ঢাকা, রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

বাড়ছে ডলার মজুত

প্রকাশনার সময়: ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৪, ০৭:৫৬

ডলার সংকটের ফলে দেশের অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। তবে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকে ডলার মজুত বাড়ছে। প্রতিদিন ব্যাংকে গড়ে প্রায় পাঁচ লাখ ডলার জমা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্থিতিশীল হয়ে আছে ডলার বাজার। সামনে ঈদ। এই ঈদে ডলার আরও বাড়বে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

তারা বলছেন, চলমান রমজান মাস ও আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে পরিবার-পরিজনের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। তাতে বাজারে ডলারের সরবরাহ আরও বেড়ে যাবে। এর ফলে ঈদ ঘিরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে চাপ কিছুটা সহনীয় থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও কয়েক মাস ধরে বাড়ছে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ।

শুধু তাই নয়, আমদানি ব্যয়ও বাড়তে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১ দশমিক ৫২ শতাংশ।

এদিকে ১২১ থেকে ১২২ টাকায় রেমিট্যান্স কিনছে ব্যাংকগুলো। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করছে ১২২ থেকে ১২৪ টাকায়। অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, আন্তব্যাংকে ডলার কেনার নির্ধারিত দর ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা, বিক্রি ১১০ টাকা নির্ধারিত আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ঘরে রাখা ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ ডলারের মজুত রয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ। যা এক মাস আগে ছিল ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অবশ্য ডলার সংকটের আগে ব্যাংকগুলোতে গড়ে নগদ ৫ কোটি ডলার মজুত থাকত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ডলার-টাকা অদলবদল চালু হওয়ার পর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন কিছুটা কমে যায়। নতুন এ ব্যবস্থার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ডলার ও টাকার অদলবদল করতে পারছে। এই পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা করেছে।

আকুর বিল পরিশোধের পর গত ১১ মার্চ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল এক হাজার ৯৯৮ কোটি ডলার। তবে এই অদলবদলকে রিজার্ভের অংশ মানতে নারাজ অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, এই অদলবদল বা সোয়াপের মাধ্যমে প্রাপ্ত ডলারকে রিজার্ভের অংশ মনে করা যুক্তিযুক্ত নয়। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষণকালীন সঞ্চিতি মাত্র।

তাদের দাবি, ‘ব্যাংকগুলো আপাতত কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলার গচ্ছিত রেখে টাকা নিয়ে বাজারের তারল্য চাহিদা মেটাচ্ছে। এটি ক্যাশ ফ্লো বা নগদ প্রবাহ ব্যবস্থাপনায় একটু আরাম বা বাড়তি পরিসর মাত্র। এটি রিজার্ভ বাড়ানোর যোগ্য হাতিয়ার নয়। নির্বাচনের পর বিনিয়োগকারীরা নতুন করে টাকা চাইছে। সামনে ঈদের কেনাকাটা, এ কারণেও টাকার চাহিদা বাড়ছে। এই সোয়াপ শুধুই অভ্যন্তরীণভাবে ডলারের হাতবদল মাত্র।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গত ১১ মার্চ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এক অনুষ্ঠানে ডলার নিয়ে বলেন, ‘দেশের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বেড়েছে। চলতি হিসাবের উন্নতি হয়েছে।’

কিন্তু রিজার্ভে তেমন একটা উন্নতি হয়নি। মূলত ব্যবসার আড়ালে লেনদেনকালে ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং হয়। তবে পণ্যমূল্য যাচাই ও মনিটরিংয়ের ফলে এই পদ্ধতিতে মানি লন্ডারিং প্রায় ৯০ শতাংশ বন্ধ হয়েছে। বাকি ১০ শতাংশ হয়তো বা বন্ধ করা সম্ভব না। অপরদিকে হুন্ডির কারণে রেমিট্যান্স পুরোপুরি দেশে আসছে না। পাশাপাশি রপ্তানিকারকরা সময়মতো রপ্তানি আয় ফিরে আনছেন না। জানা গেছে, বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা বিদেশে বাকিতে পণ্য বিক্রয় করায় বড় অঙ্কের রপ্তানি আয় দেশে আসছে না। দেশে না আসা রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ১১ মার্চ পর্যন্ত ছিল ১১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি পদ্ধতিগত ত্রুটি, হিসাবের গরমিল এবং বৈদেশিক ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিসংক্রান্ত জটিলতায় দেশে আনা সম্ভব হচ্ছে না আরও প্রায় ২ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে বিদেশে পড়ে রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। এদিকে দেশের খোলাবাজারে প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রা ডলারের দাম কমেছে। প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২১ টাকা ৩০ পয়সায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে ডলারপ্রতি দর ছিল ১২১ টাকা ৪০ পয়সা। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কার্ব মার্কেটে মার্কিন মুদ্রাটির মূল্য হ্রাস পেয়েছে ১০ পয়সা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে ২১৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি। ঈদ আসতে এখনো বেশ বাকি। এর আগেই রেমিট্যান্সের এ প্রবৃদ্ধির ধারা সামনে আরও বেগবান হবে বলেই মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অপরদিকে, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অপর বড় খাত রপ্তানি আয়। এটিও ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড রপ্তানি আয় হয়েছে।

ফেব্রুয়ারি মাসে মোট রপ্তানি হয়েছে ৫১৮ কোটি ডলারের পণ্য। আগের বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৪৬৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ০৪ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৪৪৯ কোটি ডলার। আগের বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমদানি হয়েছিল ৪৪২ কোটি ডলার। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছে ২১০ কোটি ডলার।

সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে প্রবাসীরা ১ হাজার ৫০৭ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৪১২ কোটি ডলার। এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এর আগের অর্থবছরের তুলনায় এর পরিমাণ চারগুণ বেড়েছে। নতুন এই ঋণ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছয় বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এছাড়া জাপান ২ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার ও বিশ্বব্যাংক এক দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার এবং বাকি এক দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে অন্যান্য ঋণদাতার কাছ থেকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ধারণা, চলতি অর্থবছরে এই ঋণের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে এবং সেই অর্থ দ্রুত ব্যবহারের মাধ্যমে এর সুফল অর্থনীতিতে আসবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যবহূত বিদেশি তহবিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭ বিলিয়ন ডলারে। গত বছরের জুন পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ৪৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। প্রসঙ্গত, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ কেবল এক দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ