ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জিম্মি জাহাজে মজুত ২৫ দিনের খাবার ও ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি

প্রকাশনার সময়: ১৩ মার্চ ২০২৪, ১৯:৪৮

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজটিতে ২০ থেকে ২৫ দিনের খাবার মজুত আছে। বিশুদ্ধ পানি আছে ২০০ টন।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রাতে জাহাজের মালিকপক্ষ কবির স্টিল রি-রোলিং মিলসের (কেএসআরএম) কর্মকর্তাদের কাছে জিম্মি নাবিক আতিকুল্লাহ খান এ বার্তা পাঠিয়েছেন।

এতে বলা হয়, প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিকটন কয়লা আছে। এ কারণে জাহাজটি অগ্নি ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে এক অডিও বার্তায় জানিয়েছেন চীফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান।

সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার তথ্য পায় মালিকপক্ষ। জাহাজসহ ২৩ নাবিক এখন জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে জিম্মি আছে। এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ মেহেরুল করিমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে জাহাজটি সংযুক্ত আরব-আমিরাতের দুবাইয়ে যাচ্ছিল। জাহাজে থাকা নাবিকরা হোয়াটস অ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে জলদস্যু আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানান।

যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন (ইউকে এমটিও) তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে বাংলাদেশি জাহাজটি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। দুটি নৌযানে (একটি বড় এবং আরেকটি ছোট) চড়ে জাহাজটির কাছাকাছি এসে জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণে নেয়।

অডিও বার্তায় আতিকুল্লাহ খান বলেন, আমাদের একটা প্রবলেম হচ্ছে আমাদের জাহাজে কোল কার্গো আছে অ্যাবাউট ৫৫ হাজার (টন), যা ডেঞ্জারাস কার্গো। ওটার ফায়ার হ্যাজার্ড (অগ্নিঝুঁকি) আছে। তারপরে মিথেন কনসেনট্রেনশনও বাড়ে। লাস্ট আমি দেখেছি, অক্সিজেন লেভেল ৯-১০ পারসেন্ট ছিল। এটা একটু রেগুলার মনিটর করতে হয়। আবার ইনক্রিস হলে বিভিন্ন এক্সপার্টের পরামর্শ নিতে হবে। এটার ব্যবস্থা করতে হবে কাইন্ডলি।

জাহাজে মজুত রসদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের জাহাজে অ্যাপ্রক্সিমেটলি ২০-২৫ দিনের প্রভিশন আছে। ২০০ মেট্রিক টন ফ্রেশ ওয়াটার। আমরা সবাইকে বলেছি, ফ্রেশ ওয়াটার একটু সেফলি ইউজ করতে। প্রভিশনও আমরা ওভাবে হ্যান্ডল করবো আর কি। জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার বর্ণনা দিয়ে অডিও বার্তায় আতিকুল্লাহ বলেন, আমি চীফ অফিসার বলছি আবদুল্লাহ জাহাজ থেকে। আজকে (মঙ্গলবার) সকালে জাহাজের সময় আনুমানিক সাড়ে ১০টা এবং জিএমটি (গ্রীনিচি মান সময়) সময় ৭টা ৩০ মিনিটের সময় একটা হাইস্পিড বোট আমাদের দিকে আসতেছিল। সাথে সাথে অ্যালার্ম দিচ্ছিল। আমরা সবাই ব্রিজে গেলাম। ওখান থেকে পরে সিটি টেলে গেলাম। ক্যাপ্টেন স্যার আর সেকেন্ডার অফিসার ব্রিজে ছিল। তখন ওই জিগজ্যাগ করলাম। এসওএস (বিপদে পড়লে জীবন রক্ষায় জরুরি বার্তা) করলাম। ইউকেএমটিওতে (যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস) ট্রাই করছিলাম। বাট ইউকেএমটিও তখন ফোন রিসিভ করেনি। ওরা চলে আসল, পাইরেটসগুলা। চলে আসার পরে ক্যাপ্টেন স্যার আর সেকেন্ড অফিসারকে ক্যাপচার করল। আমাদেরকে ডাকল। আমরা সবাই আসলাম। ওরা কিছু কিছু গোলাগুলি করল। আমরা সবাই ভয় পাইছিলাম। সবাই ব্রিজে বসেছিল। এমনি কারো গায়ে হাত তোলেনি। সেকেন্ড অফিসারকে হালকা একটু ইয়ে করছে।’

তিনি বলেন, ‘তারপরে আরেকটা স্পিডবোটে আরও কয়েকজন লোক চলে আসল। এভাবে প্রায় ১৫-২০ জন চলে আসছে। কতক্ষণ পর একটা বড় ফিশিং ভেসেল (মাছ ধরার নৌযান) আসল। ওটা হচ্ছে একটা ইরানিয়ান ফিশিং বোট, যেটা নাকি ওরা এক মাস আগে ক্যাপচার করছিল এই সোমালি পাইরেটসগুলা। ওরা ওইটাতে ছিল। ওইটাতে ঘুরে ওরা এক মাস ধরে সার্চিং করতেছিল। কোনো জাহাজ খুঁজতেছিল। তো আনফরচুনেটলি আমাদের জাহাজে ওরা আসল। এখন ওই ইরানিয়ান ফিশিং বোটকে ওরা রিলিজ করে দিবে। ওই ফিশিং বোটে ফুয়েল শেষ হয়ে গেছে। আমাদের থেকে ওরা ডিজেল নিচ্ছে। ওয়েলডেন পাম্প দিয়ে দিচ্ছি আরকি। কারণ ওদের কোনো সিস্টেম নেই নেওয়ার। তো তারপর ওরা জাহাজ স্টপ করাল। সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার আর থার্ড ইঞ্জিনিয়ার ইঞ্জিন রুমে গেল। গিয়ে সিস্টেমেটিক্যালি স্টপ করছে।’

তবে জাহাজ এবং নাবিকেরা অক্ষত আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাহাজের কোনো ক্ষয়ক্ষতি এখনো আল্লাহর রহমতে হয়নি। আমাদেরও তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বাট ভয়ে আছে আর কি, সবাই একটু ভয় পাচ্ছে। ভয় দেখাচ্ছে।’

অডিও বার্তার শেষ পর্যায়ে আতিকুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের জন্য দোয়া করবেন স্যার। আমাদের পরিবারকে একটু দেখবেন স্যার। ওদেরকে একটু সান্তনা জানাবেন স্যার।’

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ