নাম আজিজ উদ্দিন। রাজনীতিবিদ, উদ্যোক্তা হিসেবেও বেশ পরিচিত। সুঠাম দেহের এই যুবক নিজেকে সাংবাদিক, থিয়েটার কিংবা নাট্যকর্মী পরিচয় দিয়ে মেয়েদের সঙ্গে প্রেম, সর্বনাশ করাই ছিল তার টার্গেট। এরপর দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ব্লাকমেইল করাই তার পেশা।

এমনই এক অভিযোগ এনে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এক নারী।

তার অভিযোগ, মাস ছয়েক আগে ওই তরুণী কক্সবাজার বিচ কার্নিভাল দেখতে এসে ফেঁসে যান ভয়ঙ্কর নারী শিকারি আজিজের জালে। মেয়ে পটাতে প্রতিভাবান আজিজ কৌশলে নম্বর নেন ওই তরুণীর। সেই থেকে দফায় দফায় যোগাযোগ করতে থাকেন আজিজ। একপর্যায়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন। গ্রামের সহজ-সরল ওই তরুণীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কৌশলে শহরে নিয়ে আসেন।

কিন্তু ওই তরুণী বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি না হওয়ায়, আজিজ তৎক্ষণাৎ কলেমা পড়ে মৌখিক বিয়ে করে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। শহরের বিভিন্ন হোটেল ও রুমালিয়ার ছড়ায় তার বড় ভাইয়ের বাসায় নিয়ে গিয়ে স্বামীর অধিকার খাটান। এ সময় ধূর্ত ও সুচতুর আজিজ গোপনে একান্তে সময় কাটানোর ভিডিও ধারণ করেন।

এদিকে ওই তরুণী আনুষ্ঠানিক বিয়ে করে ঘরে তোলার জন্য চাপ দিলে, বেরিয়ে আসে নারী শিকারি আজিজের আসল রূপ। তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিড়িও ধারণ করে রেখেছেন বলে তাকে হুমকি দেন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তার হাতে থাকা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকেন। প্রতি সাপ্তাহে অন্তত দুবার ওই তরুণীকে হোটেলে যেতে বাধ্য করেন আজিজ। একপর্যায়ে নিরুপায় হয়ে আইনের আশ্রয় নেন ভুক্তভোগী নারী। কক্সবাজার সদর মডেল থানায় উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত আজিজের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।

মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী উল্লেখ করেন, কক্সবাজার সদর থানাধীন কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সমিতি পাড়া এলাকার নজির আহমেদের পুত্র আজিজ উদ্দিন একজন অত্যন্ত খারাপ চরিত্রের যুবক। তিনি নারী লোভী, চরিত্রহীন ও লম্পট। নারী শিকারি এ যুবক বিভিন্ন কায়দা-কৌশলে নারীকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করেন।

ওই নারী উল্লেখ করেন, তিনি দুই সন্তানের জননী। প্রায় আট বছর আগে দুরারোগ্য ব্যধিতে স্বামীর মৃত্যু হয়। তখন থেকে দুই সন্তানকে বুকে আগলে রেখে সংগ্রামী জীবন পার করছেন। এ সময়ের মধ্যে বিয়ের অনেক প্রস্তাব আসলেও সায় দেননি। প্রায় ৫-৬ মাস পূর্বে কক্সবাজার শহরে বেড়াতে আসলে লাবণী বিচ পয়েন্ট এলাকায় আজিজের সঙ্গে পরিচয় হয়। তখন থেকে আজিজ তার পিছু নেন। মোবাইলে নিয়মিত যোগাযোগ করেন। আজিজ তার স্ত্রী অসুস্থ ও অক্ষম দাবি করে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করেন। একপর্যায়ে গত বছরের ১৩ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টায় তাকে বিয়ে করার কথা বলে আজিজের বসতঘরে নিয়ে যান। পরদিন বিয়ে করবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আজিজ তাকে ওই রাতেই একাধিকবার ধর্ষণ করেন। ১৪ অক্টোবর তিনি বিয়ের জন্য কাজী অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলে আজিজ তাকে আজ নয়, পরে বিয়ে করবে জানিয়ে সকাল ১০টার দিকে তাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

পরবর্তীতে আজিজকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে, আজিজ তাকে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের আপত্তিকর ছবি, ভিডিও ধারণ করা আছে বলে জানান। বিয়ের জন্য চাপাচাপি করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গোপন ভিডিও প্রকাশ্যে আনার হুমকি দেন। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে তাকে জিম্মি করে মাসের পর মাস শহরের বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করতে থাকেন। শুধু ধর্ষণে সীমাবদ্ধ থাকেননি আজিজ। তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নেন। কয়েকদফায় আজিজ তার কাছ থেকে নগদ ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী।

আজিজের নিজ এলাকা সমিতি পাড়ায় তার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্থানীয়দের অনেকে তাকে নারী শিকারি আজিজ বলে ডাকেন। তার কারণে একাধিক নারীর সংসার ভাঙা, এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে।

অভিযোগ আছে, কৌশলে মেয়েদের পটিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে যৌন লালসা মেটানো ও টাকা হাতিয়ে নেয়া তার পেশা ও নেশা। তার খপ্পরে পড়ে অনেক মেয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ভুক্তভোগী অনেক নারী বিভিন্ন সময় অভিযোগ নিয়ে থানায় দারস্থ হলেও মামলা পর্যন্ত গড়ায়নি। থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলেই শুরু হয় নানামুখী তদবির। বহুরূপী আজিজের বিচরণ সর্বত্র।

তার ফেসবুক পেজে ঢুকে দেখা গেছে, সে একাধারে উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, নাট্যকর্মী, থিয়েটার কর্মীসহ নানান পরিচয়ে পরিচিত। ফেসবুক ওয়ালে শোভা পাচ্ছে শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে ছবিও। তিনি এসব পরিচয় ও নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে ছবিকে পুঁজি করে দিনদিন বিস্তৃত করেছেন তার অপকর্মের ফিরিস্তি।

আজিজের হাতে প্রতারণার শিকার শহরের পাহাড়তলী এলাকার এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আজিজ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সর্বনাশ করেছে। বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছি। কেউ আমার কথা শোনেনি। উল্টো আমাকে খারাপ মেয়ের তকমা দিয়েছে। শেষমেশ তার অব্যাহত হুমকির মুখে সব অন্যায় হজম করতে বাধ্য হয়েছি।

এক প্রশ্নের জবাবে ওই নারী বলেন, অবশ্যই সেল্টার পেলে আজিজের নামে ধর্ষণ মামলা করবেন তিনি।

তার হাতে যৌন লালসার শিকার আরেক নারী সর্বস্বান্ত হয়ে বিদেশ পাড়ি দিয়ে গৃহকর্মীর কাজ করছেন।

নাম প্রকাশ না করে ওই নারী বলেন, আজিজ যে মোটরবাইক চালান সেটিও আমার টাকায় কেনা। লম্পট আজিজ রঙিন স্বপ্ন দেখিয়ে শুধু আমাকে ভোগ করেনি, আমার টাকা-পয়সা সব হাতিয়ে নিয়েছে। পরে ক্ষোভে অপমানে তিনি দেশ ছেড়ে বিদেশে গৃহকর্মীর কাজ করছেন বলে জানান।

কক্সবাজারের এক নারী উদ্যোক্তাও একই ধরনের লালসা ও ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত আজিজের হাত থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী একাধিক নারী জানান, আজিজ উদ্যোক্তা ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে প্রথমে নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে কৌশলে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এ সময় কৌশলে ভিডিও ধারণ করেন। পরে ব্ল্যাকমেইল করে ফাঁদে ফেলা নারীদের নিয়মিত একান্তে সময় কাটাতে বাধ্য করেন ভয়ঙ্কর নারী শিকারি আজিজ উদ্দিন। এভাবে বিভিন্ন কায়দা কৌশলে আজিজ প্রায় অর্ধশতাধিক নারীর সর্বনাশ করেছেন বলে এলাকায় প্রচার আছে। কৌশলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রথমে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ও গোপনে ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা যেন তার পেশা। এসব টাকা দিয়ে শহরের নাজিরারটেক নামক এলাকায় বালিচড় শুঁটকি বিতান নামের একটি শুঁটকি মহালও গড়েছেন আজিজ।

অভিযুক্ত আজিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি ওই রকম স্বভাবের লোক নন।

উলটো তিনি সমাজের নানান উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, আমি সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত। সমাজের পিছিয়ে পড়া পথশিশুদের নিয়ে কাজ করি। আবার রাজনীতিও করি। আর এ কারণেই আমি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি।

আজিজ দাবি করেন, আমাকে সামাজিকভাবে ছোট করার জন্যই নারীঘটিত অভিযোগ তোলা হচ্ছে।

নয়াশতাব্দী/এনএস