বাংলাদেশ সরকারের অনুদানপ্রাপ্ত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র, ‘দ্য লক্ষণ দাস সার্কাস’ ভারতের কলকাতায় অনুষ্ঠিত ১৩তম কলকাতা শর্ট ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এ ‘অনারেবল জুরি মেনশন’ এওয়ার্ড অর্জন করেছে।
এছাড়াও গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত দিল্লির ১৪তম দাদা সাহেব ফালকে চলচ্চিত্র উৎসব এ ‘ফেস্টিভ্যাল স্পেশাল মেনশন- ২০২৪’ সম্মাননা অর্জন করে। এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটির চলচ্চিত্রের প্রযোজক ও পরিচালক ঝুমুর আসমা জুঁই। বাংলাদেশের বিলুপ্ত প্রায় ঐতিহ্যকে নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন নির্মাতা। তিনি মনে করেন প্রতিটি দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ভিন্ন ভিন্ন। এই ঐতিহ্যগুলো অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশকে আালাদা করে। শুধু ঐতিহ্যকে তুলে ধরা নয়। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এসব ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরী। তাই নির্মাতা দায়িত্ব দায়বদ্ধতা এবং ভালোবাসা থেকে এই ধরবেন ঐতিহ্যবাহী চলচ্চিত্র কাজ করতে পছন্দ করেন।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুক্তির সংগ্রাম। লক্ষণ দাস তখন বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য ও সহযোগিতা করতেন। শ্রী লক্ষণ দাস প্রাণ হারালেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে। তার আদরের হাতিটাকেও পাঁচটা গুলি করা হলো। সমাপ্ত হল এক মহান সার্কাস শিল্পীর জীবন।
স্বাধীনতার পর তার দুই ছেলে শ্রী অরুণ দাস ও শ্রী বীরেন দাস আবার দল গঠন করলেন। যার নাম দেয়া হলো ‘দ্য রয়েল বেঙ্গল সার্কাস’ ও ‘দ্য লক্ষণ দাস সার্কাস’। বিগত ৬০ বছর ধরে কোনো প্রাপ্তির আশা না করে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সার্কাস এর মাধ্যমে সুস্থ বিনোদন দিয়ে আসছেন তারা। সার্কাসের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে কঠিন সংগ্রাম। এই দলের আছে তিনটা নৌকা। একটা সময় এখানে ৭০ থেকে ৮০ জন শিল্পী সবসময় অবস্থান করতো। দলটি নৌকায় থাকে। বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে সার্কাস প্রদর্শন করতো। কিন্তু বর্তমানে সার্কাসের কোনো শো তেমন নেই বললেই চলে।
১৯৪৭ সালের দিকে শ্রী লক্ষণ দাস একটি সার্কাসের দল গঠন করেন। যার নাম রাখা হয় ‘দ্য রয়েল পাকিস্তান সার্কাস’। বনের রাজা যেমন রয়েল বেঙ্গল টাইগার, তেমনি সার্কাসের রাজা লক্ষণ দাস। তিনি যখন খেলা দেখাতেন দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসতো দেখার জন্য।
অরুণ দাস বলেন, সমস্যা হচ্ছে সার্কাসের জন্য অনুমতি পাওয়া। আর এতো বড় আয়োজন অনুমতি ছাড়া করা সম্ভব না।
সার্কাস শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আজীবন সংগ্রাম করে যাওয়া মানুষগুলোর পাশে থাকাই এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটির মূল উদ্দেশ্য। বিলুপ্তপ্রায় এই শিল্পটিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাঁচিয়ে রাখা খুব জরুরী। এই শিল্পকে সংরক্ষণ করতে ‘দ্য লক্ষন দাস সার্কাস’-এর মতো আরও বেশি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।
সার্কাসের শুরুটা কবে, তার ঠিক দিন-তারিখ নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। তবে আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই যে, রোমে সার্কাসের ধারা প্রচলিত ছিলো। পরে লন্ডনে ফিলিক্স এ্যাসলে নামে এক ভদ্রলোক সার্কাসের প্রবর্তন করেন।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ