ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

পুলিশের হাত-পা ধরেও শেষ রক্ষা হয়নি মোটরসাইকেল আরোহীর

প্রকাশনার সময়: ০১ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:২৯

অসুস্থ মায়ের ওষুধ কেনার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে ফার্মেসিতে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে ট্রাফিক পুলিশের চেকপোস্টের মুখে পড়েন ওই মোটরসাইকেল আরোহী। এসময় হাত-পা ধরে মাফ চাইলেও জরিমানা থেকে রক্ষা পাননি। এমনই একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ প্রকাশ করে নেটিজেনরা।

রোববার (৩১ মার্চ) ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়ী এলাকার জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

ইতোমধ্যে ২৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় বইছে সর্বস্তরে।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিডিওতে ভাইরাল হওয়া মোটরসাইকেল আরোহীর পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনার সময় এক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের গেটের পাশে মোটরসাইকেল আরোহী যুবক ট্রাফিক পুলিশের এক সসদ্যকে দুই হাত জোড় করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে অনুরোধ করছেন জরিমানা ও মামলা না দিতে।

এ সময় পুলিশ সদস্যের পাশে থাকা ট্রাফিকের শহর ও যানবাহন পুলিশের ইনচার্জ আমজাদ হোসেনকে দেখিয়ে দেয়। এরপর ভুক্তভোগী হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বলতে থাকেন স্যার আমার ভুল হয়েছে, আমার মা অসুস্থ্য, ওষুধ কেনার জন্য এসেছি, আমার মা মরে যাবে, এবারের মতো মাফ করে দেন। এক পর্যায়ে যুবক ওই পুলিশ কর্মকর্তার দুই পা ধরে ক্ষমা চান।

তবে এঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা এবারের মতো ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তাকে। তবুও যেন তার শেষ রক্ষা হয়নি।

মোটরসাইকেল আরোহীর কান্নার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় এরই মধ্যে সুষ্ঠু বিচার ও আইন প্রয়োগের বিভিন্ন মন্তব্য করেন নেটিজেনরা। ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো গাড়ি চালকের উপর এমন অমানবিক আচরণ করতে না পারেন সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানান পুলিশ সুপারকে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের উপ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক আওলাদ হোসাইন পাপন ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘আইন মানুষের কল্যাণে তৈরি হয়েছে। সেই আইনকে পুঁজি করে যদি কেউ মানুষের অকল্যাণে ব্যবহার করে তাহলে সেটা কখনই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার এই সুশাসনে মেনে নেওয়া যায় না। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের চোখ কখনোই এ ব্যাপারটি এড়িয়ে যাবে না।’

ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একজন মন্তব্য করেন, এখন সময়ের দাবি ট্রাফিক ও পুলিশের গাড়ির কাগজপত্র দেখার নামে হয়রানি বন্ধ করা উচিৎ। এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের শুভ দৃষ্টি কামনা করেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো একজন লিখেছেন, ‘শক্তের ভক্ত নরমের যম। হাজার হাজার বাস-ট্রাক আছে, যাদের কোনো ফিটনেস রেজিস্ট্রেশন নেই, গাড়ি ভাঙাচুড়া রাস্তায় চলছে, ট্রাফিক সার্জেন দেখেও না দেখার ভান করে। কারণ বাসের মালিক অনেক প্রতাপশালী। একটা মানুষ কতটুকু অসহায়বোধ করলে সার্জেনের পা ধরে।’

উল্লেখ্য, বুধবার (২৭ মার্চ) ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক তার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানান, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গত ৮ মাসে জেলায় সড়ক পরিবহন আইনে ৫১৫২টি মামলা হয়েছে। এ সব মামলায় জরিমানা আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫০ টাকা।

আর মোটরসাইকেল আরোহীর বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) এর দায়িত্বরত কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন জানান, আইন সবার জন্য সমান। হাত-পা ধরে মাফ চাইলে কি সমাধান পাওয়া যায়। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ