ঢাকা, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কালিয়াকৈরে খেজুর গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত গাছিরা

প্রকাশনার সময়: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৩০

বাংলার প্রকৃতির ঋতুবৈচিত্র্য এখন হেমন্তের মাঝামাঝি। দিনে মিষ্টি রোদ, ভোরে পাতায় শিশির বিন্দু আর হালকা কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। আর শীতকে সামনে রেখেই খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাজীপুরের কালিয়াকৈরের গাছিরা।

উপজেলার আন্ধারমানিক এলাকায় অবস্থিত ফিল্ম সিটির প্রায় ১০০ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে প্রায় ৭ শতাধিক খেজুর গাছ। তবে এ বছর প্রায় ৫০০টি খেজুর গাছ প্রস্তুত করা হয়েছে। তবুও গতবারের চেয়ে এবার বেশি রস সংগ্রহ করা যাবে বলে ধারণা গাছিদের।

ফিল্ম সিটির মূল ফটক থেকে শুরু করে দু'পাশের দীঘির পাড়ে সারি সারি ছোটবড় খেজুর গাছ। এসব খেজুর গাছে কয়েক মাস ধরে ৪ জন গাছি ও ২ জন সহকারী রস সংগ্রহের উপযোগী করে তুলেছে গাছকে। গাছ থেকে সংগৃহীত রস থেকে শুরু হবে গুড় উৎপাদন।

অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ঝিরঝিরে বাতাসের চিরসবুজের অপরূপ সকালে সকলের মন মাতিয়ে তুলবে মিষ্টি খেজুর রস ও গুড়। খুব কাকডাকা ভোর থেকে চলবে রস সংগ্রহ। সন্ধ্যায় চলবে গাছ পরিচর্যার কাজ।

তবে সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ ও রস সংগ্রহের জৌলুষ। এক দশক আগেও পতিত জমিতে, ক্ষেতের আইলে, ঝোপঝাড়ের পাশে ও রাস্তার দু’ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। এক সময় সন্ধ্যার গ্রামীণ পরিবেশ খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠত। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য ছিল চোখে পড়ার মতো। ভোর থেকে শুরু করে সারাবেলা গাছিরা মেতে থাকতেন রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালি তৈরির কাজে। যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুরগাছ। সেই আমেজ এখন আর নেই।

মুনজর আলী নামে এক গাছি জানান, গাছ একবার ছাঁটলে তিন-চার দিন রস সংগ্রহ করা যায় এবং পরবর্তীতে তিন দিন শুকাতে হয়। এভাবে কাটলে গাছের রস সুমিষ্ট হয়। রস সাধারণত নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়। রস সংগ্রহের পর হাড়ি পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে হয় অথবা আগুনে ছেকে নিতে হয়। এতে সংগৃহীত রসে গাঁজন বন্ধ হয়।

আরেক গাছি জানান, খেজুরের গাছ কমে যাওয়ায় তাদের চাহিদাও কমে গেছে। আগে এ কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চালাতেন। এমনকি আগে যে আয় রোজগার হতো তাতে সঞ্চয়ও থাকতো। বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, তাতে এক সময় হয়তো দেশে খেজুর গাছই থাকবে না।

খেজুরের গুড় উৎপাদনকারী আশরাফুল ইসলাম শাহীন নয়া শতাব্দীকে বলেন, ৬০ বিঘা জমিটি লিজ নিয়েছি। এখানে প্রায় ৭ শতাধিক খেজুর গাছ রয়েছে। তবে ৫শ খেজুর গাছ রস সংগ্রহ উপযোগী করা হয়েছে। বাজারে যে ভেজাল বা চিনি মিশ্রিত গুড় পাওয়া যায়, এটা থেকে বেরিয়ে সাধারণ মানুষকে ভালোমানের খাঁটি গুড় খাওয়াতে চাই। তাই কাঁচা রস বিক্রির পর অবশিষ্ট রস দিয়ে গুড় তৈরি করছি।

নয়া শতাব্দী/এমআর/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ