দেশে ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাকের সবচেয়ে বড় কারণ হিসাবে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং দাম্পত্যজীবন চালিয়ে নিতে অক্ষমতাকেই দায়ী করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নতুন এক জরিপের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২২’ শিরোনামের এই জরিপ প্রতিবেদনটি গত ৩১ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়।
বিবিএসের এই জরিপে তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের দুই ধরনের হার পাওয়া যায়। একটি হলো- স্থূল, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার অনুপাতে বিবাহবিচ্ছেদের হার। অন্যটি- সাধারণ বিবাহবিচ্ছেদের হার, যেখানে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের হিসাব করা হয়।
বিবিএস বলছে, তারা বিচ্ছেদ হওয়া মানুষের নিবিড় সাক্ষাৎকার নিয়ে জরিপটি করেছে। ফলে এই জরিপের মাধ্যমেই বিচ্ছেদের আসল কারণ উঠে এসেছে।
বিবিএসের হিসাবে, ২০০৬ থেকে ২০২১ সাল সময়ে স্থূলবিচ্ছেদের হার ০.৬ থেকে ১.১–এর মধ্যে ওঠানামা করেছে। ২০২২ সালে তা বেড়ে ১.৪–এ দাঁড়ায়।
তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের যেসব কারণ তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে বড় কারণ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। জরিপে উত্তরদাতাদের প্রায় ২৩ শতাংশ এই কারণকে সামনে এনেছেন। এরপর রয়েছে দাম্পত্যজীবন পালনে অক্ষমতা (২২ শতাংশ)।
ভরণপোষণের ব্যয় বহন করতে অসামর্থ্য অথবা অস্বীকৃতি, পারিবারিক চাপ, শারীরিক নির্যাতন, যৌন অক্ষমতা বা অনীহা ইত্যাদিও রয়েছে বিবাহবিচ্ছেদের কারণের তালিকায়।
এদিকে, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে সবচেয়ে বেশি বিচ্ছেদ হয়েছে ঢাকা বিভাগে, কম ময়মনসিংহ বিভাগে। দাম্পত্যজীবন পালনে অক্ষমতায় বিবাহবিচ্ছেদ বেশি বরিশালে, কম সিলেটে। ভরণপোষণ দিতে অসমর্থতার কারণে বিবাহবিচ্ছেদ বেশি রাজশাহীতে, কম চট্টগ্রামে।
অন্যদিকে শারীরিক নির্যাতনকে বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন মুসলমানদের ১০ শতাংশের কম। হিন্দুদের ক্ষেত্রে হারটি ২০ শতাংশের কাছাকাছি।
এছাড়া দেশে বিয়ের হার আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। ২০২২ সালে সাধারণ বিয়ের হার পাওয়া গেছে ২৫–এর কিছু বেশি। ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে ওই বছর যত জনের বিয়ে হয়, সেটা সাধারণ বিয়ের হার। এই হার ২০২১ সালে ছিল ১৮.৫ শতাংশ।
জরিপ প্রতিবেদনে, ২০০৬ সাল থেকে সাধারণ বিয়ের হারের গতিধারাও তুলে ধরা হয়েছে। জরিপে দেখা যায়, সাধারণ বিয়ের হার এক বছরের ব্যবধানে অনেকটা বেড়েছে। এর আগের বছরগুলোতে তা ১৭ থেকে ২১–এর মধ্যে ছিল।
২০২২ সালে সাধারণ বিয়ের হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে করোনাকালের অর্থনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার সম্পর্ক দেখছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ২০২০ ও ২১ সালের ধাক্কা অনেকটা কাটিয়ে ওঠার পর ২০২২ সালে বিয়ের হার বেড়েছে, গ্রামে এ হার বেশি।
নয়াশতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ