নারী-অধিকার ও নারী মুক্তির কথা বেশ জোরেশোরে বলা হয়। বিষয়টি গুরুতর, কোনো সন্দেহ নেই। পাশ্চাত্য সভ্যতার চমকধাঁধায় বিভ্রান্ত লোকেরা মনে করে, নারী-নির্যাতনের কারণ হলো নারীর অর্থনৈতিক পরনির্ভরতা এবং ক্ষমতার অভাব। তাই নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে হবে এবং নারীর ক্ষমতায়ন করতে হবে। পাশ্চাত্য সমাজ ও সভ্যতা এ পথে নারী-অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান তো দূরের কথা, তাতে এমন হাজারো সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে যে, সমাজবিজ্ঞানী ও চিন্তানায়কগণ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এই সেদিন, মাসখানেকও হবে না, লাখ লাখ মানুষের সমাবেশে পোপ নিজে আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমাদের খ্রিস্টান-বিশ্বের পারিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে।’
স্বাবলম্বিতা যে নারী-মুক্তির কোন উপায় নয়, এটা পানির মতো সহজ বিষয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটা হয়ে দাঁড়ায় নারীকে শোষণ করার আরেকটি ফাঁদ। সিংহভাগ ক্ষেত্রে এই উপার্জনই নারীর জন্য নতুন সমস্যা ডেকে আনে। নারী উপার্জন করে, প্রায় সিংহভাগ ভোগ করে পুরুষ। আর নারীর ক্ষমতায়ন? এটা অবাস্তব কথা। দুর্বল কখনো ক্ষমতাবান হয় না। প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহ যাকে দুর্বল করে বানিয়েছেন, কীভাবে সে ক্ষমতাবান হবে? তার হাতে যত ক্ষমতাই আসুক কীভাবে সে তা প্রয়োগ করবে? আল্লাহ যাকে প্রকৃতিগতভাবে শক্তিশালী করে বানিয়েছেন সেকি এই ক্ষমতা প্রয়োগ মেনে নেবে? না বিরোধ ও সংঘাত দেখা দেবে? ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা দরকার, নারীর প্রতি, পরিবারের প্রতি, সন্তান-সন্ততির প্রতি, সমাজ-সংসারের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে বিষয়টি বোঝা দরকার। এখানে আবেগতাড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ নারী দুর্বল এবং সুন্দর, পুরুষ শক্তিশালী এবং রুক্ষ-অসুন্দর। এমন কোনো ব্যবস্থা থাকতে হবে যা নারীর দুর্বলতা ও সৌন্দর্যকে সুরক্ষা দান করতে পারে, পক্ষান্তরে পুরুষের শক্তি ও রুক্ষতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটা সম্ভব শুধু এবং শুধু ইসলামের সামগ্রিক ব্যবস্থা কার্যকর করার মাধ্যমে।
একথাগুলো মনে পড়লো আজকের পত্রিকা পড়ার সময়। কী লোমহর্ষক, কী নিষ্ঠুর, কী পাশবিক ঘটনা! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, পাড়াগায়ের অশিক্ষিতা-অবলা কোনো নারী নয়! রীতিমতো ক্ষমতাবতী একজন নারী! দিনের পর দিন অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সমাজ জানতে পেরেছে চূড়ান্ত নিষ্ঠুরতা ঘটে যাওয়ার পর। একটি পুরুষের হিংস্রতার মুখে তার অসহায়ত্ব দেখো! মাকে, বাবাকে পর্যন্ত কিছু বলেনি। কেন বলেনি? একটা মাত্র হুমকি দিয়েছিল বিবাহবিচ্ছেদের। পরিণাম?! না হয় বিবাহবিচ্ছেদ। সমাধান তো আসবে না! শান্তি ও স্বস্তির সমাধান! নিশ্চিন্ততা ও নিরাপত্তার সমাধান!
নারীর জন্য ইসলামের যে সুরক্ষা, তা না নারী নিজে গ্রহণ করছে, না সমাজ গ্রহণ করছে, আর না দেশের শাসনব্যবস্থা পুরুষের শক্তি, ক্ষমতা ও পশুত্বকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইসলামের দেয়া ব্যবস্থা কার্যকর করছে। এখন কী হবে? মেয়েটি অন্ধ হবে, লোকটিকে জেলে দেয়া হবে, আর ছোট্ট শিশুটি আশ্রয়হীন হবে? কিন্তু ঘটনা থামবে না। পাশ্চাত্যে থামেনি, এখানেও থামবে না। এভাবে সমাধান হবে না। পত্রিকায় তো একটি খবর এসেছে। গরিব বস্তির কথা বাদ দাও, পারাগাঁয়ের কথা বাদ দাও। শিক্ষিত সমাজে, অর্থ ও ক্ষমতার বৃত্তে বাসকারী সমাজে কত অসংখ্য নারী এভাবে চরম নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে। মুখ খোলারও উপায় নেই। খুব বেশি হলে ঘর ভাঙবে, কিন্তু সেটা তো সমাধান নয়।
একটা জিনিস সব সময় দেখে আসছি, পর্দাহীনতা (নারী এবং পুরুষের উভয়), অবাধ মেলামেশা, ভোগের স্বেচ্ছাচার কোনো না কোনোভাবে শেষ পর্যন্ত ঘুরে ফিরে এগুলোই হচ্ছে নারী নির্যাতনের মূল কারণ। নারী-পুরুষ উভয়ের জীবনকে ইসলামের কঠোর অনুশাসনের অধীনে আনা হলেই শুধু নারী নির্যাতন বন্ধ হবে, নারীর অধিকার সুরক্ষিত হবে, এছাড়া কোনো উপায় নেই। অবাধ মেলামেশার জীবনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কখনো পুরুষ কখনো নারী, কখনো উভয়ে অশান্তির আগুনে দগ্ধ হতে থাকে। মাঝে মধ্যে বিভিন্নভাবে বিস্ফোরণ দেখা দেয়। এখানেও যা পাশ্চাত্যেও তা, পার্থক্য শুধু প্রকারে ও মাত্রায়। আমাদের দেশ, আমাদের সমাজ একবার অন্তত ইসলামের সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেখুক না। কত বাদ-মতবাদই তো গ্রহণ করা হয় এবং ব্যর্থ হলে পরিত্যাগ করা হয়। ইসলামকে একবার গ্রহণ করে দেখুক না! যদি জীবনে শান্তি না আসে (যার কোনো সম্ভাবনাই নেই) তাহলে আবার ফিরে যাবে আগের জীবনে।
ইসলামকে একবার একটা সুযোগ দিয়ে দেখুক না! আসলে বলা দরকার, ইসলামের দেয়া শান্তিপূর্ণ জীবনের সুযোগ মানুষ একবার গ্রহণ করে দেখুক না, অন্তত পরীক্ষামূলকভাবে। এভাবে অশান্তির আগুনে জ্বলেপুড়ে ছারখার হওয়ার চেয়ে তো অনেক ভালো।
দেখুন, একটা কথা আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই। ঘটনা যাই ঘটুক, লোকটা যেসব বাজে কথা বলছে তা সত্যও যদি হয়, এ নিষ্ঠুরতা ও পাশবিকতা অমার্জনীয়, এর কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার। দুর্বল নারীর উপর সবল পুরুষের হিংস্রতা ও পাশবিকতা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। আমি শুধু বলতে চাচ্ছি, এটা সমাধান নয়। আমাদের আসতে হবে সমাধানের কাছে এবং তা একমাত্র ইসলাম। বলতে ইচ্ছা করে, ‘পরীক্ষা প্রার্থনীয়’।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ