খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ছাত্র হলের পার্শ্ববর্তী হলরোডের হোটেলগুলোতে লাগামহীনভাবে খাবারের দাম বাড়িয়েছে হোটেল মালিকরা। সব ধরনের খাবারের দাম বাড়ানোর কারণে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
হল রোডটির নাম ইসলামনগর রোড হলেও শিক্ষার্থীদের কাছে এটি হলরোড নামেই অধিক পরিচিত। এটি শিক্ষার্থীদের অন্যতম আড্ডার স্থান। পাশাপাশি এখানকার দোকান ও হোটেলগুলো থেকে অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিয়মিত জিনিসপত্র ও খাবার সংগ্রহ করে থাকেন। এই হলরোডে খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান, ফটোকপির দোকান, স্টেশনারি ও সেলুনসহ প্রায় ৮০টিরও অধিক দোকান আছে। তার মধ্যে প্রায় ১০টির মতো ছোটবড় খাবারের হোটেল রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলরোডের এসব হোটেলগুলোতে লাগামহীনভাবে খাবারের দাম বাড়িয়েছে হোটেল মালিকরা। এ কারণে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, হলরোডের হোটেল মালিকরা বিভিন্ন সময় অযৌক্তিকভাবে খাবারের মূল্য বাড়িয়ে থাকে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অযুহাতে একবার দাম বৃদ্ধি হলে, তা আর কমানো হয় না। এতে সকল খাবারের দাম অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত খাবারের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে হলরোডের হোটেলগুলোতে আবাসিক হলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারিত দামের তালিকা টানিয়ে দেয়। কিন্তু হোটেল মালিকরা শিক্ষার্থীদের এ সিদ্ধান্ত নাকচ করে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সব হোটেল বন্ধ রেখেছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী সাকিব আহমেদ বলেন, আমাদের হলগুলো এবং ক্যাফেটেরিয়াতে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার না থাকায় হলরোডের দোকানগুলোর ওপর আমরা নির্ভরশীল। হলরোডের দোকান মালিকরা এই নির্ভরশীলতাকে পুঁজি করে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। তাদের খাবারের উচ্চমূল্য নিয়ে সুষ্ঠু সমাধানের জন্য আহ্বান জানাই। কিন্তু তারা সেই আহ্বানে কর্ণপাত না করে নিজেদের মতো ব্যবসা চালাতে থাকে। পরবর্তীতে হলের সাথে সমন্বয় করে আমরা একটি খাবারের মূল্য তালিকা দেই। কিন্তু তারা দোকান বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের খাবার সংকটে ফেলার পরিকল্পনা করেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী হলরোডের হোটেলগুলোতে প্রতি প্লেট ভাত ১৫ টাকা, সব ধরনের মাছ ৫০-৭০ টাকা, মুরগী ৫০-১০০ টাকা, মাংস ১২০ টাকা (এক পিস), পরোটা ১০ টাকা ও সবজি ১৫ টাকা। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর খাবারের দামের চেয়ে তুলনামূলক অনেক বেশি।
বাংলা ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আসিফ শাহরিয়ার সবুজ বলেন, তাদের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা আছে, এমনটা ভেবে তারা শিক্ষার্থীদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। এই নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য আবাসিক হলগুলোতে খাবারের পরিমাণ বাড়ানো দরকার। এছাড়াও প্রশাসন যদি হলগুলোতে নিয়মিত তদারকি করে, তাহলে খাবার নিয়ে কোনো সমস্যা থাকবে না।
এদিকে ভাই ভাই রেস্তোরাঁর মালিক গাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীরা যে খাবারের মূল্য তালিকা দিয়েছে, সে অনুযায়ী বিক্রি করলে আমাদের পোষাবে না। তাই আমরা দোকানগুলো বন্ধ করে রেখেছি। খাবারের মূল্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে যাতে কোন ঝামেলা না হয়, এ কারণে আমরা আজ দোকান বন্ধ রেখেছি।
অনির্দিষ্টকালের জন্য দোকান বন্ধ রাখবে কি-না জানতে চাইলে মাহমুদুল হাসান বলেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী এবং আমরা একসাথে বসে আলোচনা করে সমঝোতার মাধ্যমে দোকান খুলবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রকিবুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টা আমরা জেনেছি। যৌক্তিক দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে আছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ক্যান্টিন, ডাইনিং ও ক্যাফেটেরিয়াতে খাবার সরবরাহ করার যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়ে রকিবুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, তারা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নিয়মিত খাবার খায়। এর মাধ্যমে খাবার খরচও কমবে এবং হলের ডাইনিংগুলোতে খাবারের মানও বৃদ্ধি পাবে।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ