েছেন তারাও রাজনৈতিক দলের এবং উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ। তার বিচারের ক্ষেত্রে আমরা প্রশাসনের কোনো সদিচ্ছা দেখিনি৷ উপাচার্য নিজেই জনির বিষয়টি সিন্ডিকেটে এজেন্ডাভুক্ত করেছে না।'

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.নূরুল আলম বলেন, 'সদিচ্ছার অভাব বা পিছুটান নেই। আমিও চাই দোষীদের বিচার হোক। আশা করি, দু’দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।'

ধর্ষণ ও নিপীড়ন-মুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসের পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা ও অছাত্রদের হল থেকে বের করার দাবিতে দিনব্যাপী উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ঘটনার চতুর্থ দিনে আজ মানবন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংগঠন। অন্যদিকে ধর্ষণের ঘটনায় বাংলাদেশের ১৮ নাগরিক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷

জাবি শিক্ষক সমিতির মানবন্ধন

ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের নেয়া সিদ্ধান্ত সমূহের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং বহিরাগত ও অছাত্র মুক্ত নিরাপদ বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিতের দাবিতে আজ মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক সমিতি। মানববন্ধনে সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন,'ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যেভাবে ত‌ড়িৎ গ‌তি‌তে সি‌ন্ডি‌কে‌টের মাধ‌্যমে একটা ব‌্যবস্থা নি‌য়ে‌ছে সেটা‌কে আমরা তা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এটা যেন লোক দেখা‌নোর জন‌্য না হয়, প্রকৃত অ‌র্থে ৫ কর্মদিব‌সের ম‌ধ্যেই সকল অছাত্র ও ব‌হিরাগত এবং কুলাঙ্গাররা যেন এখা‌ন থে‌কে চ‌লে যায়।'

রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট সিনেট সদস্যদের মানবন্ধন

ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি ও আবাসিক হলসমূহ থেকে অছাত্রদের বের করার দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট সিনেট সদস্যবৃন্দ। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবির বলেন,'আমরা আজ এখানে ধর্ষণ ও গণরুমের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করতে এসেছি। আমরা চাই যারা ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের ফাঁসি দেওয়া হোক। আবাসিক হলে ২৫০০ নয়, খুঁজে দেখেন পাঁচ হাজার ছাত্র হলে অবস্থান করছে। অছাত্ররা হলে অবস্থান করে আর বৈধ শিক্ষার্থীরা গণরুমে মানবেতর জীবনযাপন করেন। অবিলম্বে হল থেকে গণরুমও উচ্ছেদ করতে হবে।'

সাংস্কৃতিক অঙ্গণের ১৮ নাগরিকের উদ্বেগ

ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গণের ১৮ জন নাগরিক উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে৷ বিবৃতিতে তারা বলেন,' জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোপূর্বে এমন আরও ঘটনা ঘটেছে। কোনো ধর্ষণের ঘটনায় কোনো রকম তদন্ত বা সুরাহা কর্তৃপক্ষ করেনি।'

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন রামেন্দু মজুমদার, হাসান ইমাম, অনুপম সেন, সারওয়ার আলী, আবেদ খান, ফেরদৌসী মজুমদার, মামুনুর রশীদসহ আরও অনেকে৷

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ