ইমাম আহমাদ (রহ.) ১৬৪ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র তিন বছর বয়সে তাঁর পিতা মৃত্যুবরণ করেন। অতঃপর তাঁর মা তাঁকে লালন-পালন করেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মাত্র ১৬ বছর বয়সে হাদিস অনুসন্ধানে কূফা, বসরা, শাম প্রভৃতি দেশে ভ্রমণ করেন।
রাষ্ট্রীয় নির্যাতন
‘কোরআন আল্লাহর সৃষ্টি’ দাবির বিরোধিতা করায় ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে রাষ্ট্রীয় চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। এটি ছিল কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী আক্বীদা, যার বিরুদ্ধে ইমাম আহমাদ কঠোর ও অনড় অবস্থান নিয়েছিলেন। মূলত কোরআন হলো আল্লাহর কালাম। এটা সৃষ্ট নয়।
নির্যাতনের বিবরণ
হাফেজ ইবনু কাছীর (রহ.) লিখেছেন, ‘খলিফা মামুন বাগদাদের প্রতিনিধি ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম বিন মু’ছআবকে পত্র মারফত নির্দেশ দেন, তিনি যেন মানুষকে ‘খলকে কোরআন’-এর দিকে আহ্বান জানান। পত্র পেয়ে ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম একদল হাদিস বিশারদকে তলব করে তাদেরকে খলকে কোরআনের প্রতি সমর্থন করার আহ্বান জানান। কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম তাদেরকে প্রহার ও ভাতা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন। ফলে তাদের অধিকাংশ অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাতে সমর্থন ব্যক্ত করেন। কিন্তু ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল ও মুহাম্মাদ বিন নূহ আল-জুনদ তাদের মতের ওপর অটল থাকেন। ফলে খলিফার নির্দেশে দু’জনকে এক উটে চড়িয়ে খলিফার নিকট পাঠিয়ে দেয়া হয়। তখন তারা দু’জন শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিলেন।
তার সাথি মুহাম্মাদ বিন নূহ (রহ.) পথিমধ্যেই মারা যান। ইমাম আহমাদ (রহ.) তাঁর জানাজা পড়ান। কয়েদখানায় ইমাম আহমাদ পায়ে বেড়ি বাঁধা অবস্থায় কয়েদিদের সালাতে ইমামতি করতেন। ইতোমধ্যে খলিফা মামুন মারা যান এবং মু’তাছিম বিল্লাহ খলিফা হন।
খলিফা মু’তাছিম বিল্লাহর আমলে ইমাম আহমাদের ওপর নির্যাতন
ইমাম আহমাদকে কয়েদখানা থেকে বের করে খলিফা মু’তাছিমের সম্মুখে উপস্থিত করা হয়। ইমাম আহমাদ বলেন, ‘আমি শিকলগুলোর জন্য হাঁটতে পারছিলাম না। আমি মু’তাছিমের ভবনে উপস্থিত হলাম। আমাকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দেয়া হলো। সেখানে কোনো বাতি ছিল না। আমি অজু করতে চাইলাম। হাত বাড়িয়ে পানি ভর্তি একটি পাত্র পেলাম। আমি তা দিয়ে অজু করলাম। তারপর সালাতের জন্য দাঁড়ালাম। কিন্তু কিবলা ঠিক করতে পারলাম না। ভোর হলে বুঝতে পারলাম আলহামদুলিল্লাহ আমি কিবলামুখী হয়েই সালাত আদায় করেছি।
পরের দিন মু’তাছিম বিল্লাহ আব্দুর রহমান নামের একজনকে বললেন, তুমি তার সঙ্গে কথা বল। আব্দুর রহমান আমাকে বললেন, কোরআনের ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? আমি বললাম, ইলম সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? তিনি নিশ্চুপ রইলেন। আমি বললাম, পবিত্র কোরআন আল্লাহর জ্ঞান বিশেষ। আর যে ব্যক্তি বিশ্বাস করল যে, আল্লাহ মাখলুক, সে আল্লাহ্কে অস্বীকার করল। আব্দুর রহমান বলল, আল্লাহ ছিলেন। কিন্তু কোরআন ছিল না। আমি বললাম, আল্লাহ ছিলেন কিন্তু তাঁর ইলম ছিল না। এবার তিনি চুপসে গেলেন। এভাবে দীর্ঘ তর্ক-বিতর্ক চলল।
তারপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনও তারা ইমাম আহমাদের সঙ্গে বির্তক করে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইমাম আহমাদের কণ্ঠ সুউচ্চ ছিল এবং তাঁর দলিল তাদেরকে পরাজিত করে। বিতর্কে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু পবিত্র কোরআন-সুন্নাহর উদ্ধৃতি দেয়ার মতো যোগ্যতা তাদের কারো ছিল না। আলোচনার মধ্যে খলিফা বলেন, আহমাদ! আপনি প্রশ্নের জবাব দিন। আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! তারা আমার সামনে মহান আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত বা রাসুল (সা.)-এর একটি হাদিস পেশ করুক। আমি তাদেরকে জবাব দেব। অবশেষে তাঁর দলিল-প্রমাণের সঙ্গে পেরে না উঠে তারা খলিফাকে উত্তেজিত করে তুলল এই বলে যে, হে আমীরুল মুমিনীন! লোকটি কাফের ও বিভ্রান্ত-বিভ্রান্তকারী।
তাদের উস্কানিতে খলিফা ক্রোধান্বিত হলেন। ইমাম আহমাদ বলেন, ‘খলিফা আমাকে বললেন, আল্লাহ তোমাকে অভিশপ্ত করুন। আমি আশা করেছিলাম, তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দেবে। কিন্তু তুমি কোনো জবাব দিলে না। তারপর বললেন, একে ধরে বিবস্ত্র করে ফেল। তারপর (মাটিতে) হেঁচড়াও’।
ইমাম আহমাদ বলেন, আমাকে তারা বিবস্ত্র করে ফেলল এবং মাটিতে হেঁচড়াল। আমি চরম নির্যাতনের শিকার হলাম। আমি বললাম, আমীরুল মুমিনীন! মহান আল্লাহকে ভয় করুন। আল্লাহকে ভয় করুন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলিম সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তার রক্ত প্রবাহিত করা হালাল নয়’। (মুসলিম: ১৬৭৬) এমতাবস্থায় আপনি কিসের ভিত্তিতে আমার রক্তকে হালাল ভাবছেন, অথচ আমি তো সেরূপ কোনো অপরাধ করিনি?
হে আমীরুল মুমিনীন! স্মরণ করুন, আজ আমাকে যেমন আপনার সামনে দাঁড়াতে হয়েছে, তেমনি আপনাকেও একদিন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। মনে হলো, একথা শুনে তিনি থমকে গেলেন। কিন্তু খলিফার পাশে থাকা লোকেরা বলতে লাগল, আমীরুল মুমিনীন! নিশ্চয়ই লোকটি ভ্রান্ত, বিভ্রান্তকারী ও কাফের। ফলে খলিফা আমাকে নানা রকম শাস্তি দিতে লাগলেন। জল্লাদদের আনা হলো। তারা একেকজন আমাকে দু’টি করে চাবুক মারতে শুরু করল। একজন দু’টি চাবুক মেরে সরে যাচ্ছে, আর অপরজন এসে অনুরূপ দু’টি চাবুক মারছে। তারা আমাকে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে ফেলে। আমি কয়েকবার বেহুঁশ হয়ে পড়ি। আঘাত থেমে গেলে আমার চেতনা ফিরে আসে।
মু’তাছিম তার মতাদর্শ গ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু আমি তার আহ্বানে সাড়া দিলাম না। তারা পুনরায় প্রহার করতে শুরু করে।
খলিফা তৃতীয়বারের মতো আমার কাছে এসে আহ্বান জানালেন। কিন্তু বেদম প্রহারের চোটে আমি তার বক্তব্য বুঝতে পারিনি। তারা আবারো আমাকে মারতে শুরু করে দিল। আমি বেহুঁশ হয়ে গেলাম। আমি প্রহারও অনুভব করতে পারছিলাম না। খলিফা ভয় পেয়ে যান এবং আমাকে ছেড়ে দিতে নির্দেশ করেন। এটা ছিল ২২১ হিজরির ২৫ রমজানের ঘটনা। এরপর খলিফা ইমাম আহমাদকে মুক্তি দিয়ে দেন। সেদিন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে ত্রিশের অধিক চাবুক মারা হয়। কেউ বলেন, ৮০টি। কিন্তু আঘাত ছিল বেদম ও তীব্র।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে যখন রাজদরবার থেকে ইসহাক্ব বিন ইবরাহীমের গৃহে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন তিনি রোজাদার ছিলেন। সিয়াম ভেঙে দুর্বলতা দূর করার জন্য তাকে ছাতু এনে দেয়া হয়। কিন্তু তিনি সিয়াম ভাঙতে অস্বীকার করেন এবং সিয়াম পূর্ণ করেন। জোহরের সময় তিনি লোকদের সঙ্গে সালাত আদায় করলেন।
বর্ণিত আছে, ইমাম আহমাদকে যখন প্রহার করার জন্য দাঁড় করানো হয় তখন তাঁর পায়জামার ফিতা ছিঁড়ে গিয়েছিল। তিনি শঙ্কিত হয়ে পড়লেন পায়জামা খসে পড়ে যায় কি না। তাই তিনি সতর ঢেকে নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। ফলে মহান আল্লাহ তাঁর পায়জামা পূর্বের ন্যায় করে দেন। আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেছিলেন, হে সাহায্যপ্রার্থীদের সাহায্যকারী! হে বিশ্বজগতের মা’বুদ। তুমি যদি জেনে থাক, আমি তোমারই সন্তুষ্টি লাভে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছি তাহলে আমার ইজ্জত ক্ষুণ্ন হতে দিও না। (আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ: ১০/৩৬৯)
নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন ও চিকিৎসা গ্রহণ
নিজ গৃহে ফিরে আসার পর চিকিৎসক এসে তার দেহ থেকে থেতলে যাওয়া নষ্ট গোশত কেটে ফেলেন এবং তাঁর চিকিৎসা করতে থাকেন। খলিফার প্রতিনিধি ইমাম আহমাদের খোঁজখবর রাখছিলেন। আল্লাহ তাঁকে সুস্থতা দান করার পর তিনি কিছুদিন জীবিত থাকেন। যারা তার ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল তন্মধ্যে বিদ’আতীদের ব্যতীত তিনি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করতে থাকেন— ‘তারা যেন তাদের ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপক্ষো করে।’ (সুরা নূর: ২২)
নির্যাতনের পর ইমাম আহমাদের অবস্থান
রাজদরবার থেকে ইমাম আহমাদ নিজ বাড়িতে ফিরে এসে অবস্থান করতে থাকেন। নিজ সম্পদ থেকে প্রতি মাসে প্রাপ্ত মাত্র সতের দিরহাম দিয়ে পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় নির্বাহ করতেন এবং তাতেই তুষ্ট থাকতেন। এরপর খলিফা মুতাওয়াক্কিল যখন খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি নির্যাতনের ধারা তুলে নেন। কিন্তু ইবনুল বালখী নামক এক বিদ’আতী খলিফার কাছে নালিশ করল যে, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের আশ্রয়ে জনৈক ব্যক্তি গোপনে লোকদের থেকে বায়’আত নিচ্ছে। ফলে খলিফার নির্দেশে রাতে আহমাদ বিন হাম্বলের ঘরে তল্লাশি চালানো হয়। খলিফার লোকেরা ইমাম সাহেবের গৃহে তল্লাশি করে বুঝতে পারে যে, ইমাম আহমাদের ওপরে অপবাদ দেয়া হয়েছে।
খলিফা মুতাওয়াক্কিলের কাছে যখন এ সংবাদ গেল এবং জানতে পারলেন যে, ইমাম আহমাদ নির্দোষ, তখন তিনি ১০ হাজার দিরহাম ইমাম আহমাদের কাছে প্রেরণ করেন। কিন্তু ইমাম আহমাদ মুদ্রাগুলো গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। খলিফার দূত ইয়াকূব বিন ইবরাহীম বললেন, ‘হে আবূ আব্দুল্লাহ! মুদ্রাগুলো গ্রহণ করাই আপনার জন্য কল্যাণকর মনে করছি’। এই বলে তিনি দিরহামগুলো ইমাম আহমাদের নিকটে রেখে চলে গেলেন।
ইমাম আহমাদ মুদ্রাগুলো দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করে দেন। এমনকি তিনি একটি দিরহামও রাখেননি। মুদ্রাগুলো যে থলেতে ছিল তিনি সেটাও দান করে দেন। অথচ তার পরিবারের লোকজন তখন চরম অভাব-অনটনে জীবন যাপন করছিল। খলিফা মুতাওয়াক্কিল ইমাম আহমাদকে তার কাছে যাওয়ার জন্য বলেন। বিষয়টি ইমাম আহমাদকে অবহিত করা হলো। ইমাম আহমাদ বললেন, আমি বৃদ্ধ ও দুর্বল। কিন্তু খলিফা পুনরায় সংবাদ পাঠালেন, যে কোনো প্রকারেই হোক তাঁকে আমার কাছে আসতেই হবে।
অসুস্থতা সত্ত্বেও ইমাম আহমাদ ছেলে ও এক স্ত্রীকে নিয়ে খলিফার দরবারে পৌঁছালেন। শীর্ষ নেতৃবর্গ প্রতিদিন ইমাম আহমাদের নিকট উপস্থিত হয়ে খলিফার সালাম পৌঁছাতেন। খলিফা তার কাছে উক্ত গৃহের উপযোগী কোমল বিছানা ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠিয়ে দেন। খলিফা প্রতিদিন তাঁর কাছে ঝুড়ি ভর্তি রকমারি খাদ্য, ফল-ফলাদি ও বরফ পাঠিয়ে দিতেন। খলিফা ভাবতেন, তিনি তা থেকে আহার করছেন। কিন্তু ইমাম আহমাদ তা থেকে কিছুই খেতেন না। বরং তিনি লাগাতার সিয়াম রাখতেন। এভাবে কোনো খাদ্য গ্রহণ না করে তিনি আট দিন অবস্থান করেন। এ ছাড়াও তিনি ছিলেন অসুস্থ। ওবায়দুল্লাহ বিন ইয়াহ্ইয়া বিন খাকান খলিফার পক্ষ থেকে উপঢৌকন হিসেবে বিপুল সম্পদ নিয়ে উপস্থিত হন। কিন্তু ইমাম আহমাদ সেগুলো গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। ওবায়দুল্লাহ বিন ইয়াহ্ইয়ার পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও তিনি তা গ্রহণ করলেন না। অগত্যা আমীর সম্পদগুলো নিজ হাতে ইমাম আহমাদের পরিবার-পরিজনের মাঝে বণ্টন করে দেন।
খলিফা তাঁর জন্য প্রতি মাসে চার হাজার দিরহাম নির্ধারিত করে ভাতা চালু করলে ইমাম আহমাদ (রহ.) খলিফাকে নিষেধ করেন। তিনি তার পরিবারকে বলেন, ‘আমার আর অল্প ক’টা দিন বাকি। আমার মরণ চলে এসেছে। তারপর হয়তো জান্নাতে যাব বা জাহান্নামে যাব। আমরা কি এমন অবস্থায় দুনিয়া থেকে যাব যে আমাদের পেট এসব সম্পদ গ্রহণ করেছে’। কিন্তু পরিবারের লোকেরা সহিহ হাদিসের মাধ্যমে তার বিপক্ষে দলিল দেন যে, ‘প্রার্থনা ও মোহ ব্যতীত এ সম্পদ থেকে যা কিছু তোমার নিকট আসবে, তা তুমি গ্রহণ করবে’। (বুখারি: ১৪৭৩; মুসলিম: ১০৪৫)
তাছাড়া তারা এ যুক্তিও পেশ করে, ইবনু ওমর ও ইবনু আব্বাস (রা.) বাদশাহর হাদিয়া গ্রহণ করেছেন। জবাবে তিনি বললেন, ‘এটা আর ওটা সমান নয়। আমি যদি জানতাম, এ সম্পদ জোর-জুলুম ছাড়া বৈধভাবে সংগৃহীত হয়েছে, তাহলে আমি পরওয়া করতাম না।’
রোগ বৃদ্ধি ও অন্তিম অবস্থা
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের দুর্বলতা বাড়তে থাকে। খলিফা ডাক্তার প্রেরণ করেন। ডাক্তার বললেন, ‘আমীরুল মুমিনীন! তার রোগ হলো খাদ্যের স্বল্পতা এবং সিয়াম ও ইবাদতের আধিক্য। তারপর খলিফার মা ইমাম আহমাদকে দেখার জন্য তার নিকটে আবেদন পাঠালেন। ইমাম আহমাদ প্রথমে অপরাগতা প্রকাশ করলেও পরে এ আশায় সম্মতি প্রদান করেন, তাতে হয়তো তিনি তাড়াতাড়ি বাগদাদে ফিরে যেতে পারবেন। ইমাম আহমাদের নির্দেশে একটি খচ্চর নিয়ে আসা হলো। ইমাম আহমাদ তাতে আরোহণ করে খলিফার মজলিসে এসে উপস্থিত হলেন।
খলিফার মা বললেন, বৎস! এ লোকটির ব্যাপারে মহান আল্লাহকে ভয় কর। তুমি লোকটাকে তার পরিজনের কাছে ফিরিয়ে দাও। খলিফা তাকে চলে যাওয়ার অনুমতি দেন এবং তার জন্য একটি জাহাজ প্রস্তুত করেন। কিন্তু ইমাম আহমাদ তাতে আরোহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি একটি ছোট নৌকায় চড়ে গোপনে বাগদাদে প্রবেশ করেন। ইমাম আহমাদ কিছুদিন ধরে খলিফা ও তার লোকদের সঙ্গে মেলামেশার জন্য আক্ষেপ করতে থাকেন এবং বলতে থাকেন, আমার জীবনের দীর্ঘ সময় তাদের থেকে নিরাপদ ছিলাম। কিন্তু শেষ বয়সে এসে বিপদগ্রস্ত হলাম।
খলিফার কাছে থাকাকালে ইমাম আহমাদ তীব্র অনাহারে কাতর হয়ে পড়েছিলেন এবং মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার উপক্রম হয়েছিলেন। এরপরও তিনি খলিফার দেয়া কোনো খাদ্য ও উপহার গ্রহণ করেননি। ইমাম আহমাদের পুত্র আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বলেন, আব্বাজান ছামুর্রা থেকে ফিরে আসার পর আমরা দেখতে পেলাম, তার চক্ষুদ্বয় কোটরে ঢুকে গেছে। ছয় মাসের আগে সুস্থ ও সতেজ হননি।
শেষ বিদায়
২৪১ হিজরিতে রবিউল আউয়াল মাসের জুমার দিনে এই মহান মুজতাহিদ, সুন্নাতের ধারক ও হাদিসের রক্ষক আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে জগতবাসীকে কাঁদিয়ে পরপারের যাত্রী হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।
খলিফা তাঁর জন্য কাফনের কাপড় পাঠালে ইমাম সাহেবের ছেলেরা তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। কেননা ইমাম আহমাদ জীবদ্দশায় খলিফার কোনো কিছু গ্রহণ করতেন না। বরং তার ছেলেরা একটি কাপড়ের ব্যবস্থা করেন, যা ইমাম সাহেবের বাড়ির চাকরানী বুনন করেছিল।
তাঁর মৃত্যুতে মানুষের এত ভিড় হয়েছিল যে, রাজপথ সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাঁর জানাজায় বিপুল সংখ্যক লোকের সমাগম হয়েছিল বিধায় একাধিকবার তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ