ঢাকা, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল হিজরী সন

প্রকাশনার সময়: ১০ জুলাই ২০২৪, ১৭:০৬

নবীজি (সা.) এবং সাহাবাগণ অবর্ণনীয় নির্যাতনের মুখে প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনাতে হিজরত করেছিলেন। এ হিজরতকে কেন্দ্র করেই হিজরী সনের প্রবর্তন হয়েছে। সাহাবায় কেরাম হিজরত থেকে সাল গণনার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। কারণ হিজরত ছিল আত্মত্যাগ ও আত্মবিসর্জনের এক সাহসী পদক্ষেপ। নিজের ঘড়বাড়ি, জমিজমা ও ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে হিজরত করাটা ছিল অনেক বড় ত্যাগ ও কোরবানী।

মুহাজিরদের ত্যাগ

মুহাজিরদের দেশ ছাড়তে হয়েছিল শুধু ইসলাম গ্রহণ করার কারণে। তারা ইসলাম কবুল না করলে তাদের ওপর নির্যাতন আসত না আর ঘরবাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সর্বস্ব হারিয়ে হিজরত করতে হতো না। তারা হাসিমুখে সব নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং দেশান্তরিত হয়েছেন শুধু ইসলামের জন্য। যেমন সুহাইব (রা.) মক্কা থেকে বের হয়ে হিজরতের উদ্দেশে মদিনার পথ ধরলেন। কুরাইশদের একটি দল তার পিছু ধাওয়া করল। সুহাইব (রা.) তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে একটি উঁচু টিলার ওপর উঠে তীর ও ধনুক বের করে তাদেরকে সম্বোধন করে বলেন, ‘কুরাইশ সম্প্রদায়! তোমরা জানো, আমি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক তীরন্দাজ ও নিশানাবাজ ব্যক্তি। আল্লাহর কসম, আমার কাছে যতগুলো তীর আছে, তার প্রত্যেকটি দিয়ে তোমাদের একেকজন করে খতম না করা পর্যন্ত তোমরা আমার কাছে আসতে পারবে না। তারপর আমার তরবারি তো আছেই।’ কুরাইশদের এক জন বলল, ‘আল্লাহ কসম! তুমি জীবনও বাঁচাবে এবং অর্থ-সম্পদও নিয়ে যাবে তা আমরা হতে দেব না। তুমি মক্কায় এসেছিলে শূন্য হাতে। এখানে এসেই এসব ধন-সম্পদের মালিক হয়েছ।’ সুহাইব (রা.) বললেন, ‘আমি যদি আমার ধন-সম্পদ তোমাদের হতে তুলে দেই, তোমরা আমার রাস্তা ছেড়ে দেবে?’ তার বলল, ‘হ্যাঁ’। সুহাইব (রা.) তাদেরকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গেলেন এবং সব ধন-সম্পদ তাদের হাতে তুলে দিলেন। কুরাইশরাও তাঁর পথ ছেড়ে দিল। এভাবে সুহাইব দ্বীনের খাতিরে সব কিছু ত্যাগ করে মদিনায় চলে এলেন। রাসুল (সা.) তাকে আসতে দেখে উৎফুল্ল হয়ে বলে ওঠেন, ‘আবু ইয়াহইয়া, ব্যবসা লাভজনক হয়েছে।’ তিনবার তিনি একথা বলেন। এ কথার সমর্থনে জিবরীল (আ.) ওহী নিয়ে হাজির হলেন, ‘কিছু মানুষ এমনও আছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের জীবনও বিক্রী করে দেয়। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান।’ (সুরা বাকারা: ২০৭; মুসনাদুল হারেস: ৩/১০৯; আসহাবে রাসুলের জীবন কথা: ২/১৭)

আনসারদের বিরল ত্যাগ

মক্কার মুহাজিরদের প্রতি মদিনার আনসারদের সহযোগিতা, বিরল ত্যাগ ও ভালোবাসার অনুপম দৃষ্টান্তের কথা আলোচিত হয়েছে কোরআন-হাদীসের বিভিন্ন জায়গায়। রাসুল (সা.) মদিনায় মুহাজির ও আনসারদিগকে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করার যে মহৎ কর্ম সম্পাদন করেন তা মানব ইতিহাসের এক গৌরবদীপ্ত মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তিনি ঘোষণা করেন, ‘আল্লাহর পথে তোমরা দু’জন দু’জনে ভাই ভাই হয়ে যাও।’ সে সময় মুসলমানগণ যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন এ ভ্রাতৃত্বের বিধান ছিল তার চমৎকার সমাধান। রাসুল (সা.) আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) এবং সাদ ইবনে রবি (রা.) এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছিলেন। এরপর সাদ ইবনে রবি (রা.) আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা.)কে বললেন, আনসারদের মধ্যে আমি সবচেয়ে ধনী। আপনি আমার ধন-সম্পদের অর্ধেক গ্রহণ করুন। (বুখারী: ১/১৫৩)।

আনসাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নবী কারিম (সা.) এর কাছে নিবেদন করলেন যে, আপনি আমাদের এবং আমাদের ভাইদের মধ্যে আমাদের খেজুরের বাগানগুলো বণ্টন করে দিন। নবী কারিম (সা.) তা না করে আনসারদের বাগানে মুহাজিরদের কাজে নিযুক্ত করে দিয়ে মুহাজিরদের স্থায়ী কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলেন।

মদিনার আনসারদের অমায়িক ও আন্তরিক ব্যবহারে মক্কার মুহাজিরগণ এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে মক্কা বিজয়ের পরেও তারা থেকে গিয়েছিলেন মদিনাতে। মক্কা বিজয়ের দিনে আনসারদের মন ছিল ভীষণ খারাপ। তারা ভাবলেন রাসুল হয়তো তার জন্মভূমি মক্কাতেই থেকে যাবেন। আর তারা বঞ্চিত হবেন প্রিয় নবীর বরকতময় সান্নিধ্য থেকে। এ কথা শোনামাত্রই রাসুল (সা.) তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বললেন, ‘যারা আমাকে আমার দুর্দিনে আশ্রয় দিয়েছে আমি আমার বাকী জীবন তাদের সঙ্গেই কাটিয়ে দিতে চাই।’

আজ দিকে দিকে মার খাচ্ছে আখেরি নবীর (সা.) এ উম্মত। তারা যদি হিজরতের বিরল আত্মত্যাগ ও হিজরী সনের গভীর তাৎপর্য থেকে শিক্ষা নিয়ে বাস্তব জীবনে তার প্রতিফলন ঘটায় তাহলে মুসলমানদের বর্তমান দুর্গতি ও দুর্দশা অনেকাংশেই লাঘব হবে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ