ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

‘গ্যাঁড়াকলে’ পেট্রোবাংলা: উত্তরণের উপায় বের করতে হবে

প্রকাশনার সময়: ১৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৯

বাংলাদেশের জনগণ লাভে থাকা সরকারি সংস্থাগুলো বলতে পেট্রোবাংলাকেই বুঝত বা জানত। গণমাধ্যমে সেরকম তথ্যই এসেছে। কিন্তু এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করতে গিয়ে সংস্থাটি ভয়াবহ লোকসানে পড়েছে বলে জানা গেছে। দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও লোকসান সামাল দিতে পারেনি তারা। এতে করে গ্রাহকদের দুর্ভোগই শুধু বেড়েছে।

তারা গ্যাসের বাড়তি বিল পরিশোধ করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। অথচ আবাসিক সংযোগে অধিকাংশ সময় গ্যাস থাকে না। শিল্প কলকারখানায়ও একই অবস্থা। বাসা-বাড়িতে বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানো হলেও মাস শেষে সরকার নির্ধারিত বিল প্রত্যেককেই পরিশোধ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারও ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো অগ্রগতি নেই।

জানা গেছে, দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে। এর আগ পর্যন্ত লাভে থাকা সরকারি সংস্থাগুলোর অন্যতম ছিল পেট্রোবাংলা। এলএনজি আমদানি শুরুর পর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রথম লোকসান দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অর্থবছরেই মুনাফা করতে পারেনি পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত গত পাঁচ অর্থবছরে সংস্থাটির পরিচালন লোকসান হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। যদিও এ সময়ের মধ্যে গ্যাসের দাম তিন দফায় বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ও জ্বালানি বিভাগ। এ সময় সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও শিল্প কারখানায় বিতরণকৃত গ্যাসের। এলএনজি আমদানি শুরুর পর গ্যাসের দাম প্রথম বাড়ানো হয় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে। বিশ্ববাজারে গ্যাসের দামে অস্থিরতার মধ্যে ২০২২ সালের জুনে বাড়ানো হয় সব শ্রেণির গ্যাসের দাম। এরপর বিশেষ ক্ষমতাবলে জ্বালানি বিভাগ সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় গত বছরের ১৮ জানুয়ারি, যা কার্যকর হয় ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে। তিন দফা বাড়ানোর পর সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুতে ব্যবহূত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৫৭৪ দশমিক ১৫ শতাংশে। ক্যাপটিভে বেড়েছে ১১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। বৃহৎ শিল্পে ও মাঝারি শিল্পে বেড়েছে ১৮০ শতাংশ। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ৭৬ শতাংশ, সাড়ে ২৬০ শতাংশ, আবাসিক হোটেল-রেস্টুরেন্টে ৩০ শতাংশ এবং মিটারবিহীন সিঙ্গেল, ডাবল ও প্রি-পেইড মিটারে যথাক্রমে ৭, ১১ ও ৪৩ শতাংশ বেড়েছে গ্যাসের দাম।

চলতি ২০২৪ সালেও গ্যাসের দাম আবারো বাড়তে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্যমতে, ঋণ চুক্তির অংশ হিসেবে সরকারকে ব্যয় সক্ষমতা বাড়ানো ও ভর্তুকি যৌক্তিকীকরণের শর্ত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এর আওতায় জ্বালানি পণ্যের দাম সমন্বয়ে একটি সময়ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এটি কার্যকর হলে গ্যাসের দাম আরও বেড়ে যাবে। পেট্রোবাংলা ও এর আওতাধীন কোম্পানিগুলোর আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে দাবি করছেন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা। তাদের ভাষ্যমতে, গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজারদরে অস্থিতিশীলতার কারণে দীর্ঘদিন উচ্চমূল্যে এলএনজি কিনতে হয়েছে। আবার পুরোনো পাইপলাইনে গ্যাস বিতরণের কারণে প্রচুর সিস্টেম লস হয়েছে, যা সংস্থাটির ক্ষতির মাত্রা বাড়িয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানো ছাড়া এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো প্রায় অসম্ভব।

পুরো বিষয়টিই হতাশাজনক। শুধু আমদানির ওপর নির্ভর করেই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। যে কোনো সংকট কাটিয়ে উঠতে নিজস্ব কিছু উৎপাদন থাকতে হয়। বিভিন্ন সময় শোনা যায় যে, দেশের বিভিন্ন জেলায় গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেসব গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা নিলে সংকট এতটা গভীর হয়ে উঠত না বলেই বিশ্বাস করি। আমরা প্রত্যাশা করি, এ সংকট উত্তরণে সরকার অচিরেই বিকল্প উপায় বের করতে সক্ষম হবে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ