শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তবে সেই পরীক্ষা গ্রহণের দাবি ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ওই ডিসিপ্লিনের বাকি ৪ পরীক্ষার্থী এবং অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টার অনুরোধে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
এ সময় শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীরা ‘নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা চাই’, ‘মিথ্যা সব উক্তি, প্রশাসনের সহানুভূতি’, ‘প্রশাসন জবাব চাই’, ‘পরীক্ষার দিন পরীক্ষা স্থগিত মানি না!’, ‘শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ মানি না’, ‘উপস্থিতির সঠিক গণনা চাই’ ও ‘প্রমাণ বিহীন অভিযোগ মানি না’ লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়া পরীক্ষার্থী মাহরিন সাদিয়া ইরা বলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারি আমাদের চূড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগের দিন আমাদের জানানো হয় পরীক্ষা হবে না। পরে বিভাগের একাডেমিক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা হবে। আট ডিসকলেজিয়েট শিক্ষার্থীর আন্দোলনের কারণে দ্বিতীয়বারের মতো পরীক্ষা স্থগিত হয়। কিন্তু সেটি কোনো সংবাদপত্রে আসেনি। আজ পরীক্ষার দিন আমরা চার পরীক্ষার্থী জানতে পারি, আমাদের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তখন আমাদের চারজনের ভিতরের মানসিক অবস্থা কি, সেটা শিক্ষার্থীরাই জানে।’
আট ডিসকলেজিয়েট শিক্ষার্থীর করা অভিযোগগুলো মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, ‘আট শিক্ষার্থীকে বারবার বলার পরেও তারা শুরু থেকে ক্লাসে আসেনি। শিক্ষকরা নিয়মিতই ক্লাস নিয়েছেন। প্রতি মাসের শেষে শিক্ষার্থীদের থেকে স্বাক্ষরও নিয়েছেন। করোনার কারণে ইতিমধ্যে আমরা দুইবছর পিছিয়ে পড়েছি। তাদের সঙ্গে পুনরায় ক্লাস করতে গেলে আমাদের আরও ছয়মাস লাগবে। আট শিক্ষার্থী একেকজন একেকটা কোর্সে উপস্থিত নাই। এছাড়া আমাদের একেকটা কোর্স ব্যয়বহুল। এখন আর পরীক্ষা পেছানোর পরিস্থিতি নেই।’
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষক ঠিকই ক্লাস নিয়েছেন। আমাদের শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার প্রতিবাদে এখানে আপুদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছি।’
শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ একাডেমিক কমিটির ওপর নির্ভর করে। আমরা তাদেরকে বলেছি, প্রয়োজনে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেন।’
এ বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আছে। সেই সিদ্ধান্তই এখনো বহাল আছে।’
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার কারুশিল্প ডিসিপ্লিনের মোট ১২ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আট শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনির উদ্দিন আহম্মেদ ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ উপস্থিতি কম দেখিয়ে তাদের ডিসকলেজিয়েট করার অভিযোগ এনে অনশন কর্মসূচি পালন করেন। তাদের অভিযোগ, ডিসিপ্লিনে চারজন শিক্ষক থাকার পরও সহকারী অধ্যাপক মনির উদ্দিন আহম্মেদ ছয়টি ব্যবহারিক কোর্স নিয়ে থাকেন। সকাল ৯ টার মধ্যে ক্লাসে আসতে বললেও শিক্ষক নিজে ১২ টা থেকে দুপুর ১টার দিকে আসতেন। এরপর বিভাগের জুনিয়র শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের থেকে শুনে ওই শিক্ষক ক্লাসের উপস্থিতি দিতেন। ফলে নির্ধারিত সময়ে ও নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকলেও তারা ডিসকলেজিয়েট হয়েছেন।
তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে একাডেমিক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিতব্য মাস্টার্স চূড়ান্ত পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।’
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ