শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে বর্তমানে দ্বায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ। নতুন উপাচার্যের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও ভাবনা তুলে ধরেছেন দৈনিক নয়া শতাব্দীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফরহাদ আলম।
অভিভাবক হিসেবে একজন উপাচার্যের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কিছু প্রত্যাশা থাকে। পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। নবনিযুক্ত উপাচার্যের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, তিনি সর্বদা বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যান নিয়ে ভাববেন। এই কল্যাণে ব্রতী হবার বাসনায় যারা লিপ্ত তাদেরকে গাইড হিসেবে গ্রহণ করবেন। ভিসির কক্ষে ঠাঁই হবে না কোনো মোসাহেবির।
ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছ থাকবেন। যেকোনো নিয়োগে সৎ, দক্ষ, ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্নদের প্রাধান্য দিবেন। কোনো অনিয়ম অভিযোগ থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি মাদকমুক্ত নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক গবেষণায় বিশ্বমানের ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলবেন এসবই আমাদের কাম্য। বর্তমান উপাচার্য এমন একটি বিশ্বমানের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন বলে বিশ্বাস করি।
ইমরান খান
সাবেক সভাপতি,
শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা সঠিকভাবে পালন করার আশা করি। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীবান্ধব এমন একটি ক্যাম্পাস তৈরি করবেন, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী তার মেধাবিকাশের সর্বোচ্চ সহযোগিতা পায়। শুধু একাডেমিক পড়াশোনার চাপ নয়, সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমগুলো যাতে সুন্দরভাবে চলতে পারে এজন্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশা করি। শুদ্ধ বুদ্ধির চর্চা, মেধার বিকাশ এবং গবেষণা আরো সমৃদ্ধতর হোক, এটাই প্রত্যাশা।
কাইয়ুম কাফি সভাপতি, শেকৃবি ডিবেটিং সোসাইটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করা সাথে বন্ধ হয়ে যাওয়া সার্ক ট্যুর চালু, প্রতি সেমিস্টার ফিল্ড ট্রিপের ব্যবস্থা করা। ক্লাস রুম গুলোর প্রয়োজনীয় সংস্করণ করা। গবেষণা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সংস্করণ, নিত্য নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তির সংযোজন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমের মান উন্নয়ন করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেক্টরে যেসব অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো নির্মূল পূর্বক স্বচ্ছতা আনবেন আশা করি। সর্বোপরি, স্যার একজন শিক্ষার্থী-বান্ধব অভিভাবক হবেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি।
এহসানুল কবির
সিনিয়র রোভারমেট
স্নাতকোত্তরের দুটি সেশন একসাথে হওয়ায় এমএস এর ক্লাস রুম সংকট সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন। প্রতি সেমিস্টারে সম্মানিত শিক্ষকদের মান মূল্যায়নের ব্যবস্থা করে শিক্ষার মান বাড়ানো। উচ্চতর শিক্ষার জন্য অন্যান্য দেশে এপ্লিকেশনের রিপ্লে আসতে অনেক সময় লাগে তাই এডুকেশনাল মেইলের মেয়াদ না রাখা। সকলের প্রাণের দাবি কৃষি অনুষদে ইন্টার্ন সিস্টেম চালু করা। সর্বোপরি দুর্নীতি মুক্ত শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাশা করি।
আল মোন্তাকিম মাহদী নোমান
দলনেতা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়হীন দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির প্রভাবমুক্ত সুস্থ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতকরণ। শেকৃবি একটি টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় থিওরি পড়াশোনার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ব্যবহারিক এবং উন্নত কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ক পড়াশোনাকে কোর্স কারিকুলামের অন্তর্ভুক্তকরণ। শিট মুখস্ত করার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে বই নির্ভর পড়াশোনার ব্যাপারে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদেরকে উৎসাহিতকরণ। পর্যাপ্ত গবেষণার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকরণের নিমিত্তে ল্যাব সুবিধা বৃদ্ধিকরণ (বিশেষকরে ASVM অনুষদ)। বিগত বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিকভাবে অনেকটাই পিছিয়ে গেছে, সেই অবস্থার উত্তরণকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবগুলোর সুবিধা বৃদ্ধিকরণ। টিএসসিতে সকল ক্লাবের জন্য কক্ষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করা। সকল আবাসিক হলগুলোতে এবং কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়াতে স্বাস্থ্যকর এবং মানসম্মত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে উদ্দ্যোগ গ্রহণের সাথে নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা করা।
সুমাইয়া শওকত বিভা সভাপতি, শেকৃবি ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব।
নতুন উপাচার্যের কাছে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে প্রথম প্রত্যাশাই হলো সেশনজট মুক্ত ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়কে মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনের দিক থেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। দীর্ঘদিন যাবত শেকৃবি কম্পিউটার ক্লাবে কাজ করার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছি, প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো নিজস্ব কম্পিউটার না থাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব, সাইবার ক্যাফের যেসকল কর্মক্ষম কম্পিউটার আছে সেটা ব্যবহারের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকা। আমি চাই নতুন উপাচার্য প্রযুক্তিনির্ভর ছাত্রকল্যাণমূলক কার্যক্রম, যেমন- আইসিটি সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরণের ওয়ার্কশপ ও ট্রেনিং প্রোগ্রাম আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়ার জন্য ক্যাম্পাসে যেসকল শিক্ষার্থী আইটি সেক্টরে দক্ষতা অর্জন করেছে, তাদের কাজ করার সুযোগ প্রদান, শিক্ষার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে গতানুগত নিয়মের বাইরে এনে ডিজিটাল ও আধুনিক পদ্ধতি বাস্তবায়নের মতো বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিবেন।
সাদিয়া হোসেন মিম সভাপতি, শেকৃবি কম্পিউটার ক্লাব।
বিশ্ববিদ্যালয়কে মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার দিক থেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। তিনি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার সুযোগ তৈরিতে উদ্যোগী হবেন। সেই সাথে আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত সাহিত্য চর্চার জন্য পর্যাপ্ত বই লাইব্রেরিতে প্রয়োজন। যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি সাহিত্য চর্চায়ও এগিয়ে থাকবে। আমি চাই নতুন উপাচার্য ছাত্রকল্যাণমূলক কার্যক্রম, যেমন: স্কলারশিপ, স্বাস্থ্যসেবা, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা এবং ক্যারিয়ার কাউন্সেলিংয়ের মতো বিষয়গুলোতেও গুরুত্ব দেবেন। সর্বোপরি আমি আশা করি নতুন ভিসি শিক্ষার মান উন্নত করবেন, সাহিত্যসমৃদ্ধ পরিবেশ গড়ে তুলবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পরিবেশকে আরো সমৃদ্ধ করবেন।
সিফাত হোসেন সভাপতি, শেকৃবি সাহিত্য সংসদ।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ